চট্টগ্রামের অসামান্য সুন্দর জলপ্রপাত
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ঝরনাগুলোর মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রামের ‘খৈয়াছড়া’ আর ‘সহস্রধারা’৷ আরো কিছু ছোট ছোট পাহাড়ি ঝরনাও আছে এ এলাকায়৷ ঢাকা থেকে রাতের বাসে গিয়ে সারা দিন এ জলপ্রপাতগুলো ঘুরে দেখে আবার রাতের বাসেই ফিরে আসা যায়৷
ধাপে ধাপে
পাহাড়ের গায়ে গায়ে চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগের বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান৷ উদ্যানের কাছের পাহাড় থেকে নেমে আসা অনিন্দ্য সুন্দর এই জলপ্রপাতের নাম খৈয়াছড়া৷ একে একে নয়টি বড় ধাপে এ জলপ্রপাতটি থেকে অনবরত জলের ধারা নেমে আসে৷ এছাড়া ছোট আরো অনেকগুলো ধাপ আছে এ জলপ্রপাতে৷ সারা বছর এগুলোতে পানির প্রবাহ কম থাকলেও বর্ষা ও বর্ষা পরবর্তী সময়ে প্রবাহ খুব বেশি থাকে৷
সরু পিচঢালা পথ
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই ছাড়িয়ে আরো কিছুটা সামনে গেলে বড় তাকিয়া বাজার৷ এর আগেই হাতের বাঁয়ে সহজেই চোখে পড়বে খৈয়াছড়া জলপ্রপাতের সাইনবোর্ড৷ এখান থেকে সরু পিচঢালা পথটি চলে গেছে ভেতরের দিকে৷ এক কিলোমিটার সামনে গেলেই চোখে পড়বে ঢাকা-চট্টগ্রামের রেল লাইন৷ সেখান থেকে মেঠো পথ ধরে সামান্য পথ হাঁটার পরে একটি ঝিরিপথ৷
আরো খানিকটা নীচে
খাড়া পাহাড়ের গা বেয়ে ওঠার পরে আবারো বেশ কিছুটা নীচে নামার পরে খৈয়াছড়ার দ্বিতীয় ধাপ৷ এ ধাপটি প্রথম ধাপ থেকে একেবারেই আলাদা৷ সরু জায়গা থেকে প্রবাহিত ঝর্ণাধারা একটু নীচে এসেই প্রসারিত হয়ে গেছে এখানে৷
ওঠা কঠিন নয়
দ্বিতীয় ধাপ থেকে তৃতীয় ধাপটি আরো বেশি স্বতন্ত্র৷ এ জায়গা থেকে তিনটি ধাপের প্রবাহ ভালোভাবে দেখা যায়৷ এ জায়গাটি গোসল করার জন্যও বেশ ভালো৷ অনেকটা বড়সড় পুকুরের মতো জলাধার আছে এখানে৷ এখান থেকে একেবারে ঝরনার পাশ থেকে খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠতে হবে চতুর্থ ধাপে৷ তবে এ ধাপ থেকে পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম ধাপের উচ্চতা তুলনামূলকভাবে কম৷ ওঠাও বেশ সহজ৷
অন্যরকম
খৈয়াছড়ার অষ্টম ধাপটি একটু উঁচুতে৷ তবে এ ধাপটি বেশ প্রসারিত৷ এখানে বেশ উঁচু থেকে পাহাড়ের নিঃশব্দতাকে ছাপিয়ে নিচে অনবরত পড়ে হিম শীতল পানি৷
এখানে ওঠা কিন্তু কষ্টসাধ্য
খৈয়াছড়ার সবশেষ ধাপটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট উপরে৷ এখানেও ঝরনাধারা পতনস্থলে মাঝারি আকারের একটি জলাশয় আছে৷ খৈয়াছড়ার সর্বশেষ এ ধাপটিতে ওঠা বেশ কষ্টসাধ্য৷
নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ
খৈয়াছড়া জলপ্রপাতে পর্যটকদের ফেলে যাওয়া প্লাস্টিকের বোতল৷ রক্ষণাবেক্ষণ ও যত্নের মারাত্মক আভাব এবং পর্যটকদের দায়িত্বহীন কার্যকলাপের কারণে সুন্দর এ পর্যটন কেন্দ্রটির পরিবেশ দিনদিন নষ্ট হচ্ছে৷
সুন্দর দীর্ঘ পথ
মিরসরাইয়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কের নয়দুয়ারীর হাট এলাকায় তিন-চার কিলোমিটারের মধ্যে তিনটি অসাধারণ ঝরনা কুপিকাটাখুম, মিঠা ছড়া এবং বান্দরখুম৷ এই ঝরণাগুলোতে যাবার সুন্দর দীর্ঘ ঝিরিপথটি নাপিত্তাছড়া নামে পরিচিত৷
ঝরে পড়ছে অবিরাম
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে সীতাকুণ্ড ইকোপার্কের ভেতরে দুটি সুন্দর ঝরনা ‘সুপ্তধারা’ আর ‘সহস্রধারা’৷ সুপ্তধারা ঝরনাটি স্থানীয়ভাবে ‘ছোট ঝরনা’ নামে পরিচিত৷ কিন্ত এটি মূলত ছোট কোনো ঝরনাই নয়৷ এখানে উঁচু পাহাড়ের উপর থেকে অনবরত তিনটি ধারা বহমান৷ তবে টানা কয়েকদিন বৃষ্টি না হলে তিনটি ধারার একটিতে পানি কমে যায়৷
সহস্রধারা
সীতাকুণ্ড ইকো পার্কের ভেতরে পাহাড়ের উপরে উঠে আবার নীচে নেমে আসে সহস্রধারা ঝরনা৷ এটিরও নামের সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায় না৷ স্থানীয়দের কাছে এটির নাম ‘বড় ঝরনা’৷ একটি মাত্র ধারা পাহাড়ের গা বেয়ে প্রবাহমান এখানে৷ এ ঝরনায় যেতেও ইকোপার্ক থেকে পাহাড়ের নীচে নামতে হয়৷