অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়া এবার এভারেস্ট জয় করতে চান পিয়ালি
২৩ অক্টোবর ২০২১হুগলির চন্দননগরের স্টেশন থেকে হাঁটাপথ কাঁটাপুকুর৷ সেখানকার বসাক বাড়ির একটি ঘরে শোভা পাচ্ছে পর্বতের বিভিন্ন ছবি আর পুরস্কার৷ ২০১৯ সালে এই বাড়ি থেকেই পিয়ালি বসাক পৌঁছান মাউন্ট এভারেস্টের খুব কাছে৷ অর্থের অভাবে সেবার তার সাফল্য আসেনি৷ তবে বিস্তর বাধা ডিঙ্গিয়ে এবার তিনি পৌঁছে যান বিশ্বের সপ্তম উচ্চতম পর্বত ধৌলাগিরিতে৷ ১ অক্টোবর তিনি আট হাজার ১৬৭ মিটার উঁচু এই শৃঙ্গ জয় করেন৷ অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়া এই পর্বত পাড়ি দেয়ার কৃতিত্ব পৃথিবীর খুব বেশি মানুষের নেই৷ এমনকি ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের এভারেস্ট জয়ী রাজীব ভট্টাচার্যের মৃত্যু হয় ধৌলাগিরি জয় করতে গিয়ে৷ অত উচ্চতায় পৌঁছে গেলে মানব শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি থেকে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়৷ সেই বাধা পেরিয়ে পিয়ালির এই জয় পশ্চিমবঙ্গ তথা দেশের মুকুটে এক উজ্জ্বল পালক যোগ করেছে৷ এর আগে ২০১৮ সালে ভারতের প্রথম বেসামরিক নারী হিসেবে পৃথিবীর অষ্টম উচ্চতম শৃঙ্গ মানাসুলু জয় করেছেন পিয়ালি৷
পর্বতারোহণে ছোটবেলা থেকেই পরিবারের কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে আসছেন তিনি৷ কিন্তু বাবা শয্যাশায়ী হওয়ায় আর্থিক প্রতিকূলতা এখন তাদের রোজকার সঙ্গী৷ ক্রাউড ফান্ডিং ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ২০১৯ সালে এভারেস্ট জয় করার পথে হাঁটেন পিয়ালি৷ কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় শেরপা সেবার তাকে সহযোগিতা করেননি বলে জানান তিনি৷ এভারেস্টের চূড়ার ৪০০ মিটার নীচ থেকেই তাই ফিরতে হয় তাকে৷ ধৌলাগিরি জয়ের পর এই তরুণী আবার এভারেস্টের পথে হাঁটতে চান৷ ‘‘৮ হাজার মিটারের উপর তিনটি শৃঙ্গ জয় করার অভিজ্ঞতা আমার আছে৷ তাই বিনা অক্সিজেনে মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার আশা রাখছি,’’ বলেন পিয়ালি৷
বাস্তবিকই সেটা কি সম্ভব? এভারেস্ট জয়ী পর্বতারোহী বসন্ত সিংহ রায় বলেন, ‘‘৮ হাজারের বেশি উচ্চতায় ডেথ জোন তৈরি হয়৷ তবে বিনা অক্সিজেনে ১৯৭৮ সালে এভারেস্ট জয় হয়েছিল৷ তার মানে মানুষ যে বিনা অক্সিজেনে এভারেস্ট জয় করতে পারে, এটা প্রমাণিত৷ কিন্তু ভারতীয়দের তেমন অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ ছিল না এতদিন৷ এটা খুব কষ্টকর ব্যাপার৷ কিন্তু অসম্ভব নয়৷’’
অধরা এভারেস্টকে জয় করার অদম্য ইচ্ছা একদিকে, অন্যদিকে আর্থিক প্রতিকূলতা৷ এ দুয়ের মধ্যে দোদুল্যমান এই পর্বতারোহীর ভবিষ্যত্৷ বসাক পরিবারে বড় মেয়ে পিয়ালিই রোজগারের প্রধান অবলম্বন৷ চন্দননগরের কানাইলাল বিদ্যালয়ের এই শিক্ষিকা বলেন, ‘‘আর্থিক বাধাই সবচেয়ে বড়৷ এতদিন পর্যন্ত কোনো সাহায্য পাইনি৷ পুরোটাই ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে এগোতে হয়েছে৷ ব্যাংকে ৩০ লক্ষ টাকার বেশি লোন হয়ে গিয়েছে৷ আর লোন পাব না৷ এগোনোর রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ৷ বিনা অক্সিজেনে এভারেস্ট জয়ের জন্যেও যে প্রশিক্ষণ দরকার, সেটাও নেওয়ার সামর্থ্য নেই৷’’
সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় পিয়ালি পর্বতে চড়ার প্রশিক্ষণ নিতে যান৷ একদিকে সংসারের প্রতিকূলতা আর অন্যদিকে অভাব৷ এর মধ্যেই ভারসাম্য রেখে চলছিল বসাক পরিবার৷ পিয়ালির মা স্বপ্না বসাক বলেন, ‘‘আর্থিকভাবে দুর্বল থাকায় আমরা মেয়ের সুষম আহারের দিকেও নজর দিতে পারি না৷ উচ্চতার তুলনায় ১৩ কেজি কম ওজন মেয়ের৷ এভারেস্ট অভিযানের খরচ যেমন বেশি, তেমনই লাগে প্রশিক্ষণ৷ এসব কোথা থেকে আসবে?
অসম্ভবকে জয় করার জেদ নিয়ে পিয়ালি পারবেন কি আর্থিক প্রতিকূলতা জয় করতে? উজ্জ্বল চোখে এই তরুণী বলেন, ‘‘আমার বিশ্বাস আছে, আমি এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারব৷ সরকার বা কোনো সহৃদয় ব্যক্তি যদি আমার সাহায্যে এগিয়ে আসেন, তাহলে আমি দেশের ও রাজ্যের মান আরো বাড়াতে পারব৷’’