ঢাকার বাসে সিসি ক্যামেরা, ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন
১৯ অক্টোবর ২০২২ঢাকায় ই-টিকেটিং-এর আওতায় থাকা চারটি পরিবহন কোম্পানির ২৫টি করে মোট ১০০ বাসে এই ক্যামেরা লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে গত ১৬ অক্টোবর থেকে। এখনো লাগানো শেষ হয়নি বলে জানান "প্রজাপতি বাস কোম্পনির” ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, তাদের ১৫টি বাসে এরইমধ্যে লাগানো হয়েছে। দুই-একদিনের মধ্যে বাকি ১০টি বাসেও ক্যামেরা লাগানো হবে। অন্য তিনটি বাস কোম্পানি হলো বসুমতি, পরীস্থান এবং রাজধানী পরিবহন।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘‘গণপরিবহনে নারীর নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন কর্মসূচি''র আওতায় গণপরিবহনে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।
মন্ত্রণালয় জানায়, কর্মসূচি শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালে। ২০১৯ সালের মার্চ থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত দুই বছর মেয়াদে মোট দুই কোটি ৬৩ লাখ ১৯ হাজার টাকায় এ কর্মসূচি অনুমোদন দেওয়া হয়। করোনা মহামারির জন্য পরে কর্মসূচির মেয়াদ বাড়ানো হয়।
কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পাপিয়া ঘোষ বলেন,"গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই প্রকল্প। এটা একটা পাইলট প্রজেক্ট। এখন ১০০ বাসে সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। যদি এটা সফল হয় তাহলে ঢাকার সব বাসেই লাগানোর পরিকল্পনা আছে।”
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী দীপ্ত ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক জাকিয়া কে হাসান বলেন,"সরকারের অর্থে আমরা এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। এর কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে জেনেক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি বাসে চালকের পিছনে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি করে রোভিং সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আমরাই কেন্দ্রীয়ভাবে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করব। আর যেখানে যে ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে তার উদ্যোগও আমরা নেব। তবে এখন ১০০ বাসের পর সরকার মনে করলে এটা বাড়াতে বাড়তে পারে।”
তিনি বলেন,"আমরা চালক-হেলপারদের প্রশিক্ষণ এবং সচেতনতারও কাজ করব। প্রধানমন্ত্রীর কথা, ঘরে বাইরে যাত্রা পথে নারী থাকবে নিরাপদ। সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ।”
তবে প্রজাপতি বাস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন," একটি ক্যামেরা রোভিং হলেও তা দিয়ে পুরো বাস কাভার করা সম্ভব নয়। তাই আমরা বলছি সামনে পিছনে কমপক্ষে দুইটি ক্যামেরা লাগানো প্রয়োজন। আর আমাদেরও যার যার পরিবহন কোম্পানির ফুটেজ সেই কোম্পানিকে দেখার ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা বলেছি কিন্তু তারা রাজি হচ্ছেন না।”
তার কথা,"আমরাও ফুটেজ দেখতে পারলে পরিস্থিতি বুঝতে পারব। আমরাও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থার উদ্যোগ নিতে পারব। তারপরও এটা একটা ভালো উদ্যোগ।”
"আঁচল ফাউন্ডেশন” নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গত মার্চে ঢাকা শহরে যে তরুণীরা গণপরিবহন ব্যবহার করে তাদের মধ্যে এক জরিপ করে দেখেছে তরুণীদের মধ্যে ৬৫.৫৮ শতাংশই যৌন হয়রানির শিকার হন। তাদের মধ্যে ৩৫.৪৯ শতাংশ তরুণী জানিয়েছেন যে তারা বিকৃত যৌন ইচ্ছার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতের মাধ্যমে নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। ২৯.৬২ শতাংশ তরুণীকে আপত্তিকর স্পর্শের ভুক্তভোগী হতে হয়েছে। আর এই যৌন হয়রানির জন্য ৭৫ ভাগই দায়ী করেছেন একই বাসের অন্য পুরুষ যাত্রীদের। ২০ শতাংশ বলেছেন বাসের হেলপারদের কথা। ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী এক হাজার ১৪ জন তরুণীর মধ্যে এই জরিপ করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান তানসেন রোজ বলেন,"এটা শুধু ঢাকা শহর নয়, সারাদেশের গণপরিবহণের কম-বেশি একই চিত্র। এরমধ্যে ধর্ষণের ঘটনাও আছে। গত কয়েক বছরে চলন্ত বাসে একাধিক ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।”
তার কথা,"এই সিসি ক্যামেরায় যেটা হবে তা হলো যারা যৌন হয়রানি করেন তাদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি হবে। তারা ভয়ে বিরত থাকবেন। তারপরও যারা করবে তাদের চিহ্নিত করা সহজ হবে। বাসটিকেও চিহ্নিত করা যাবে।”
তবে তিনি মনে করেন,"এটা মাত্র ১০০ বাসে করলে এর সুফল পাওয়া যাবে না। এটা ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে সব গণপরিবহনে করতে হবে।”
এদিকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এরায়েতুল্ল্যাহ বলেন," আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। তবে এর আর্থিকসহ পুরো ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কত টাকা খরচ করা হচ্ছে। কারা করছে, তাদের দক্ষতা কী সেটা আমাদের কাছে পরিষ্কার হতে হবে। এটা যেন অর্থ খরচের একটি অজুহাত না হয়। আর এর সঙ্গে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের সম্পৃক্ত করতে হবে। আমাদের পরিবহন নিয়ে কাজ আমরা ঠিক মতো জানব না সেটা তো হয় না।”