1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘অল্প কিছুদিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান আশা করতে পারছি না’

১২ জুন ২০১৭

রাজনৈতিক সমস্যা হঠাত্‍ সমাধান হতে পারে, আবার যুগ যুগ চলতেও পারে৷ এ আপ্তবাক্যটিকেই বেশি স্মরণযোগ্য মনে করেন অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত৷ তবে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, পানিবণ্টন চুক্তির দ্রুত সমাধান হবে এমনটি আশা করা কঠিন৷

https://p.dw.com/p/2eRkG
DW Bengali Videomagazin Onneshon 10 Moderatorin Debarati Guha und Ainun Nishat
ছবি: DW

ভারতের সঙ্গে পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে পানি বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘রাজনৈতিকভাবে সমাধানের দিকে খুব ধীরে ধীরে এগুচ্ছে৷ দীর্ঘদিন ধরে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির যে ভিত্তি ছিল সেটা বদলানোর দরকার ছিল, এখন সেটা বদলেছে৷ একটা জগদ্দল পাথর সরাতে অনেক সময় লাগে৷ শুরু হয়েছে, এখনও দীর্ঘ পথ পার হতে হবে৷''

ডয়চে ভেলে : পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে মূল সমস্যাটা কী?

আইনুন নিশাত : শুষ্ক মৌসুমে এই নদীগুলোতে পর্যাপ্ত পানি থাকে না, এটাই প্রধান সমস্যা৷

সমস্যাটি কি রাজনৈতিক, না এর পেছনে অন্য কিছু আছে?

প্রাকৃতিকভাবে শুকনো মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি থাকে না, সেটা দুই দেশের জন্যই৷ ভারতের জন্য যথোপযুক্ত পানি নেই আর বাংলাদেশের জন্য তো নেই-ই৷ এর সমাধান বের করতে হবে কারিগরিভাবে৷ বর্ষাকালে পর্যাপ্ত পানি আসে৷ দুই দেশের কারোই এতটা প্রয়োজন নেই৷ এই পানি ধরে রেখে কারিগরিভাবে শুকনো মৌসুমে পানির প্রবাহ বাড়াতে হবে৷ এতে বর্ষার পানি সমস্যার সমাধান হবে, শীতের মৌসুমেরও সমাধান হবে৷ এই কাজটি এমনভাবে করতে হবে যাতে সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়৷ প্রাকৃতিকভাবে এই কারণে বলছি যে, যে নদীতে একটা প্রবাহ তৈরি হয়, এতে ইকো সিস্টেম বিশেষ করে মাছের চলাচল কোনো ভাবেই বিঘ্নিত হয় না৷ এটার নজির পৃথিবীর বহু জায়গাতে আছে৷ বাংলাদেশ ও ভারতের বিশেষজ্ঞরা এর কারিগরি সমাধান দিতে সক্ষম৷ এটার জন্য প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন এবং এটা করতে গিয়ে প্রচুর পানি বিদ্যুৎ উত্‍পাদন হবে৷ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এটা অবশ্যই আকর্ষণীয় প্রকল্প হবে৷ কিন্তু এর ভিত্তি রচিত হতে হবে দুই দেশের রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে৷ 

Samir Dhaka Alap Interview Pof. Ainun Nishat 27.05.2017 - MP3-Stereo

তাদের এমনভাবে নির্দেশ দিতে হবে যাতে টেকনিক্যাল লোকগুলো দুই দেশের জন্য একটা গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করতে পারেন৷ এতদিন উজানের দেশ এবং ভাটির দেশের মধ্যে কোনো সহযোগিতা ছিল না৷ তিনটা দেশ যদি জড়িত হয় তাহলে রক্ষা নেই৷ কোনো জায়গাতে চারটা দেশও জড়িত আছে৷ যেমন ব্রহ্মপুত্রের ক্ষেত্রে৷ ইদানিং আমরা লক্ষ্য করছি, ভারত তার দ্বিপাক্ষিক পররাষ্ট্রনীতির যে ভিত্তি ছিল, সেখান থেকে সরে আসছে৷ অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ২০১১ সালে ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন৷ তার ভিত্তিতে অববাহিকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠতে পারে৷ অর্থাত্‍ সমাধানের জন্য যে ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন সেটার প্রাথমিক কাজ হয়েছে৷ এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, বাংলাদেশ- ভারত-ভুটানের মধ্যে অভিন্ন নদী ধরলা, দুধকুমারের ব্যাপারে কথা বলার জন্য ভারত আগ্রহী হচ্ছে৷

গঙ্গার ক্ষেত্রে কথা বলতে গেলে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে আলোচনা প্রয়োজন৷ তিস্তার সমাধান আনতে গেলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আলোচনা প্রয়োজন৷ এর জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম দুটো রাজ্যকে জড়াতে হবে৷ বাংলাদেশ তো আর সিকিমের সঙ্গে আলোচনা করতে পারে না৷ এখন সমস্যা কী, তার সমাধান কী সেটাও জানা আছে৷ রাজনৈতিকভাবে সেই সমাধানের দিকে খুব ধীরে ধীরে এগুনো হচ্ছে৷ দীর্ঘদিন ধরে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির যে ভিত্তি ছিল সেটা বদলানোর দরকার ছিল, সেটা বদলেছে৷

পানিবণ্টন চুক্তির প্রধান ইস্যু তিস্তা৷ শুধু তিস্তা কেন? আরো তো অনেক নদী আছে?

রাজনৈতিকভাবে প্রধান ইস্যু তিস্তা৷ কিন্তু আমি মনে করি, ৫৪টা নদী আছে, এর সবগুলোই গুরুত্বপূর্ণ৷ কুমিল্লার মানুষের কাছে গোমতি গুরুত্বপূর্ণ৷ মৌলভীবাজারের লোকের কাছে মনু গুরুত্বপূর্ণ, সুনামগঞ্জের লোকের কাছে সুরমা গুরুত্বপূর্ণ৷ আর রংপুরের লোকের কাছে তিস্তা গুরুত্বপূর্ণ৷ কাজেই এই গুরুত্বটা আপনারা কিভাবে দেন, এটা আমি বুঝি না৷ তবে এটা বলতে পারেন, দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক তিক্ততা যেটা হয়েছে, সেটা তিস্তাকে নিয়ে৷ তবে তিস্তার সমাধান হলেই যে বাকি ৫৪টা নদীর সমাধান হয়ে যাবে– এটা বলা যাবে না৷ আসলে সবগুলো নদীর বিষয়েই সমাধান প্রয়োজন৷

তিস্তা চুক্তি হলে রাজনৈতিক লাভটা বেশি, নাকি  অর্থনৈতিক লাভটা বেশি হবে?

প্রথম কথা হচ্ছে, তিস্তা নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, সেটা অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি৷ অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি মানে, এটা ফাইনাল চুক্তি না৷ একটু আগে আমি যেটা বলছিলাম, তিস্তার ক্ষেত্রে যা, গঙ্গা-ধরলা-গোমতি-দুধকুমার-মনুর ক্ষেত্রেও তাই৷ এগুলোর কোনোটিতেই শুকনো মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি থাকে না৷ এখন তিস্তার ক্ষেত্রে যে অ্যাপ্রোচটা গ্রহণ করা হচ্ছে, শুকনো মৌসুমে যতটুকু পানি আছে, তা দুই দেশ বণ্টন করে নেবে৷ শুকনো মৌসুমে সেখানে পানি থাকে ৬ হাজার কিউসেক৷ তাতে ভারতের চাহিদা ১৬ হাজার কিউসেক, আর বাংলাদেশের চাহিদা ৮ হাজার কিউসেক৷ কাজেই ৬ হাজার কিউসেট পানি দিয়ে ২৪ হাজার কিউসেক পানির চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়৷ তাই অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি হিসেবে ঠিক আছে, দুই দেশেরই যাতে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়, ভারত একতরফাভাবে পানি নেবে না৷ এই ‘প্রিন্সিপাল' প্রতিষ্ঠিত হলে তারপরে দুই দেশ মিলে সারা বছরের পানির সমস্যার সমাধান করতে পারবে৷ আগে যেটা বলছিলাম, ওই ফ্রেমওয়ার্কে ফেললে দেখা যাবে, তিস্তাতে বর্ষাকালে ৩ থেকে ৪ লাখ কিউসেক পানি থাকে৷ তার থেকে কিছু পানি জলাধারের মাধ্যমে সংরক্ষণ করে রাখলে শুকনো মৌসুমে স্বাভাকিবভাবেই ২৫ হাজার কিউসেট পানি উত্‍পাদন করা যাবে৷ তাতে প্রচুর পানি-বিদ্যুত্‍ উত্‍পাদিত হবে৷ এই পানি বিদ্যুতের মাধ্যমেই এই প্রকল্পের অর্থনৈতিক যথার্থতা প্রমাণিত হবে৷ এই কাজ করতে গেলে সামাজিক বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে, অর্থাত্‍, জলাধারের জন্য প্রচুর জমির প্রয়োজন হবে৷ সেটার সমাধান করতে হবে এবং ইকোলোজিক্যালি অর্থাত্‍ মাছের চলাচলের পথে যেন কোন ধরণের বাধার সৃষ্টি না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে৷

সম্প্রতি ফারাক্কা পানিবণ্টন নিয়েও কথা উঠেছে৷ নতুন করে এই চুক্তিটির সংশোধন নিয়েও আলোচনা হচ্ছে৷ ভারতের পক্ষ থেকে চুক্তির সুফল নিয়ে প্রশ্ন তুলছে...

আমি আগেই বলেছি, শুকনো মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি থাকে না, সেটা দুই দেশের জন্যই৷ কাজেই এক প্লেট খাবার যদি তিনজন মিলে খান, তাহলে কারো পেটই ভরবে না৷ কাজেই কারো সন্তুষ্টি আসবে না৷ প্রথমত যেটুকু এসেছে সেটা ভাগাভাগি করা৷ দ্বিতীয়ত এই ভাগ যেহেতু কারো জন্যই পর্যাপ্ত নয়, তাই একটা ব্যবস্থাপনায় আসতে হবে৷ আর সেটা করতে গেলে তৃতীয় দেশ নেপালকে জড়াতে হবে৷ আর তৃতীয় অংশ হলো সকল অভিন্ন নদীর ক্ষেত্রে একটা ব্যবস্থাপনায় যেতে হবে৷ আমিও বলবো, গঙ্গা চুক্তির সঠিক, সুচারু এবং চুক্তি যে লক্ষে করা হয়েছিল, তা পূরণের জন্য কাজ করা হোক এবং এটা করতে গেলে এই চুক্তিটাকে অবশ্যই ঢেলে সাজাতে হবে৷

আপনি বলছিলেন, আমরা ধীরে ধীরে এগুচ্ছি৷ এই এগুনো পরিণতি পেতে কেমন সময় লাগতে পারে?

আমি মোটেই আশাবাদী নই৷ কারণ, একটা জগদ্দল পাথর সরাতে অনেক সময় লাগে৷ যেখান থেকে সরানো হবে, যাদের ভূমি থেকে সরানো হবে, এখন তারা স্বীকার করছে– এটা সরানো প্রয়োজন৷ এটা সরানোর জন্য প্রচুর শক্তির প্রয়োজন৷ প্রচুর লোকবল প্রয়োজন, এক্সপার্ট প্রয়োজন৷ প্রচুর অর্থ প্রয়োজন এবং এটা বহুলাংশে প্রতিবেশী দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জটিলতার বলি হতে পারে৷ শুরু হয়েছে, এখনও দীর্ঘ পথ পার হতে হবে৷ ভারতের রাজনৈতিক নেতারা কিভাবে এটাকে হ্যান্ডেল করে, সেটা দেখতে হবে৷ বিষয়টা অত্যন্ত জটিল৷ এটাতে রাজনীতিটা সবচেয়ে বেশি প্রকট থাকে৷ রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হঠাত্‍ করেই হয়ে যেতে পারে, আবার যুগ যুগ ধরে চলতে পারে৷ এটার সমাধানের সঠিক রাস্তায় চলতে ভারত আগ্রহী ছিল না, ২০১১ সাল থেকে আগ্রহী হয়েছে৷ কাজেই অল্প কিছুদিনের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হবে এটা আশা করা (উচিত, এটা) আমার অভিজ্ঞতা তা বলে না৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য