পাতাল ঘরে থাকেন তাঁরা
পানি নেই, বিদ্যুৎ নেই, তবুও নিজের ঘর৷ তাই কষ্ট করে হলেও নিজেদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে চান না টিউনিশিয়ার এক অঞ্চলের বাসিন্দারা৷ তাঁরা থাকেন মাটির নীচে!
কয়েক শতাব্দীর ইতিহাস
টিউনিশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের ডেজেবেল ডাহার অঞ্চলের মানুষ গত কয়েক শতাব্দী ধরে মাটির নীচে তৈরি ঘরবাড়িতে বাস করছেন৷ দেয়াল আর ছাদ মাটির তৈরি হওয়ায় গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরম আর শীতকালের ঠান্ডা হাওয়া থেকে মুক্তি পান বাড়ির বাসিন্দারা৷
অদ্ভুত বাড়ি
রাজধানী টিউনিস থেকে ৩৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে মাতমাতা এলাকায় এমন বাড়ি দেখতে পাওয়া যায়৷ এছাড়া সেখান থেকে আরেকটু দক্ষিণ-পশ্চিমে গেলে লিবিয়ার সীমান্তেও এমন বাড়ির দেখা পাওয়া যাবে৷
পর্যটকদের প্রিয়
সত্তরের দশকে স্টার ওয়ার্স মুভির সেট হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল মাতমাতা এলাকার একটি বাড়ি থেকে তৈরি করা হোটেল৷ সেই থেকে ঐ এলাকায় পর্যটকদের আগমন শুরু হয়৷ ফলে স্থানীয়দের আয়ের একটি অন্যতম উৎস হয়ে পর্যটন৷ ছবিতে চার বছরের আহলেমকে দেখা যাচ্ছে৷
পর্যটনে ঘাটতি
২০১১ সালের আরব বসন্ত এবং ২০১৫ সালে টিউনিশিয়ার কয়েকটি পর্যটন স্থানে হামলার কারণে সে দেশে পর্যটক আগমনের সংখ্যা কমে গেছে৷ তার প্রভাব পড়েছে মাতমাতার পর্যটন শিল্পেও৷ ছবিতে যাঁকে দেখছেন তাঁর নাম তায়েব৷ বয়স ৭৬৷ তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের ঘর পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত ছিল৷ কিন্তু এখন পর্যটক আসার সংখ্যা কমে যাওয়ায় কিছু আয় করতে পারছি না৷’’
আয়ের উৎস
পর্যটন ছাড়াও মাতমাতা এলাকার অধিবাসীদের আয়ের আরেক উৎস হচ্ছে জলপাই চাষ৷
জনসংখ্যা কমছে
বিভিন্ন কারণে এমন বাড়িতে বসবাস করা মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমছে৷ কারণগুলোর মধ্যে আছে, উত্তরাধিকার নিয়ে সমস্যা, এলাকায় খরা, বৃষ্টির কারণে বাড়ি ধসে পড়ার সম্ভাবনা ইত্যাদি৷ এছাড়া গ্রাম ছেড়ে শহরে বসবাসের আগ্রহের কারণেও গুহার মতো বাড়িঘরে বসবাসের সংখ্যা কমছে৷
নতুন বাড়ি
পাতাল ঘরে বসবাস অনেকের কাছে কষ্টকর মনে হয়৷ কারণ বিদ্যুৎ নেই, নেই পানির ব্যবস্থাও৷ তাইতো অনেকে ঐ অঞ্চলেই নতুন পাকা বাড়ি নির্মাণ করে থাকছেন৷
ঐতিহ্য ধরে রাখা
কিন্তু সালিহা মোহামেদি তাঁর বাড়ি ছেড়ে যেতে চান না৷ তিনি মাটির ঘরেই থাকতে চান৷ ‘‘বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার মানে হবে আমার জীবন আর ঐতিহ্য ছেড়ে যাওয়া,’’ বলেন তিনি৷
শান্তি কেনা যায় না
৬০ বছরের মুনজিয়া জানালেন, তিনিও এই বাড়ি থেকে নতুন কোনো বাড়িতে যেতে চান না৷ ‘‘আমরা সবকিছুই কিনতে পারি, কিন্তু মনের শান্তি কিনতে পারি না,’’ এই হলো তাঁর কথা৷
আঁকড়ে আছেন ইয়াহিয়াও
৩৮ বছরের লতিফা বিন ইয়াহিয়াও তাঁর বাড়ি ছেড়ে যাবেন না৷ ‘‘আমার বাবা মারা গেছে৷ মাও নেই৷ মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে৷ তারা সবাই যার যার জীবন বেছে নিয়েছে৷ এখন আমি যদি চলে যাই তাহলে বাড়িটাও শেষ হয়ে যাবে,’’ বলেন তিনি৷