কলকাতায় হেলে পড়লো চারতলা ফ্ল্যাটবাড়ি
কলকাতার বাঘাযতীনে হেলে পড়লো চারতলা ফ্ল্যাটবাড়ি। অভিযোগ, বেআইনিভাবে বাড়িটি বানানো হয়েছিল।
যেভাবে হেলে পড়লো চারতলা বাড়ি
বয়স মাত্র ১১ বছর। তাতেই হেলে পড়লো আস্ত এক ফ্ল্যাটবাড়ি। দক্ষিণ কলকাতার বাঘাযতীনের বিদ্যাসাগর কলোনির ফ্ল্যাটবাড়িটি মঙ্গলবার দুপুর দুইটা নাগাদ প্রচণ্ড শব্দ করে হেলে পড়ে।
এড়ানো গিয়েছে বড় দুর্ঘটনা
পুলিশ সূত্রে খবর, ভেঙে পড়ার সময় ওই ফ্ল্যাটবাড়িতে কোনো বাসিন্দা ছিলেন না। তাই বড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ভেঙে যাওয়া ফ্ল্যাটবাড়িতে কেউ আটকে নেই। আসলে মাসখানেক আগে বাড়িটি একটু হেলে যায়, তখন বাসিন্দাদের সরিয়ে মেরামতের কাজ শুরু হয়।
প্রোমোটার বেপাত্তা
বাড়িটি হেলে যাওয়ায় গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু করে প্রোমোটার। বাড়ি হেলে যাওয়ার খবর শুনে দৌড়ে আসেন ফ্ল্যাটের আবাসিকেরা। তারা জানান, প্রোমোটার দায়িত্ব নিয়ে হেলে পড়া বাড়িটি সোজা করার জন্য দায়িত্ব দেয় হরিয়ানার এক সংস্থাকে। প্রোমোটার তাদের বলেছিলেন, মাস দুয়েকের মধ্যেই মেরামতির কাজ হয়ে গেলে তারা ফ্ল্যাটে ফিরতে পারবেন। আবাসিকেরা জানান, এখন প্রোমোটারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, মোবাইল বন্ধ।
বিনা অনুমতিতেই কি চারতলা?
ফ্ল্যাটবাড়িটি কলকাতা পুরসভার ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিদ্যাসাগর কলোনিতে অবস্থিত। স্থানীয়দের দাবি, ফ্ল্যাটটি নিয়ম মেনে তৈরি করা হয়নি। ওই অঞ্চলে তিনতলা ফ্ল্যাট বানানোর অনুমতি দেয় পুরসভা। অভিযোগ, সেই নিয়ম ভেঙে চারতলা ফ্ল্যাট তৈরি করা হয়েছিল।
কারণ কী?
কী কারণে ওই ফ্ল্যাটবাড়িটি হেলে পড়ল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ঘটনাস্থলে গিয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা দল এবং পুরসভার আবাসন বিভাগের আধিকারিকেরা। পৌঁছেছেন যাদবপুরের বিধায়ক দেবব্রত মজুমদার এবং স্থানীয় কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ সদস্য মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
কাউন্সিলার জানেন না
স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, জলা জমি বুজিয়ে বাড়ি তৈরি হয়েছিল। এই ব্যাপারে ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার মিতালি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “চল্লিশ পঞ্চাশ বছর আগে তো এখানে সবই জলা ছিল। এতদিন আগে কী হয়েছে তা বলতে পারব না।” মিতালিই জানালেন তিনি এই অঞ্চলে তিনতলার বেশি উচ্চতার বাড়ি তৈরি করার অনুমতি দেন না, তবুও বাড়িটি কেন চারতলা সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই বাড়িটি যখন পুরসভার অনুমতি পেয়েছিল তখন তিনি দায়িত্ব নেননি।”
বিধায়ক কী বললেন?
স্থানীয় বিধায়ক দেবব্রত মজুমদার জানান, এই ফ্ল্যাটবাড়িটি আগে থেকেই হেলে পড়া ছিল, তাই হরিয়ানার একটি সংস্থা বাড়িটির লিফটিংয়ের কাজ করছিল। মেরামতির কাজ চলার কারণে বাড়িতে কোনও আবাসিক ছিলেন না। তাই কেউ হতাহত হননি। তিনি জানিয়েছেন অনুমতি না নিয়ে মেরামতির কাজ কীভাবে চলছিল তা খতিয়ে দেখা উচিত এবং হরিয়ানার ওই সংস্থাকেও এই দুর্ঘটনার দায় নিতে হবে”।
আগেই ফাটল দেখা দেয়
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, বাড়িটিতে আগেই ফাটল দেখা দিয়েছিল। তখন পুর কর্তৃপক্ষের তরফে ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, তার পরে আবার ওই ফ্ল্যাটে গিয়ে বসবাস করতে থাকেন।
আতঙ্কিত এলাকাবাসী
আস্ত ফ্ল্যাটবাড়ি হেলে পড়ায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আশপাশের এলাকা থেকে বহু মানুষ জড়ো হন। পুলিশ গার্ডরেল করে গোটা এলাকা ঘিরে দেয়।
পুরোপুরি ভেঙে ফেলা শুরু
মঙ্গলবার বিকেলের পর পুরোপুরি ভেঙে ফেলার কাজ শুরু হয় চারতলা ফ্ল্যাটবাড়িটির। চারতলার উপরের ফ্ল্যাটের জানলার কাচ ভেঙে ভিতরে ঢোকেন ভাঙার কাজে নিযুক্ত কর্মীরা। ঘটনাস্থলে রয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, পুরসভা, পুলিশ এবং দমকল আধিকারিকেরা। ভাঙার কাজ এখনও চলছে।
গার্ডেনরিচের স্মৃতি
বছর ঘুরতে না ঘুরতেই শহরে আরও একটি বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটলো। ২০২৪ সালের ১৭ মার্চ মাঝরাতে গার্ডেনরিচে বেআইনি নির্মীয়মাণ বাড়ি ভেঙে পড়ে। সেই ঘটনায় মারা গিয়েছিলেন ১৩ জন মানুষ। তদন্তে উঠে আসে, বাড়িটি সম্পূর্ণ বেআইনি ভাবে নির্মাণ করা হচ্ছিল। বাঘাযতীনের ক্ষেত্রেও একই অভিয়োগ রয়েছে। প্রশ্ন হলো, সব বেআইনি কাঠামো পুলিশ ও প্রশাসনের দৃষ্টির অগোচরে হচ্ছে কী করে?