গাজায় যুদ্ধবিরতি: মুক্ত তিন ইসরায়েলি নারী ও ৯০ ফিলিস্তিনি
২০ জানুয়ারি ২০২৫ইসরায়েলের সেনা জানিয়েছে, তিন নারী বন্দিকে তেল আভিভের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা পরিবারের সঙ্গে মিলিত হন।
ইসরায়েলের সেনার তরফে জানানো হয়েছে, তিন নারী বন্দিকে মুক্তি দিয়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে নিয়ে আসার পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী ও ইসরায়েলের সুরক্ষা সংস্থার প্রতিনিধিরা তাদের সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। প্রথমেই তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়।
মায়ের সঙ্গে দেখা হলো
রোববার মুক্তি পাওয়ার পর তেল আভিভের হাসপাতালে মায়ের সঙ্গে সময় কাটালেন ২৮ বছর বয়সি এমিলি ডামারি। তার মা ম্যান্ডি ডামারি জানালেন, ''৪৭১ দিন পরে অবশেষে এমিলি ঘরে ফিরেছে। আরো অনেক পরিবার এখনো তাদের প্রিয়জনদের ঘরে ফেরার অপেক্ষায় দিন কাটাচ্ছেন ।''
বন্দি ও নিখোঁজ পরিবারের ফোরামের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ''এই যে তিনজন ঘরে ফিরলেন, এটা অন্ধকারে আলোর রেখার মতো ঘটনা। এই ঘটনা আশা জাগাচ্ছে।''
তেল আভিভে বড় স্ক্রিনে হাজার হাজার ইসরায়েলি এই ঘরে ফেরার দৃশ্য লাইভ দেখেন। অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অনেকে আনন্দে চিৎকার করেন।
ফিলিস্তিনিরা আশাবাদী
হামাস তিনজন ইসরায়েলি নারী বন্দিকে মুক্তি দেয়ার পর ইসরায়েল ৯০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেয়।
যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইসরায়েল-সহ অনেক দেশ হামাসকে সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে।
যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর গাজার মানুষও সানন্দে তাকে স্বাগত জানিয়েছেন। ডিডাব্লিউকে তারা জানিয়েছেন, তাদের আশা, এই যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হবে।
রাফা থেকে ৪৩ বছর বয়সি আল নাসের বলেছেন, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ায় তিনি আনন্দিত। কারণ, এর ফলে রক্তপাত থামবে। বাচ্চাদের জীবন বাঁচবে।
তিনি জানিয়েছেন, ''রাফায় ফিরে আমি বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। যে জায়গায় আমি থাকতাম, সেই জায়গাটা দেখে মনে হয়েছে, যেন ভয়ংকর ভূমিকম্প সব গুঁড়িয়ে দিয়েছে। শিউরে ওঠার মতো দৃশ্য।''
নাসের জানিয়েছেন, ''সব ফিলিস্তিনি আশা করে, শান্তি ও নিরাপত্তা আসবে। আমরা অর্থ চাই না। আমরা গাজায় শান্তিতে থাকতে চাই।''
২১ বছর বয়সি মালাক হুসেন মধ্য গাজায় একটি ত্রাণশিবিরে থাকেন। তিনি বলেছেন, ''আমার একটাই কামনা, গাজা যেন আগের মতো হয়ে যায়। আমরা আবার সবকিছু গড়ে তুলতে পারব।''
তিনি জানিয়েছেন, ''আর যেন যুদ্ধের মধ্যে পড়তে না হয়। শান্তি যেন বজায় থাকে। আমার একটাই প্রার্থনা যুদ্ধ যেন আর কখনো ফিরে না আসে।''
বাইডেন খুশি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে তার কাজের শেষদিনে কার্যকর হওয়া এই যুদ্ধবিরতিকে স্বাগত জানিয়েছেন জো বাইডেন।
তিনি বলেছেন, ''প্রচুর রক্তপাত, মৃত্যুর পর গাজা যুদ্ধের আওয়াজ বন্ধ হলো।''
এই যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে বাইডেন বলেছেন, ''অন্যতম কঠিন আলোচনার মধ্যে দিয়ে এই যুদ্ধবিরতি হয়েছে। মতৈক্যে পৌঁছানোর রাস্তা সহজ ছিল না। কিন্তু ইসরায়েল হামাসের উপর ভয়ংকর চাপ সৃষ্টি করেছিল। জাতিসংঘও চুক্তিকে সমর্থন করেছিল।''
শলৎস যা বললেন
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস বলেছেন, ''গাজায় এখন বন্দুকের শব্দ থেমেছে। ইসরায়েলি বন্দিরা অবশেষে মুক্তি পাচ্ছেন। গাজায় যুদ্ধবিরতি হলো ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তিতে থাকার সময়।''
শলৎস বলেছেন, ''আমরা এই সুযোগটা গ্রহণ করি এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র যাতে ইসরায়েলের সঙ্গে থাকতে পারে তার জন্য সচেষ্ট হই।''
শলৎস জানিয়েছেন, গাজায় যুদ্ধের সময় বেসামরিক মানুষ যে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছিলেন, তার জন্য তিনি উদ্বিগ্ন।
জিএইচ/এসজি(এপি, এএফপি, রয়টার্স)