শহীদুল আলমের মুক্তি কেন নয়?
১৯ নভেম্বর ২০১৮গত বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) শহীদুল আলমের জামিন মঞ্জুর করে হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ আবদুল আউয়াল ও বিচারপতি ভীষ্মদবে চক্রর্বতীর আদালত৷ সাধারণ বিবেচনায় ওইদিনই তাঁর কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও তিনি মুক্তি পাননি৷ এরপর শুক্র-শনিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটি৷ আশা করা হয়েছিল রবিবার মুক্তি পাবেন৷ কিন্তু রবিবারও পাননি৷ ওইদিনই শহীদুল আলমের জামিন স্থগিতের আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ৷ তারা আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করলেও আবেদনটি শুনানির জন্য সোমবারও কার্যতালিকায় আসেনি৷ সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘কাল (মঙ্গলবার) চেম্বার জজ আদালতে আবেদনটির ওপর শুনানি হতে পারে৷ আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপনের নাম্বার পড়েছে৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন,‘‘তিনি (শহীদুল) আল জাজিরায় সাক্ষাৎকার দিয়েছেন৷ সেখানে তিনি স্বাধীনতা, স্বার্বভৌমত্ব এবং সরকারের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন, সে কারণেই জামিন স্থগিতের আবেদন করা হয়েছে৷''
শহীদুল আলমের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘চার দিন হলো তাঁর জামিনের আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট৷ আমরা এখনো কাজগপত্র বের করতে পারিনি৷ আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় টেবিলে টেবিলে ঘুরছি৷ তারা জামিন স্থগিতের আবেদন করলেও তা মুভ করা হচ্ছে না৷ শহীদুলের জামিন স্থগিতও করা হয়নি৷ তারপরও তিনি মুক্তি পাচ্ছেন না৷''
তিনি বলেন,‘‘জামিন স্থগিতের আবেদনে তারা কোনো কারণ দেখাননি৷ আর যে কারণ দেখিয়ে মামলা হয়েছে, জামিন শুনানির সময় তারা আদালতের কাছে তা প্রমাণও করতে পারেননি৷ ফলে তিনি জামিন পেয়েছেন৷ এরপরও তাঁর মুক্তি বিলম্বিত করা হচ্ছে৷ আমার মনে হয়, তাঁর প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এটা করা হচ্ছে৷ জামিন শুনানি করতে গিয়ে ৩০-৩৫ দিন ঘুরিয়েছে৷ অ্যাটর্নি জনারেল নিজেই ১০-১৫ বার সময় নিয়েছেন৷ আমাদের পাঁটটি কোর্টে ঘুরতে হয়েছে৷ রাষ্ট্র আইনের শাসনের মধ্যে আছে বলে আমার কাছে মনে হয় না৷''
বাংলাদেশে ‘নিরাপদ সড়ক' আন্দোলন চলাকালে ‘উসকানিমূল মিথ্যা' তথ্য দেয়ার অভিযোগে গত ৫ আগস্ট শহীদুল আলমকে তাঁর ধানমন্ডির বাসা থেকে আটক করা হয়৷পরের দিন তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা হয়৷ এরপর শহীদুলকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ৷ নিম্ন আদালত দুই দফা তাঁর জামিন আবেদন নাকচ করে৷ এরপর ১৭ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে জামিনের আবেদন জানানো হয়৷ একবার হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ তাঁর জামিন আবেদন শুনানিতে বিব্রত হন৷ সাড়ে তিন মাস ধরে তিনি কারাগারে আছেন৷ নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় আরো যাঁদের আটক করা হয়েছিল, তাঁদের কয়েক মাস আগেই জামিনে মুক্তি দেয়া হলেও শহীদুল আলমের এখনো মুক্তি মেলেনি৷
মানবাবিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘আমরা লক্ষ্য করছি, আদালত জামিন দেয়ার পরও সেই জামিন আটকে দেয়ার জন্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তৎপরতা চালানো হচ্ছে৷ জামিন সাংবিধানিক অধিকার৷ এর সঙ্গে ন্যায় বিচারের অধিকারও জড়িত৷ এটা বাধাগ্রস্ত হলে ন্যায় বিচার নিয়েই প্রশ্ন ওঠে৷''
তিনি আরো বলেন,‘‘শহীদুল আলম রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর কেউ নন৷বরং তিনি রাষ্ট্রকে বিশ্বে তুলে ধরেছেন৷ রাষ্ট্রের গৌরব বাড়িয়েছেন৷ তাঁর জামিনের বিরোধিতা করা দুঃখজনক৷''