অর্থের বিনিময়ে কাতার যেভাবে বন্ধু বাড়াচ্ছে
গত বেশ কয়েকবছর ধরে ‘নরম’ এক বিদেশ নীতির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক স্তরে বন্ধু গড়ছে কাতার৷ আর এজন্য ফ্যাশন, শিল্প, ক্রীড়া থেকে শুরু করে নানা খাতে লাখ লাখ কোটি টাকা ঢালছে দেশটি৷
কাতারে নাওমি কাম্পবেল
বিশ্বকাপ শুরুর কিছুদিন আগেই কাতারে বড় বড় ফ্যাশন ব্রান্ডের এক প্রদর্শনীতে হাজির ছিলেন সাবেক সুপারমডেল নাওমি কাম্পবেল৷ সেখানে ছিল ইটালির বিখ্যাত ব্র্যান্ড ভ্যালেন্টিনোও৷ ইভেন্টটি সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল৷ অনেকে যেটা খেয়াল করেননি তাহচ্ছে ভ্যালেন্টিনোর মালিক কিন্তু কাতার৷ ২০১২ সালে আর্থিক মন্দায় পড়া ব্র্যান্ডটি কিনে নিয়েছিল কাতারি ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড মেইহুলা৷
তদন্তের মুখে কাম্পবেলের প্রতিষ্ঠান
নাওমি কাম্পবেল কাতার গিয়েছিলেন এমার্জ নামে একটি ফ্যাশন চ্যারিটির উদ্বোধন করতে যেটি উদীয়মান ডিজাইনারদের নিয়ে কাজ করবে৷ ধারনা করা হয় এমার্জ হচ্ছে কাম্পবেলের আরেকটি সংস্থার শাখা যেটির অর্থের উৎস এবং খরচের ব্যাপক তারতম্য নিয়ে তদন্ত করছে ব্রিটিশ চ্যারিটি কমিশন৷ এক্ষেত্রে কাতারের হাত আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷
বিদেশে নানা খাতে বিনিয়োগ কাতারের
শুধু নাওমি কাম্পবেলের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক নয়, গত বেশ কয়েক বছরে ইউরোপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, এমনকি ফুটবল ক্লাবও কিনে নিয়েছে কাতার৷ এজন্য যখন যেখানে যত টাকা প্রয়োজন হয়েছে খরচ করেছে৷ বিনিয়োগও করেছে ইউরোপের বিভিন্ন গাড়ি নির্মাতা, ব্যাংক, বিমানবন্দরসহ নানা খাতে৷
প্রাকৃতিক গ্যাস বদলে দিয়েছে চিত্র
গত শতকের সত্তরের দশকে প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্রে আবিষ্কার হওয়ার পর ছোট্ট উপসাগরীয় দেশ কাতার রাতারাতি বিশ্বের অন্যতম গরীব দেশ থেকে ধনী দেশে পরিনত হয়৷ দেশটির ৩০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কাতারি৷ বাকিরা সবাই বিদেশি কর্মী৷ মূলত ২০০৯ সাল থেকে কাতার আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেকে শক্তিশীল করতে বিপুল বিনিয়োগ শুরু করে৷
কাতার কেন এটা করছে?
কারণ মূলত দুটো৷ প্রথমত কাতারের দুই প্রতিবেশী হচ্ছে শক্তিশালী এবং বড় রাষ্ট্র সৌদি আরব ও ইরান৷ তাদের সঙ্গে লড়ার মতো সামরিক ক্ষমতা কাতারের নেই৷ তবে আন্তর্জাতিক স্তরে শক্তিশালী বন্ধু থাকলে এক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাড়ে৷ দ্বিতীয়ত ভবিষ্যতে যখন গ্যাসের উপর নির্ভরশীলতা কমবে তখন এই বিনিয়োগ দিয়ে নিজেদের নিরাপদ রাখতে চায় দেশটি৷
অবৈধ নয়, তবে ঘাটতি স্বচ্ছতায়
কাতার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করে অবৈধ কিছু করছে না৷ আর বিদেশ নীতি শক্তিশালী করতে, বড় বড় রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধু গড়তে তদবির করাটাও এখন এক রীতিতে পরিনত হয়েছে৷ অনেক দেশই তা করছে৷ কিন্তু কাতারের ক্ষেত্রে জটিলতা হচ্ছে দেশটির এসব বিনিয়োগে স্বচ্ছতার ঘাটতি রয়েছে৷ নিজের দেশের নাগরিক বা সাংবাদিকদের এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানায় না দেশটি৷ বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার যেমন কম, তেমনি দুর্নীতি বেশি কাতারে৷
বিশ্বকাপের আয়োজক কাতার
সদ্য সমাপ্ত বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ হিসেবে সুনাম এবং দুর্নাম দুটোই কুড়িয়েছে কাতার৷ ধারনা করা হয় এই আয়োজনের পেছনে দুশো বিলিয়নের বেশি মার্কিন ডলার খরচ করেছে দেশটি, যদিও সঠিক হিসেব এখনো জানা যায়নি৷ বিশ্বকাপ দর্শকের হৃদয় কেড়ে নিলেও কাতারে শ্রমিকদের অপব্যবহার, আয়োজক হতে ঘুস প্রদানসহ নানা কারণে সমালোচিতও হয়েছে দেশটি৷