টলিউডে মুখ্য়মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ, চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে নয় কেন?
মুখ্য়মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে তিনদিন অচলাবস্থার পর কাজ শুরু হয়েছে টলিউডে। চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন পা দিচ্ছে চার বছরে।
চার বছর ধরে রাস্তায় চাকরিপ্রার্থীরা
কয়েকদিন পরেই এক হাজার ২৫০ দিন পার করবে চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন। চার বছর হতে চললো তারা পথে বসে রয়েছেন ন্যায় বিচারের আশায়। কেউ মাথা কামিয়েছেন, কেউ মুখে কালি মেখেছেন, কেউ খালি গায়ে প্রতিবাদ করেছেন রাজপথে। রাজপথ সাক্ষী থেকেছে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের খণ্ডযুদ্ধের।
'আন্দোলন মারতে চায় সরকার'
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনের ঝাঁজ কখনো বেড়েছে, কখনো কমেছে। জীবন জীবিকার তাগিদে আন্দোলনকারীদের রোজগারের জন্য ছুটতে হয়েছে। এখন পালা করে অবস্থান বিক্ষোভ চলছে। প্রতিদিন নয়। চাকরিপ্রার্থীদের বক্তব্য সরকার এটাই চেয়েছিল। “পেটের জ্বালায় আমাদের আন্দোলন একদিন মারা যাবে।''
বৈষম্যের প্রশ্ন
সম্প্রতি আরও এক আন্দোলনের সাক্ষী রইল কলকাতা। টালিগঞ্জের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি কয়েকদিনের জন্য অচল হয়ে ছিল দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদের কারণে। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে কয়েকদিনেই কাটলো অচলাবস্থা। আর এখানেই বৈষম্যের প্রশ্ন তুলছেন সাড়ে বারশ দিন ধরে পথে বসে থাকা চাকরির জন্য আন্দোলনকারীদের একাংশ।
রাসমণির কথা
আন্দোলনের হাজারতম দিনে মাথা ন্যাড়া করে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন রাসমণি। তিনি বললেন, “অভিনেতা দেবের মধ্যস্থতায় মাত্র কয়েকদিনেই কেটে গেলো টালিগঞ্জের অচলাবস্থা। কিন্তু আমাদের আন্দোলনের এক হাজার দিনের মাথায় মধ্যস্থতা করতে এগিয়ে এসেছিলেন কুণাল ঘোষ। অনেক বৈঠক অনেক আলোচনার পর প্রায় আড়াইশ দিন পেরিয়ে গেছে। আজও সেই জায়গাতেই পড়ে রয়েছি আমরা।''
উত্তর দেননি কুণাল
এই প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ডিডাব্লিউ, কিন্তু তার কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সেই সময় সদ্য তৃণমূলের মুখপাত্রের পদ থেকে পদত্যাগ করে কুণাল স্বতপ্রণোদিত হয়ে রাসমণির সঙ্গে ধর্ণামঞ্চে দেখা করতে যান।
রাকিবুর শেখের কথা
রাকিবুর শেখ বললেন, “মুখ্যমন্ত্রী স্বীকারও করেছিলেন যে নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। তারপরেও তিনি নির্বিকার। শিক্ষিত বেকাররা পথে পড়ে থাকলে তার কিছু এসে যায় না, কিন্তু টলিউডের সেলিব্রিটিদের সমস্যা হলে তার মন কাঁদে। কারণ সেই সব সেলিব্রিটিদের তিনি ভোটের প্রচারে ব্যবহার করতে পারেন, শিক্ষিত বেকাররা ভোটের কাজে আসে না বোধহয়।”
অর্পিতার কথা
অর্পিতা হাজরা সুদূর পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে একসময় প্রতিদিন আসতেন আন্দোলন মঞ্চে। তিনি জানালেন, মুখ্যমন্ত্রীর থেকে তিনি আর কিছু আশা করেন না। সিনেমা জগতের তারকাদের রাজনৈতিক প্রচারে ব্যবহার করা মুখ্যমন্ত্রীর মূল উদ্দেশ্য। তার কথায়, ''আট বছর কেন, আশি বছর হয়ে গেলেও আমাদের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর ভাবার সময় নেই। অযোগ্যদের নিজের রাজনীতির ছাতার তলায় এনে দিনের পর দিন উনি দুর্নীতি করে চলেছেন।''
টালিগঞ্জের গুরুত্ব বেশি
হাবড়ার জয়া খানের বক্তব্য, শিক্ষার থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে টালিগঞ্জের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজন বেশি, তাই তিনি দু-দিন সেটা অচল হওয়ায় ব্যাকুল হয়ে পড়েছিলেন। তৎপরতার সঙ্গে অচলাবস্থা তুলতে এগিয়ে এসেছেন।
'কাউকেই পাশে পায়নি'
কামরুজ্জামানের গলায় অভিমানের সুর। বললেন, “সমাজের অন্যান্য অংশের মানুষদের আমরা সেভাবে পাশে পাইনি। পেলেও আমাদেরই কিছু ভুলের কারণে হয়তো তারা সরে গেছেন। শিক্ষার অগ্রগতি হলে হয়তো রাজনৈতিক নেতাদের অসুবিধে রয়েছে, তার থেকে সিনেমা সিরিয়াল দেখে জীবন কাটানো অনেক লাভের মনে হয়। মাথায় রাখতে হবে টালিগঞ্জের অভিনেতাদেরও কোনও না কোনও শিক্ষকই তৈরি করেছিলেন।''
মহিদুলের কথা
মহিদুল ইসলাম বললেন, “এইসব কথা তুলে আর লাভ নেই। বধিরের সামনে আর্তনাদ করে কী লাভ? ভাতা দিয়ে ভোট পেয়ে জিতে যাওয়ার স্বাদ পেয়ে গিয়েছেন উনি, শিক্ষিত বেকাররা মরলো না বাঁচলো তাতে তার কিছু এসে যায় না।''
মুখ্যমন্ত্রী শিক্ষায় নেই
শহিদুল্লা বলছেন, “শিক্ষা জগত থেকে আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অনেকদিন নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। শিক্ষা জগতের উন্নয়ন করতে হবে এটা তার মাথায় নেই, বরং আমোদ আহ্লাদে রাজ্যবাসীকে ভুলিয়ে রাখাই তার লক্ষ্য। রাজ্যের মাথা যদি শিক্ষার থেকে রঙিন জীবনকেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে ফেলেন, তা শুধু হতাশারই নয়, ভয়ংকর।''