খাদ্য সমস্যা মোকাবিলায় অবদান রাখতে পারে মাইক্রোগ্রিন্স
৫ এপ্রিল ২০২৩৫৬ বছর বয়সি বিদ্যাধরন চেন্নাইয়ে এক আবাসিক এলাকায় বাস করেন৷ জীবনের বেশিরভাগ সময় শিক্ষা খাতের এনজিও-র জন্য কাজ করলেও তিনি আসলে চাষি হতে চেয়েছিলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘কৃষি আমার আবেগের জায়গা৷ একসময়ে আমার একটা খামার ছিল, তবে সেটা লোকসানে চলতো৷''
মোটা অংকের বিনিয়োগ ও চেন্নাইয়ের বাইরে খামার চালানোর খরচের কারণে তাঁকে চাষের কাজ ছেড়ে দিতে হয়৷ তা সত্ত্বেও নিজের স্বপ্ন ত্যাগ করতে প্রস্তুত ছিলেন না তিনি৷ বিকল্প কৃষিপদ্ধতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গিয়ে তিনি মাইক্রোগ্রিন্স সম্পর্কে জানতে পারেন৷
মাইক্রোগ্রিন্স আসলে কচি ও ভোজ্য চারাগাছ, যেগুলি অঙ্কুরের এক মাসের মধ্যেই বেড়ে ওঠে ও ফসল তোলার যোগ্য হয়ে ওঠে৷ পুষ্টিতে ভরপুর এমন উদ্ভিদকে সুস্বাদু ‘সুপারফুড' হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে৷ ছোট, সীমাবদ্ধ পরিবেশেও সহজে এমন উদ্ভিদ চাষ করা সম্ভব৷
মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা মহাকাশ অভিযানে মাইক্রোগ্রিন চাষ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়ে আসছে৷ দীর্ঘ অভিযানের সময় মহাকাশচারীদের জন্য যথেষ্ট পুষ্টি নিশ্চিত করাই সেই উদ্যোগের উদ্দেশ্য৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ একাধিক দেশে বেশ কয়েক দশক ধরে সালাদের টপিং হিসেবে মাইক্রোগ্রিন্স জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ ভারতের শহরাঞ্চলের রেস্তোরাঁর খাদ্য তালিকায়ও এর প্রচলন বাড়ছে৷ বিদ্যাধরন বলেন, ‘‘আমাদের কাছে লাল, সাদা ও গোলাপি মুলোর বৈচিত্র্য রয়েছে৷ সূর্যমুখী ফুল, মটরের অঙ্কুর, ব্রকোলি, বাঁধাকপি, লাল অ্যামরান্থাসও আছে৷ আমরা এমন ১২ ধরনের মাইক্রোগ্রিন্স চাষ করি৷''
নিজের গ্রিনহাউস ও বাসার বারান্দায় সে সব চাষ হয়৷ জায়গাটি সব মিলিয়ে দশ বর্গ মিটারের বেশি নয়৷ স্ত্রী ও কন্যাও তাঁকে সাহায্য করেন৷ বীজ বপন থেকে শুরু করে বিতরণ পর্যন্ত সব কাজ পরিবারই সামলায়৷ বিদ্যাধরন বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে সুবিধা হলো, ছোট জায়গায় বিশাল পরিমাণ উৎপাদন সম্ভব৷ প্রাথমিক বিনিয়োগ এক লাখ ভারতীয় টাকারও কম৷ মুনাফা ভালোই হয়৷ মাসে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় হয়৷''
ভারতের কৃষিক্ষেত্র চাপের মুখে রয়েছে৷ ফলন কমছে, পানিসম্পদ লোপ পাচ্ছে এবং পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে৷ অতীতে চাষের উদ্যোগের সময় বিদ্যাধরনেরও হাতেনাতে এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে৷
অন্যদিকে মাইক্রোগ্রিন্সের চাষ একই সঙ্গে সহজ ও টেকসই৷ সবার আগে ভার্মিকম্পোস্ট দিয়ে ট্রে ভরিয়ে দিতে হবে৷ তারপর ঘন ও সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করতে হবে৷ তার উপর সামান্য পানি স্প্রে করে অঙ্কুর প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে৷
কয়েক দিনের জন্য ট্রেগুলি অন্ধকারে রেখে দিতে হয়৷ তৃতীয় দিনের পর থেকে সেগুলিকে সূর্যের আলো দেওয়া হয়৷ বিদ্যাধরন বলেন, ‘‘সাত থেকে আট দিনের মধ্যে সেগুলি নির্দিষ্ট উচ্চতা ছোঁবে৷ তারপর অর্ডারের উপর নির্ভর করে আমরা ফসল তুলবো৷''
ভারতের রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশে প্রায় সব জায়গায় মাইক্রোগ্রিন্স গজানো সম্ভব বলে সেগুলি একইসঙ্গে চাষিদের আয় বাড়াতে এবং বেড়ে চলা জনসংখ্যার পুষ্টির প্রয়োজন মেটাতে সহায়ক হতে পারে৷ বিদ্যাধরন তাঁর তাজা ফলন দামী রেস্তোরাঁ ও অন্য কিছু ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেন৷
চাহিদা বেড়েই চলেছে৷ ফলে শুধু চেন্নাই নয়, গোটা দেশে ব্যবসার নতুন সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে৷
নারায়ণন/দেশাই/এসবি