1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তৃণমূলের হাতে কেন খুন তৃণমূল?

২৮ নভেম্বর ২০২৩

জয়নগর, আমডাঙার পর এবার গোসাবা। ফের খুন তৃণমূল নেতা। আঙুল উঠছে শাসক দলেরই দিকে।

https://p.dw.com/p/4ZWhj
কলকাতায় তৃণমূলের জনসমাবেশের ছবি।
একের পর এক জেলায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সিকার হচ্ছেন দলের নেতারাই। ছবি: Subrata Goswami/DW

চলতি মাসে একের পর এক হিংসার ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তৃণমূল নেতাদের। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে ১৩ নভেম্বর খুন হন অঞ্চল সভাপতি সইফুদ্দিন লস্কর। এরপর উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙায় ১৬ নভেম্বর নিহত হন তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান রূপচাঁদ মণ্ডল। 

২১ নভেম্বর উত্তর ২৪ পরগনার জগদ্দলে খুন করা হয় তৃণমূল কর্মী ভিকি যাদবকে। এ সব নিয়ে হইচই থামার আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবায় ফের খুন শাসক দলের নেতা।

পিটিয়ে খুন নেতাকে

বারুইপুর পুলিশ জেলার সুন্দরবন উপকূল থানার পূর্ব রাধানগর এলাকায় রাস্তা তৈরি নিয়ে বিবাদ বাধে সোমবার। 'পথশ্রী' প্রকল্পে এক কিলোমিটার দীর্ঘ কংক্রিটের রাস্তা তৈরি হচ্ছে। ছয় ফুট চওড়া ও ছয় ইঞ্চি পুরু রাস্তা নির্মাণের বরাত দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো কোনো জায়গায় কম চওড়া ও কম পুরু রাস্তা তৈরির অভিযোগ ওঠে।

এ নিয়ে ঠিকাদার তথা তৃণমূল কর্মী বাকিবুল মোল্লার সঙ্গে এলাকার ৮৪ নম্বর বুথের সভাপতি মুছাক আলি মোল্লার তুমুল বিবাদ হয়। এই সময় মুছাককে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে মৃত বলে জানান চিকিৎসকরা।

মৃতের স্ত্রী তানজিলা মোল্লার অভিযোগ, ''প্রথমে মাথায় মুগুর দিয়ে মেরেছে। তারপর জলে চুবিয়ে দিয়েছে।'' শাসক দলের দিকেই আঙুল তুলেছেন তিনি। বলেছেন, ''বাকিবুল যুব তৃণমূল করে। আমার স্বামী মাদার তৃণমূলে ছিলেন।''

মুছাকের স্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, তৃণমূল নেতার দলবলের হাতে খুন হয়েছেন শাসক দলের বুথ সভাপতি। স্থানীয় সূত্রের দাবি, বাকিবুল গোসাবার বিধায়ক সুব্রত মণ্ডলের অনুগামী। যদিও বিধায়কের বক্তব্য, ''এর সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। ঠিকাদারের সঙ্গে রাস্তা তৈরি নিয়ে গন্ডগোল। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় খুনের ঘটনা।''

তৃণমূল বনাম তৃণমূল

পুলিশ গোসাবার ঘটনায় চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক বলে এলাকায় পরিচিত। শাসক দলের মধ্যে আদি ও নব্যের দ্বন্দ্ব বারবার সামনে আসছে। মূল অভিযুক্ত বাকিবুল আগে বিজেপি করতেন। পরে তৃণমূলে যোগ দেন। জেলা পরিষদের একটি গোষ্ঠীর সঙ্গে বিধায়কের অনুগামীদের সংঘাতের জেরে এই খুন বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি।

অন্যত্র বিভিন্ন ঘটনায় সব দলের দুই গোষ্ঠীর লড়াইয়ের বিষয়টি প্রকাশ্যে এসেছে। জয়নগরের অঞ্চল সভাপতি ও পঞ্চায়েত সদস্য সইফুদ্দিন লস্কর খুনের পর হামলাকারী সন্দেহে পিটিয়ে মারা হয় শাহবুদ্দিন লস্করকে। তিনি তৃণমূল করতেন বলে তার স্ত্রী দাবি করেছেন। 

আমডাঙায় প্রকাশ্যে বাজারের সামনে পঞ্চায়েত প্রধান রূপচাঁদ মণ্ডলকে বোমা মেরে খুন করে দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনা রাজনৈতিক না ব্যক্তিগত আক্রোশের জের, তা তদন্ত করে দেখছি পুলিশ। তবে স্থানীয়দের একটি অংশের মতে, পঞ্চায়েতের দখল নিয়ে তৃণমূলের মধ্যে টানাপড়েন চলছে। তার বলি হয়ে থাকতে পারেন রূপচাঁদ।

গত বছর মার্চে বীরভূমের বগটুইয়ে প্রকাশ্যে খুন হয়েছিলেন তৃণমূল নেতা ভাদু শেখ। এর পাল্টা হিংসায় নারী শিশু-সহ ১১ জনকে খুন করা হয়। এই ঘটনাতেও তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের ছবিটা সামনে এসেছিল। সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও কোন্দল থেকে গিয়েছে, যা তৃণমূলকেই রক্তাক্ত করছে বারবার।

আইনশৃঙ্খলার প্রশ্ন

তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল কিংবা অন্য কোনো শত্রুতা, যে কোনো কারণেই হোক, এভাবে শাসকদলের নেতাদের হত্যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। কেন এত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে দুষ্কৃতীরা?

প্রশ্ন উঠছে, শাসক দলের সমর্থন থাকলে কি আর পুলিশকে ভয় করছে না সমাজবিরোধীরা? পিছপা হচ্ছে না তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান কিংবা বুথ সভাপতির উপর হামলা করতেও?

‘তৃণমূলের মধ্যে একটা আলোড়ন সম্ভবত চলছে’

সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ''সবটাই তৃণমূলের বখরার লড়াই। এতে নিজেরাই বিপন্ন হয়ে পড়ছে। সাধারণ মানুষের সুরক্ষা কোথায়?'' বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ''তৃণমূলই শত্রু তৃণমূলের। পুলিশ কোন দিকে যাবে বুঝতে পারছে না। কে আইনরক্ষা করবে?'' 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''যারা গোড়া থেকে তৃণমূল করছেন, তারা সরকারের আনুকূল্যে সুবিধা পাবেন ভেবেছিলেন। বিরোধী শক্তি নেই বলে এ নিয়ে দলের মধ্যে বিরোধ বাধছে। অনেকে তৃণমূলে যোগ দেয়ায় দাবিদার বাড়ছে। স্বার্থের সংঘাত খুনোখুনি পর্যন্ত গড়াচ্ছে।''

'মাদার' বনাম যুব?

তৃণমূলের মধ্যে একটি বিতর্ক ইদানীং মাঝেমধ্যে মাথাচাড়া দিচ্ছে। শাসক দলে দুটি শক্তিকেন্দ্র তৈরি হয়েছে বলে তুমুল জল্পনা চলছে। একটি কেন্দ্র দলের 'সেকেন্ড ইন কম্যান্ড' অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে। গোসাবায় নিহতের স্ত্রী কি সেই সূত্রেই 'মাদার' ও যুব তৃণমূলের দ্বন্দ্বের কথা বলেছেন?

সার্বিক দল পরিচালনায় ভূমিকা থাকলেও অভিষেককে তৃণমূলের যুব আইকন হিসেবেই দেখা হয়। তার নেতৃত্বেই হয়েছে জনজোয়ার যাত্রা। তৃণমূলের যুব নেতারা নিজেদের 'এবি'-র সমর্থক বা কর্মী বলেও পরিচয় দিয়ে থাকেন। সম্প্রতি দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের মন্তব্য এই বিতর্ককে ফের জাগিয়ে তুলেছে।

প্রবীণ সাংবাদিক দেবাশিস দাশগুপ্ত বলেন, ''তৃণমূলের মধ্যে একটা আলোড়ন সম্ভবত চলছে। তবে সেটা প্ৰকাশ্যে আসেনি সেভাবে। বিরোধের আভাস কিছু ঘটনায় পাওয়া গিয়েছে। এখনই এ বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব নয়।''

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷