অনেক স্বপ্নের, অনেক প্রথমের পদ্মা সেতু
এক দশক ধরে বহু আলোচনা, অসংখ্য সংবাদের জন্ম দিয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প৷ নানা বাধা আর চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে অবশেষে সেই সেতু দিয়ে পদ্মা পরাপারের স্বপ্ন হতে যাচ্ছে সত্যি৷ এই প্রকল্প নিয়ে কিছু তথ্য থাকছে ছবিঘরে৷
যেভাবে শুরু
পদ্মা সেতু প্রকল্পের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সেতু নির্মাণে প্রথম সম্ভাব্যতা যাচাই পরীক্ষা হয় ১৯৯৮-৯৯ সালে৷ দ্বিতীয় সম্ভাব্যতা পরীক্ষাটি হয়েছে ২০০৩-০৫ সালে৷ বিস্তারিত নকশা, ক্রয় পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয় ২০০৯ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে৷ ২০১২ সালের জুলাইয়ে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়৷ ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় নির্মাণকাজ৷
‘নিজস্ব অর্থায়ন’
শুরুতে বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা, আইডিবি এই প্রকল্পে অর্থায়নের কথা ছিল৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের৷ দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পরবর্তীতে তারা এই প্রকল্প থেকে সরে গেলে বাজেট থেকে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে সরকার সেতু নির্মাণ শুরু করে৷ শেষ পর্যন্ত খরচ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩৮৭ কোটি ডলার বা ত্রিশ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা৷ নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশের প্রথম কোন মেগা প্রকল্প৷
সবচেয়ে বড়
মূল সেতু দৈর্ঘ্যে ছয় দশমিক এক-পাঁচ কিলোমিটার, ভায়াডাক্ট তিন দশমিক এক-পাঁচ কিলোমিটার (সড়ক) ও ৫৩২ মি (রেল)৷ সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য ১২ দশমিক এক-দুই কিলোমিটার৷ মূল সেতু নির্মাণের দায়িত্বে ছিল চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পো. লি.৷ নদীশাসনের কাজ করেছে চীনের সিনোহাইড্রো কর্পো.৷ দুই প্রান্তের সংযোগ সড়ক তৈরি করেছে এএমএল-এইচসিএম জয়েন্ট ভেঞ্চার৷ বঙ্গবন্ধু সেতুকে পেছনে ফেলে এটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু৷
আধুনিক স্থাপত্য
খরস্রোতা পদ্মার উপর এই সেতু নির্মাণে আধুনিক স্থাপত্য কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে৷ প্রকল্প কর্মকর্তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, নদী তলদেশে মাটির ১২০-১২৭ মিটার গভীরে গিয়ে বসানো হয়েছে পদ্মা সেতুর পাইল৷ ‘ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বিয়ারিং’ এর সক্ষমতা ১০ হাজার টন, যার কারণে রিখটার স্কেলে নয় মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকার মতো সক্ষমতা রয়েছে সেতুটির৷
যা থাকছে
সেতুতে থাকছে চার লেনের সড়ক, ডুয়েল গেজ একমুখী রেল ট্র্যাক৷ মধ্যে ৪০ টি সহ মোট ৪২ টি স্প্যানের উপর দাঁড়িয়ে সেতুটি৷ সড়ক, রেলপথ ছাড়াও গ্যাস ট্রান্সমিশন লাখ, ফাইবার অপটিক ও টেলিফোন লাইন গেছে এর উপর দিয়ে৷ ছয় দশমিক এক-পাঁচ কিলোমিটার সেতুটি পার হতে লাগবে মাত্র ছয় মিনিট৷
খরচ উঠবে কবে
সরকারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা সেতুর টাকা সেতু কর্তৃপক্ষকে এক শতাংশ হার সুদে সরকারকে ফেরত দিতে হবে৷ সম্ভাব্যতা নিরীক্ষা অনুযায়ী, ২৪ থেকে ২৫ বছরে মধ্যে নির্মাণ ব্যয় উঠে আসবে৷ তবে এখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ১৬-১৭ বছরের মধ্যেই টাকা উঠে আসবে৷ এরইমধ্যে সেতু দিয়ে যানবাহন পার হওয়ার টোলও নির্ধারণ করেছে সরকার৷
অপেক্ষা যান চলাচলের
শুক্রবার উদ্বোধন হলেও পদ্মা সেতুতে সবার জন্য যান চলাচল শুরু হচ্ছে পরের দিন৷ ঢাকা থেকে যেসব গাড়ি শিমুলিয়া-বাংলাবাজার এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া হয়ে দক্ষিণের বিভিন্ন গন্তব্যে যায়, সেগুলো সেতু দিয়ে পদ্মা পার হতে পারবে৷ এমনকি ভারতের পশ্চিমাংশ থেকে পূর্বাংশে পণ্য পরিবহণেও ব্যবহৃত হবে এই সেতু৷ এডিবির ধারণা অনুযায়ী, শুরুর দিকে প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে প্রায় ২৪ হাজার যানবাহন চলাচল করবে৷ পরবর্তীতে তা আরও বাড়বে৷