ভুল্লারের যাজ্জীবন কারাদণ্ড
১ এপ্রিল ২০১৪সোমবার ১৯৯৩ সালে দিল্লি বিস্ফোরণ কাণ্ডের মূল আসামি খালিস্তানি সন্ত্রাসী দেবিন্দর পাল সিং-এর ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেয় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট৷ ফাঁসির আদেশ কার্যকর করতে সরকারের অনাবশ্যক বিলম্ব এবং আসামির মানসিক অসুস্থতার কারণেই সাজার এই পরিবর্তন৷
২০০১ সালে সন্ত্রাসী ভুল্লারকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল দিল্লির এক নিম্ন আদালত৷ সেই আদেশ রদ করার আবেদন জানানো হলে ২০০২ সালে তা খারিজ হয়ে যায় সুপ্রিম কোর্টে৷ তারপর ২০০৩ সালে ভুল্লারের স্ত্রী তাঁর স্বামীর মানসিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে কিউরেটিভ পিটিশন দাখিল করে জানান যে, ভুল্লার মানসিকভাবে সুস্থ নয়৷ পরে রাষ্ট্রপতির কাছে স্বামীর প্রাণভিক্ষার আবেদন জানান তিনি৷ দীর্ঘ ৮ বছর পর সেই আবেদন খারিজ করে দেন রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালে৷ উল্লেখ্য, দিল্লি বিস্ফোরণ কাণ্ডে নিহত হয়েছিল ৯ জন এবং আহত হয় ২৫ জন৷ আহতদের মধ্যে একজন ছিলেন কংগ্রেস যুব সংগঠনের সভাপতি এম.এস বিট্টা৷
সর্বোচ্চ স্তরে ফাঁসির রায় বহাল থাকার পরও বছরের পর বছর সরকারের দিক থেকে তা কার্যকর করতে অহেতুক বিলম্ব ফাঁসি রদ করার পক্ষে যথেষ্ট কারণ বলে মন্তব্য করেছিল শীর্ষ আদালত ২০১৪ সালের গোড়ার দিকে৷ তারই জেরে ১৮ জন ফাঁসির আসামিকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন৷ তার মধ্যে ছিল ১৯৯১ সালে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী হত্যা মামলায় অভিযুক্ত তিনজন তামিল ফাঁসির আসামি৷ রাজীব গান্ধী হত্যা মামলার তিনজন তামিল অপরাধীকে ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলেও জয়ললিতার তামিলনাড়ু সরকার তামিল জাতীয়তাবাদের আঁচে হাওয়া দিতে বিধানসভায় এক বিশেষ প্রস্তাব পাশ করিয়ে তাঁদের মু্ক্তি দেবার সিদ্ধান্ত নেয়৷ কেন্দ্রীয় সরকার ঐ একতরফা সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধীতা করে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি পেশ করে৷ এর প্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালত তামিলনাড়ু সরকারের সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দেয়৷
ভুল্লারের ক্ষেত্রে কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান বিপরীত৷ কেন্দ্রীয় সরকারে অ্যাটর্নি জেনারেল শীর্ষ আদালতে রায়কে স্বাগত জানান৷ বলেন, এই রায়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো আপত্তি নেই৷ পর্যবেক্ষকরা এর মধ্যে ভোট রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন৷ আর মাসখানেক পরেই সাধারণ নির্বাচন৷ গোটা দেশে এখন নির্বাচনি উত্তাপ তুঙ্গে৷ এই আবহে ভুল্লারের ফাঁসি রদের আদেশকে স্বাগত না জানালে পাঞ্জাবে রাজনৈতিক ভুল বার্তা যাবে৷ শিরোমণি আকালি দল শাসিত পাঞ্জাবে ভোটের ফায়দা তুলবে বিরোধী দলগুলি৷ নতুন করে অশান্তি দেখা দিতে পারে৷ দলীয় স্বার্থের দিকে তাকিয়েই কি তাহলে কংগ্রেস সরকার আদালতের রায়কে স্বাগত জানালো?
১৯৭০ থেকে ৮০-এর দশকে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যকে পৃথক করে শিখ রাষ্ট্র খালিস্তান গঠন করার জন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শুরু হয়, যা পরে সহিংস আন্দোলনের রূপ নেয়৷ সেই আন্দোলন দমন করতে সরকার ব্লু-স্টার নামে অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরে সামরিক অভিযান চালায়৷ স্বর্ণমন্দির তখন ছিল খালিস্তানিদের এক ঘাঁটি৷ তারই জেরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শিখ দেহরক্ষীদের হাতে নিহত হলে ১৯৮৪ সালে গোটা দিল্লিতে শুরু হয় শিখ নিধন যজ্ঞ৷ হিন্দু-শিখ দাঙ্গার ইস্যু এখনো এক নির্বাচনি ইস্যু শিখ আকালি দলের৷ খালিস্তানি সন্ত্রাসী ভুল্লার ৯৩ সালে দিল্লিতে এক বড় রকম সন্ত্রাসী হামলা চালাবার পরেই পালিয়ে যায় জার্মানিতে৷ কিন্তু ১৯৯৫ সালে জার্মানি ভুল্লারকে ফেরৎ পাঠায় ভারতে৷