সোনাগাছিতে প্রতিশ্রুতিই সার, কথা রাখেন না নেতারা
২৭ মার্চ ২০২১উত্তর কলকাতার সোনাগাছিতে যৌনকর্মীদের সংখ্যা আর আগের মতো নেই৷ পনেরো হাজার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে সাত হাজারে৷ সমস্যাবহুল সোনাগাছির সহযোগীতায় কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও অরাজনৈতিক দলের সাক্ষাৎ মেলে৷ কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো কি তাদের দায়িত্ব পালন করে? অভিযোগ আছে, রাজনৈতিক দিক থেকে সমর্থন পায় না বলেই যৌনকর্মীরা আইনের স্বীকৃতি পাননি৷
সমস্যার সমাধান মেলে?
ফি বছর চাঁদার নাম করে জুলুম সহ্য করতে হয় নিষিদ্ধপল্লীর কর্মীদের৷ ইমমরাল ট্রাফিকিং প্রিভেনশন অ্যাক্টের (ITPA) দরুণ এখনও পুলিশি হেনস্তার স্বীকার হতে হয় তাদের৷ অধিকার ও সম্মানের লড়াইয়ে সামিল যৌনকর্মীদের সংগঠন ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি'র সেক্রেটারি কাজল বসু বলেন, "এই ধারাগুলো বদলাতে কেউ একটা বাক্যও বলেন না৷ আমরা অ্যান্টি ট্রাফিকিং নিয়ে কাজ করি৷ বোর্ডের স্বীকৃতি পেলে কাজটা আরও ভাল করতে পারি৷ শ্রমদপ্তরে নামটুকু তুলতেও কেউ এগিয়ে আসেন না৷”
সংগঠনের প্রেসিডেন্ট বিশাখা লস্কর বলেন, ‘‘প্রত্যেক দল যা প্রতিশ্রুতি দেয়, সবই মিথ্যা৷ আমরা কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে সেটা নেতারা গুরুত্ব দিয়ে দেখেন না৷ বরং তাদের দলের লোকেরা দোষ করলেও ছাড়া পায়৷”
ভোটের আগে সব দলের কাছেই যৌনকর্মীদের সংগঠন তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে যান৷ মূলত পেশার স্বীকৃতি পাওয়াই বড় দাবি তাদের৷ যৌনকর্মীর সন্তানদের সংগঠন ‘আমরা পদাতিক'-এর সভাপতি রতন দোলুইয়ের মতে, ‘‘বর্তমান সরকারের কাছ থেকে টাকা-পয়সা পেলেও নৈতিক সাপোর্ট কিছু পাইনি৷ শ্রমের মর্যাদা বা পেশার স্বীকৃতি দিতে কোনো রাজনৈতিক দলই এগিয়ে আসে না৷’’
বিশাখা বলেন, "একটা সময় ভিড় বাড়ানোর জন্য আমাদের মিছিলে নিয়ে যাওয়া হত৷ রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের কাজে ব্যবহার করে৷ তারপর ভোট মিটে গেলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়৷’’
ভোটার কার্ডে সমস্যা
অনেক যৌনকর্মীরই নেই ভোটার কার্ড৷ রাজনৈতিক কর্তারা সে নিয়ে উদাসীন থাকতেই পছন্দ করেন৷ কিন্তু এই ভোটের দিকে নেতাদের নজর নেই কেন? রতন দোলুই বলেন, ‘‘স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোই কাজ করতে ব্যস্ত৷ আর যৌনকর্মীদের কোনো নির্দিষ্ট এলাকা নেই৷ আজ এখানে, কাল ওখানে৷ তাই তাদের ভোট নিয়ে নেতারা মাথা ঘামান না৷’’
নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী অধ্যাপিকা শাশ্বতী ঘোষ বলেন, ‘‘এখানে ভোটার কার্ড অনেকেরই নেই৷ এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে ওঁরা শুধু যৌনকর্মী বলেই প্রশাসন বঞ্চনা করছে৷”
তবে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে ভোটার কার্ড পেয়েছেন এলাকার অনেকেই৷ গতকালই ১৫০-২০০ জনের মতো ভোটার কার্ড হাতে পেয়েছেন বলে জানান এক বাসিন্দা৷ রেশন কার্ড করানোর জন্যও কোনো রাজনৈতিক সাহায্য পাননি তাঁরা৷
বিধায়কের কাজে খুশি?
শ্যামপুকুর থানার জোড়াবাগান, রামবাগান, রবীন্দ্রসরণী, শেঠবাগান সব এলাকারই বিধায়ক ডঃ শশী পাঁজা বর্তমানে নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী৷ কিন্তু সোনাগাছির বাসিন্দাদের অভিযোগ, যৌনকর্মীদের সন্তানদের জীবনযাপনের মানোন্নয়নের জন্য যে সাহায্য দরকার সেটাও পাওয়া যায় না৷ তবে মাঝে মাঝে বিধায়ক তহবিল থেকে স্পোর্টস বা এ ধরনের কিছু অনুদান পাওয়া যায়৷ কিন্তু সোনাগাছির পরিবেশে ছোট ছোট মেয়েদের ভবিষৎ গড়তে যে আন্তরিক সাহায্য দরকার, তা এখনও অধরা৷ কাজল বসু বলেন, ‘‘শশী পাঁজা বা কাউন্সিলর কেউই কিছুই করেন না৷ পুজোর সময় শুধু বিধায়ক একবার এসে একটা শাড়ি আর একটু চাল দিয়েছিলেন৷ লকডাউনেও তিনি কিছুই করেননি৷” তাই ভোটবাক্সে গণতান্ত্রিক অধিকারে ‘নোটা'ই ভরসা? বিশাখা বলেন, "যে আমাদের স্বার্থ দেখবে, তাকেই ভোট দেব৷ তেমন না হলে নোটাই বেছে নেব৷’’
শঙ্কা ও ভয়
সকলেই ভোট দিতে চাইলেও ভোট দেওয়ার পরিবেশ নেই বলেই জানালেন একাধিক যৌনকর্মী৷ ভোটের আগে রাতের অন্ধকারে হুমকি বা ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়৷ এমন ভয়ের পরিবেশে অনেকেই নতি স্বীকার করে ভোট দিতে যান না৷ আবার তারা ভোট দিতে যাওয়ার আগে তাদের ভোট পড়ে যায় বাক্সে, এমন নজিরও মেলে৷
ভোট মিটলেও কি শান্তি আছে? নাগরিকত্ব আইন নিয়ে এখন অনেকেই শঙ্কিত৷ শিলচরে প্রায় দু'শ যৌনকর্মী নথি দেখাতে পারেননি৷ তাদের ঠাঁই হয়েছে আটক শিবিরে৷ তাই বিপদের আশঙ্কা, ভোট মিটলে নাগরিকত্ব আইন চালু হবে না তো?