রাজনীতিতে ‘সুপার হিরো'
৭ জানুয়ারি ২০১৮বেশ কিছুদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল রজনীকান্ত রাজনীতিতে আসবেন৷ অবশেষে তিনি নিজেই ঘোষণা করেছেন সে কথা৷ জানিয়েছেন, আলাদা রাজনৈতিক দল তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর৷ রজনীকান্তের ঘোষণা শোনার জন্য তাঁর বাড়ির বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন সাংবাদিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকলেই৷ রজনীকান্তের কথা শোনার অপেক্ষায় ছিলেন দেশের রাজনীতিবিদ এবং চিত্র তারকারাও৷ অমিতাভ বচ্চন টুইটে জানিয়েছেন, ‘‘আমার বন্ধু, আমার সহকর্মী এবং একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ, রজনীকান্ত রাজনীতিতে আসার কথা ঘোষণা করেছেন৷ শুভেচ্ছা৷''
তবে ডিএমকে কিংবা এআইডিএমকে-র মতো তামিলনাডুর মূলস্রোতের রাজনৈতিক দলগুলি এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি৷ ক্ষমতায় আসার পর নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বেশ কয়েকবার দেখা করেছেন রজনীকান্ত৷ মোদীর প্রশংসাও করেছেন৷ কিন্তু তাঁর ঘোষণা নিয়ে এখনও কোনো মন্তব্য করেননি মোদী কিংবা তাঁর দল বিজেপি৷
৬৭ বছরের রজনীকান্ত বলেছেন, সময়ের প্রয়োজনেই তিনি রাজনীতিতে আসছেন৷ তাঁর মন্তব্য, রাজনৈতিক ক্ষমতা কিংবা আসনের জন্য তিনি রাজনীতিতে আসছেন না৷ টাকারও প্রয়োজন নেই তাঁর৷ কেবলমাত্র রাজনীতির জন্যই রাজনীতির মঞ্চে আসছেন তিনি৷ তাঁর ধারণা, ভারতীয় রাজনীতির বর্তমান চেহারা দেখে সারা বিশ্ব হাসাহাসি করছে৷ সিস্টেমের বদল দরকার৷ রাজনৈতিক সংস্কৃতির বদল দরকার৷ সেই কাজটিই করতে চান তিনি৷
একজন বাস কনডাক্টরের কাজ দিয়ে জীবন শুরু করেছিলেন রজনীকান্ত৷ তিন বছর কনডাক্টরের কাজ করার পর অভিনয় স্কুলে যোগ দেন৷ পরবর্তী ইতিহাস এখন মিথ৷ তাঁর মুকুটে এখন ১৭৫টিরও বেশি হিট ফিল্মের পালক৷ ১৯৭৫ সাল থেকে তামিল এবং তেলেগু ভাষায় একের পর এক হিট ফিল্মের রেকর্ড তৈরি করেছেন৷ রজনীকান্তের ছবি মুক্তি পাওয়ার বহু আগে থেকে দক্ষিণ ভারতের রাস্তা ভরে যায় তাঁর ‘কাট আউট'-এ৷ কাট আউটের মাথায় দুধ ঢেলে তাঁকে পুজো করেন অগণিত ভক্ত৷
বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, একদম ঠিক সময়ে দক্ষিণী রাজনীতিতে আসার পরিকল্পনা করেছেন রজনীকান্ত৷ কারণ জয়ললিতার মৃত্যুর পর দক্ষিণী রাজনীতিতে একটা বড় শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে৷ রুপোলি জগতের প্রবল জনপ্রিয়তা ব্যবহার করে রাজনৈতিক জগতের সেই শূন্যস্থান পূর্ণ করতেই পারেন রজনীকান্ত৷
ভারতীয় রাজনীতিতে অতীতেও বহু চিত্র তারকা যোগ দিয়েছেন৷ বিশেষত দক্ষিণ ভারতে৷ এম করুণানিধি থেকে শুরু করে জয়ললিতা, সকলেই একসময় রুপোলি জগতের তারকা ছিলেন৷ বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক সাংবাদিক সদানন্দ মেননের মতে, ১৯৬৭ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে এই ট্রেন্ড সবচেয়ে বেশি লক্ষ করা গিয়েছিল৷ রুপোলি জগতের গ্ল্যামার ব্যবহার করে রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা তৈরি করতেন অনেকেই৷ ফিল্ম সমালোচক শুভ্রা গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, তামিলনাডুর মানসিকতাতেই বিষয়টি ঢুকে গিয়েছে৷
তবে শুধু তামিলনাডু নয়, ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও একইরকম ঘটনা ঘটেছে৷ বিশেষত দক্ষিণ ভারতে৷ অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটকের বহু তারকা রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন৷ অন্ধ্রপ্রদেশের বিশিষ্ট অভিনেতা নন্দামুরি তারক রামা রাও (এনটিআর) ‘তেলেগু দেশম পার্টি' তৈরি করেছিলেন৷ অন্ধ্রপ্রদেশে তিনদফায় মুখ্যমন্ত্রীও ছিলেন তিনি৷
থিয়েটার দিয়ে জীবন শুরু করেছিলেন এনটিআর৷ পরে ফিল্মে আসেন৷ তেলেগু ছবিতে হিন্দু দেবতাদের চরিত্রে অভিনয় করে অন্ধ্রের মানুষের মন জয় করেছিলেন তিনি৷ ফিল্ম ঐতিহাসিক অনবুমানির মতে, দক্ষিণী ছবি বরাবরই জনপ্রিয়তা তৈরির যন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে৷ স্ক্রিনে জনপ্রিয়তা তৈরি করে তারকারা রাজনীতিতে তা ব্যবহার করেছেন৷
তবে শুধু দক্ষিণ নয়, মুম্বইয়ের তারকারাও বিভিন্ন সময়ে রাজনীতিতে এসেছেন৷ সুনীল দত্ত থেকে অমিতাভ বচ্চন, গোবিন্দ থেকে স্মৃতি ইরানি, সকলেই রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে৷ কিন্তু দক্ষিণের মতো তাঁরা সকলেই রাজনীতিতে জনপ্রিয় হননি৷ অমিতাভ বচ্চনের মতো জনপ্রিয় অভিনেতা রাজনীতি থেকে সরেও গিয়েছেন৷ আবার স্মৃতি ইরানি জয় করেছেন রাজনৈতিক জনপ্রিয়তা৷
মুরলি কৃষ্ণন/এসজি