ভারতের 'অপরাধ-রাজধানী'তে ভাড়াটে খুনি দিয়ে খুন করালো কিশোর
১ নভেম্বর ২০২৪দিল্লিকে বলা হয় ভারতের অপরাধ রাজধানী। দেশের শহরগুলির মধ্যে অপরাধের তালিকায় দিল্লি এক নম্বরে। সেই দিল্লিতে আবার একটি ভয়ংকর অপরাধের ছবি সামনে এলো।
পশ্চিম দিল্লির শাহদরার ঘটনা। বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ির সামনে দিওয়ালির উৎসব করছিলেন ৪৪ বছর বয়সি আকাশ শর্মা। সঙ্গে ছিলেন ১০ বছর বয়সি ছেলে কৃশ শর্মা ও ১৬ বছর বয়সি ভাইপো ঋষভ শর্মা।
সেই সময় ১৬ বছর বয়সি এক কিশোর স্কুটার নিয়ে আসে। সে আকাশের পা ছোঁয়। তারপরই ওই কিশোরের ভাড়া করা গুণ্ডা আকাশ শর্মাকে লক্ষ্য করে পাঁচটি গুলি মারে। আকাশ শর্মা ঘটনাস্থলে মারা যান। তার ছেলে আহত হয়।
ভাইপো ঋষভ স্কুটারের পিছনে ধাওয়া করেছিলেন, তখন তাকেও গুলি করে মারে ওই ভাড়াটে খুনি।
পুলিশ ওই কিশোরকে আটক করেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই কিশোর আকাশ শর্মাকে কিছু টাকা ধার দিয়েছিল। তারপর তিনি তা ফেরত দিচ্ছিলেন না। এ নিয়ে আগেও তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিল। ১৭ দিন আগে কিশোর এই হত্যার পরিকল্পনা করে।
দিল্লির পরিস্থিতি
সম্প্রতি নামবিও বপলে একটি সংস্থা বিশ্বের বিভিন্ন অপরাধপ্রবণ শহর নিয়ে সমীক্ষা করেছে। সেই তালিকায় দিল্লি ৭০তম স্থানে আছে। ৮৭ ও ৯৫তম স্থানে আছে দিল্লির দুই প্রতিবেশী শহর উত্তরপ্রদেশের নয়ডা ও হরিয়ানার গুরুগ্রাম। দক্ষিণ ভারতের শহর বেঙ্গালুরু আছে ১০২তম স্থানে। কলকাতা আছে ১৫৯তম স্থানে।
দিল্লি পুলিশের দেয়া তথ্য অনুসারে ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে ডাকাতির পরিমাণ ২৩ শতাংশ বেড়েছে, ২০২২-এর তুলনায় তা বেড়েছে ৪৬ শতাংশ। চুরির পরিমাণ ২০২২ সালের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৩ সালের তুলনায় হত্যার সংখ্যা ১৮ শতাংশ বেড়েছে।
চলতি বছরে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশ ভারতীয় দণ্ডবিধি ও ভারতীয় ন্যায় সংহিতা অনুসারে এক লাখ ৭৪ হাজার ২৫৩টি অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগ দায়ের করেছে। তার মধ্যে ৩০৮টি হত্যা এবং এক হাজার ৩৪টি ডাকাতির ঘটনা আছে। নারী ও শিশুদের ধর্ষণ ও যৌন নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে এক হাজার ৩৪২টি। তবে ২০২৩-এর তুলনায় ধর্ষণের সংখ্যা চার শতাংশ কমেছে।
এছাড়া চার হাজার ৩১৬টি ছিনতাই, ২৫ হাজার ১৪০টি গাড়ি চুরি, ১২ হাজার ৬৯৮টি বাড়িতে চুরির ঘটনা রয়েছে। ১৩ জনকে টাকার জন্য অপহরণ করা হয়েছে।
অপরাধের সনাক্তকরণ
দিল্লি পুলিশের দেয়া তথ্য বলছে, ৫৭ শতাংশ ক্ষেত্রে ছিনতাইয়ের সনাক্তকরণ হয়েছে। জোর করে টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে ৫১ শতাংশ, বাড়িতে চুরির ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশ ও গাড়ি চুরির ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে সনাক্তকরণ হয়েছে।
ফলে চুরির ক্ষেত্রে, অপরাধীদের ধরার ব্যাপারে কিছু ক্ষেত্রে দিল্লি পুলিশের ভূমিকা তেমন উৎসাহব্যাঞ্জক নয়।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
দিল্লিতে আইন-শৃঙ্খলার বিষয়টি দেখে কেন্দ্রীয় সরকার। দিল্লি পুলিশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে। তাই বরাবরই দিল্লির আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে কেন্দ্রীয় সরকার সমালোচনার মুখে পড়ে।
আপ নেতা ও দিল্লির মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ শাহদরার ঘটনার পর সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, ''শহরজুড়ে অপরাধীদের কাজকর্ম বেড়েছে। বিজেপি-র অধীনে দিল্লির আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে।'' তিনি বলেছেন, ''ফরাসি রাষ্ট্রদূতের ফোন পর্যন্ত বাজার থেকে চুরি হয়ে যায়।''
সম্প্রতি দিওয়ালির বাজার করতে ফরাসি রাষ্ট্রদূত চাঁদনি চকে গেছিলেন। সেসময় জামার বুকপকেটে রাখা তার মোবাইল চুরি হয়ে যায়। অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ সেই মোবাইল উদ্ধার করে। চারজনকে আটক করা হয়েছে। সৌরভ ভরদ্বাজ সেই ঘটনার উল্লেখ করেছেন।
গত মে মাসে সৌরভ বলেছিলেন, ''ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর তথ্য বলছে, দিল্লিতে প্রতি এক লাখ জনসংখ্যায় গড়ে এক হাজার ৮৩২টি অপরাধ হয়। দেশের অন্যত্র গড়ে ২৫৮টি অপরাধ হয়। দিল্লিতে প্রতিদিন দিল্লিতে এক হাজার ১৮৯টি অপরাধের মামলা দায়ের হয়।''
কংগ্রেস নেতা হারুন ইউসুফ বলেছেন, ''দিল্লিতে এখন সকলেই নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। নারী, বয়স্ক, বাচ্চা মেয়ে, শিশুদের উপর অপরাধমূলক কাজ বাড়ছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও কেন্দ্রীয় সরকার কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিল্লি অপরাধের রাজধানীতে পরিণত হয়েছে।''
'চিন্তার বিষয়'
প্রবীন সাংবাদিক শরদ গুপ্ত ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''বৃহস্পতিবারের ঘটনার কয়েকটি বিশেষ দিক রয়েছে। প্রথমত, একজন কিশোর ভাড়াটে খুনিকে নিয়োগ করেছে। ১৭ দিন আগে পরিকল্পনা করে সে এই কাজ করেছে। তার অর্থ, এর মধ্যে সে ভাড়াটে খুনির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে নিয়োগ করেছে। তার মানে ভাড়াটে খুনির সঙ্গে যোগাযোগ সহজেই হয়েছে।''
শরদের মতে, ''অপ্রাপ্তবয়স্ক হলে জুভেনাইল কোর্টে বিচার হয়। ফলে অপরাধ প্রমাণ হলেও সেক্ষেত্রে শাস্তির পরিমাণ অনেক কম হয়। অপ্রাপ্তবয়স্করা তার সুযোগ নিচ্ছে কি না, সেটাও ভেবে দেখা দরকার। তাছাড়া টাকা ফেরত না পেয়ে পুলিশের কাছে না গিয়ে কেন ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করার কথা ভাবলো কিশোর, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার।''
জিএইচ/এসজি