জাতিসংঘের কিছু স্মরণীয় ঘটনা
প্রতিবছর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিশ্বের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দিয়ে থাকেন৷ এর মধ্যে কয়েকজন নেতার দেয়া বক্তব্য এখনো আলোচনায় উঠে আসে৷
হাসির পাত্র ট্রাম্প
জাতিসংঘের চলতি অধিবেশনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য শুনে হেসে উঠেছিলেন বিশ্বনেতারা৷ ফলে কয়েক মুহূর্তের জন্য অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলেন ট্রাম্প৷ তিনি বলেছিলেন, ‘‘দুই বছরেরও কম সময়ের মধ্যে আমার প্রশাসন যা অর্জন করেছে, তা আমাদের দেশের ইতিহাসে যে কোনো প্রশাসনের চেয়ে বেশি৷’’ এই কথার পর বিশ্বনেতারা হেসে উঠলে ট্রাম্প একটু থেমে নিজেও অপ্রস্তুতের হাসি হেসে বলে ওঠেন, ‘‘এরকম প্রতিক্রিয়া আশা করিনি৷ তবে ঠিক আছে৷’’
ক্রুশ্চেভের জুতা
১৯৬০ সালে জাতিসংঘে বৈঠকের সময় ফিলিপাইন্সের প্রতিনিধি দলের প্রধান মস্কোর বিরুদ্ধে পূর্ব ইউরোপীয়দের স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ করার অভিযোগ এনেছিলেন৷ এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তৎকালীন সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ তাঁর পায়ের একটি জুতা দিয়ে টেবিলে জোরে আঘাত করেছিলেন৷
আরাফাতের ইচ্ছাপ্রকাশ
১৯৭৪ সালে ‘প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন’ এর প্রতিনিধি হিসেবে ইয়াসির আরাফাতকে জাতিসংঘে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল৷ আরাফাত তখন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছেন৷ জাতিসংঘে তিনি বলেছিলেন, ‘‘আজ আমি শান্তির বার্তা ও মুক্তিযোদ্ধার অস্ত্র নিয়ে এসেছি৷ আপনারা সেই বার্তা হারিয়ে যেতে দেবেন না৷’’
কাস্ত্রোর দীর্ঘ বক্তব্য
কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো জাতিসংঘে অনেকবারই বক্তব্য দিয়েছেন৷ তবে ১৯৬০ সালে তাঁর বক্তব্যের সময় ছিল প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা৷ তিনি বলেছিলেন, ২০ মাস আগে তিনি যে বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেয়া শুরু করেছিলেন, সে কারণে তাঁর দেশ ‘যুক্তরাষ্ট্রের উপনিবেশ’ পরিচয় থেকে মুক্তি পেয়েছিল৷ দীর্ঘ ঐ বক্তব্যে তিনি তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডিকে ‘অশিক্ষিত ও অনভিজ্ঞ মিলিওনেয়ার’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন৷
গাদ্দাফির জাতিসংঘের সনদ ছেঁড়া
২০০৯ সালে লিবিয়ার তৎকালীন নেতা মোয়াম্মার গাদ্দাফি বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ থামাতে ব্যর্থ হওয়ায় জাতিসংঘের তীব্র সমালোচনা করেন৷ প্রায় এক ঘণ্টা ৪০ মিনিটের বক্তব্যে তিনি ইরাকে ‘গণহত্যা’র জন্য দায়ীদের শাস্তিও দাবি করেছিলেন৷ তালেবানদের একটি ইসলামি রাষ্ট্র গঠনের অধিকার আছে বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ বক্তব্যের এক পর্যায়ে গাদ্দাফি জাতিসংঘের সনদ ছিঁড়ে ফেলেন৷
বুশকে চাভেজের ‘শয়তান’ আখ্যা
ভেনেজুয়েলার সাবেক প্রেসিডেন্ট উগো চাভেজ ২০০৬ সালে জাতিসংঘে বক্তব্য দিতে গিয়ে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘গতকাল এখানে শয়তান এসেছিল৷ মঞ্চে এখনো সালফারের গন্ধ৷’’
আহমাদিনেজাদের বক্তব্যে ওয়াকআউট
২০১০ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ টুইন টাওয়ারে হামলা সাজানো ছিল কিনা, সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন৷ তাঁর যুক্তি ছিল, বিমানের কারণে পুরো ভবন ধসে পড়া সম্ভব নয়৷ একমাত্র ভবনের ভেতরে কোনো বিস্ফোরণ হলে সেটা সম্ভব, বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ আহমাদিনেজাদের এই বক্তব্য শুনে জাতিসংঘে উপস্থিত অনেকে ওয়াকআউট করে বেরিয়ে গিয়েছিলেন৷
ইরান নিয়ে নেতানিয়াহু
২০১২ সালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু জাতিসংঘে একটি বোমার ডায়াগ্রাম নিয়ে হাজির হয়েছিলেন৷ ঐ ডায়াগ্রামে এক জায়গায় ৭০ শতাংশ, অন্য জায়গায় ৯০ শতাংশ লেখা ছিল৷ বক্তব্য দেয়ার সময় নেতানিয়াহু ৭০ শতাংশের মধ্যে নীচে লাল কালির দাগ দিয়ে বলেছিলেন, ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ এগিয়ে গেছে৷ দেশটি যেন ৯০ শতাংশে পৌঁছাতে না পারে সেজন্য কাজ শুরু করার আহ্বান জানান তিনি৷