মধ্যরাতে আরজি করে দুষ্কৃতী হামলা, তছনছ জরুরি বিভাগ
নিরাপত্তার দাবিতে মেয়েরা যখন রাস্তায় রাতদখলের কর্মসূচি করছেন, তখন আরজি কর দখল করে নিলো দুষ্কৃতীরা।
জরুরি বিভাগ তছনছ
আরজি করের জরুরি বিভাগের দরজা ভেঙে দুষ্কৃতীরা মধ্যরাতে ভিতরে ঢুকে পড়ে। সিসিইউ, এইচসিসিইউ, টিকিট কাউন্টার, ওষুধের স্টোররুম ভেঙে তছনছ করে দেয় তারা। আরজি করের কর্মীরা প্রাণ বাঁচাতে ছয়তলায় গিয়ে আশ্রয় নেয়।
ওষুধের স্টোররুমের ছবি
ওষুধের স্টোররুমেও দুষ্কৃতীরা আক্রমণ চালায়। সেই হামলার পর গিয়ে দেখা যায়, ওষুধ-পত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। ওষুধ রাখার ফ্রিজও ভাঙা হয়েছে। চারিদিকে কেবল তাণ্ডবের চিহ্ন।
আর কোথায় আক্রমণ চালানো হলো?
পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। লোহার রড হাতে দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালায়। সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা আক্রান্ত হন। টিভি৯-এর ক্যামেরা ভেঙে দেয়া হয়েছে। পরে পুলিশ জানায়, আরজি করের চারতলায় থাকা সেমিনার রুম আক্রান্ত হয়নি।
ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফাইলপত্র
দুষ্কৃতীদের হামলার পর চারদিকে ফাইলপত্র পড়ে থাকতে দেখা যায়। জরুরি বিভাগের সবকিছুর উপর হামলা হয়েছে। সব জায়গায় দুষ্কৃতীদের সেই হামলার চিহ্ন ছড়িয়ে আছে।
ভাঙা হলো প্রতিবাদমঞ্চ
কয়েকদিন আগে আরজি কর হাসপাতালে নাইট ডিউটি করার পর এক নারী চিকিৎসক যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, তখন তাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। তারপর থেকে পড়ুয়া ও জুনিয়র ডাক্তাররা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। সেই প্রতিবাদমঞ্চ ভেঙে দেয়া হয়।
কারা এই দুষ্কৃতী?
আরজি করের কাছে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে যখন নারীদের রাত দখলের আন্দোলন শুরু হয়, তারপরেই কিছু মানুষ রড, লাঠি নিয়ে আরজি করে ঢুকে পড়ে। অনেকের গায়ে ছিল স্যান্ডো গেঞ্জি। তারা কাছাকাছি এলাকার মানুষ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে তারা কারা সেই পরিচয় জানা যায়নি।
মেয়েদের আন্দোলন
আরজি করে চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার পর আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, মেয়েরা রাত দখল করো। দাবি ছিল, মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আরজি করের কাছে মধ্যরাতে যখন মেয়েদের বিক্ষোভ চলছে, তখনই একদল দুষ্কৃতী হাসপাতালে ঢুকে এই ভাঙচুর করে।
কেন এই হামলা?
আরজি করে নারী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের পর এই হামলা কি প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা? মধ্যরাতের হামলার পর এই প্রশ্ন উঠেছে। নারীদের প্রতিবাদ কর্মসূচির সুযোগ নিয়ে যেভাবে হামলা চালানো হয়েছে, তাতে প্রচুর প্রশ্ন উঠছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, পুলিশ কেন এই হামলা প্রতিহত করতে পারলো না? কেন সেখানে উপযুক্ত সংখ্যক পুলিশ ছিল না? কলকাতার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জনবহুল জায়গায় কী করে বারবার এরকম ভয়ংকর কাণ্ড ঘটতে পারে?
পুলিশ যা বলেছে
আরজি করের তদন্তভার পুলিশের হাত থেকে নিয়ে সিবিআই-কে দিয়েছে হাইকোর্ট। যেভাবে পুলিশের তদন্ত হচ্ছিল তাতে তারা আস্থা রাখতে পারেনি। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল রাতেই ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেছেন, '' হামলায় ডিসি নর্থ গুরুতর আহত হয়েছেন। এখানে ভুল প্রচারের জন্য এরকম হয়েছে।''
দাঙ্গারোধী পুলিশ
ভাঙচুর শুরুর পর দাঙ্গারোধী পুলিশ নামানো হয়। তারা কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। তারা দুষ্কৃতীদের তাড়া করে। দুষ্কৃতীরা ইট-মারতে থাকে। পুলিশ তখন তাদের তাড়া করে। দুষ্কৃতীরা কিছুটা পিছিয়ে যায়। পাশে খালপাড় দিয়ে কিছু দুষ্কৃতী পালায়।
প্রশ্ন অনেক
প্রথমে চিকিৎসককে ধর্ষণ করে হত্যা, তারপর এই তাণ্ডবের পর অনেক প্রশ্ন উঠছে? কলকাতার একটি প্রমুখ সরকারি হাসপাতালে কী করে এই অবস্থা হতে পারে? ধর্ষণ ও হত্যার পর দুষ্কৃতীদের এতটা সাহস হয় কী করে? কারা এর পিছনে আছে? পরপর দুইটি ঘটনা রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও পুলিশের ভূমিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্নও তুলে দিয়েছে।
প্রতিবাদীর কান্না
এই তাণ্ডবের পর বিক্ষোভরত পড়ুয়া ও জুনিয়র ডাক্তাররা রীতিমতো বিচলিত হয়ে পড়েছেন। এক জুনিয়র ডাক্তার তো চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না। যে কাণ্ড হয়েছে, তারপর এই প্রতিক্রিয়া খুবই স্বাভাবিক।