সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান
২৪ ডিসেম্বর ২০১৩সংগঠনটি মনে করে, সাক্ষীরা নিরাপদ না হলে ভবিষ্যতে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে সাক্ষীরা সাক্ষ্য নাও দিতে পারেন৷ এদিকে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রাণা দাসগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন শুধু সাক্ষী নয়, বিচারক ও প্রসিকিউটররাও হুমকির মুখে আছেন৷
চলতি মাসেই হত্যা করা হয়েছে মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মামলার সাক্ষী মুস্তাফা হাওলাদারকে৷ এছাড়া আলি আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে মামলার সাক্ষী রণজিৎ কুমার নাথের বাড়ি ও দোকান পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ আগুন দেয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালের ২ জন এবং আপিল বিভাগের একজন বিচারকের বাড়িতে৷ এর আগে একজন সাক্ষীর ভাইকে হত্যা করা হয়েছে৷
এই অবস্থায় একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷ সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে যারা সাক্ষী দিচ্ছেন তাঁদের হত্যা করার ঘটনা অতীতের এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে যারা সাক্ষ্য দেবেন তাঁদেরকে প্রভাবিত করবে৷ এতে সাক্ষীরা আর সাক্ষ্য নাও দিতে পারেন৷''
এদিকে সরকার অবশ্য দাবি করছে তারা চাহিদামতো সাক্ষীদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন৷ কেউ চাইলে পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়৷ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সমন্বয়কারী হান্নান খান ডয়চে ভেলেকে জানান, তাদের কাছেও সাক্ষীরা নিরাপত্তার আবেদন করেন৷ সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপারদের সাক্ষীদের নিরাপত্তার ব্যাপারে বলে দেয়া আছে৷
এর জবাবে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রাণা দাসগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার যা বলছে তা আইওয়াশ ছাড়া আর কিছুই নয়৷ কারো বাড়িতে পুলিশ দিয়ে অথবা থানায় নিয়ে বসিয়ে রেখে নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়৷ প্রয়োজন সাক্ষী সুরক্ষা আইন৷'' তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল গঠনের ৪ বছর হয়ে গেলেও সরকার এখনো এব্যাপারে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না৷ অথচ ট্রাইব্যুনালের পক্ষ থেকে বারবার এই আইনের কথা বলা হচ্ছে৷ আইনটি হলে আবেদনের প্রয়োজন পড়বে না, সাক্ষীদের সুরক্ষার ব্যাপারটি আইনি কাঠামোর মধ্যে চলে আসবে৷ তিনি জানান, ‘‘শুধু সাক্ষী নয়, প্রসিকিউটর এবং বিচারকরাও হুমকির মধ্যে আছেন৷ বিচারকদের বাড়িতে হামলা ছাড়াও চিঠি দিয়ে হুমকি দেয়া হয়েছে৷ আর এই অবস্থা চলতে থাকলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে যুদ্ধাপরাধের বিচার৷''
এদিকে সাক্ষী মুস্তাফা হাওলাদারকে হত্যার পর ট্রাইব্যুনাল তার প্রতিক্রিয়ায় আদালতে বলেছেন, ‘‘একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশে বিচার কাজে সহায়তার জন্য একজন সাক্ষীকে হত্যা করার বিষয়টি কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না৷'' রাণা দাসগুপ্ত বলেন, তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিচারকাজে অংশ নিচ্ছেন, বিচারে সহায়তা করছেন৷ তাই পুরো ট্রাইব্যুনালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন৷