অসচেতনতায় মৃত্যু
বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিচার্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাদিউজ্জামানের মতে, নৌ ও সড়কপথে দুর্ঘটনার ৬০ ভাগই হয় যাত্রীসহ সবপক্ষের অসচেতনতা ও অবহেলার কারণে৷ ছবিঘরে দেখুন কিছু উদাহরণ৷
সড়ক ও নৌপথে মৃত্যুর সংখ্যা ও কারণ
বাংলাদেশে গত দশ বছরে নৌ দুর্ঘটনায় প্রায় দেড় হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে৷ আর সড়কপথে দুর্ঘটনায় বছরে গড়ে ছয় হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়৷ বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিচার্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হাদিউজ্জামানের মতে, নৌ ও সড়কপথে দুর্ঘটনার ৬০ ভাগই হয় যাত্রীসহ সবপক্ষের অসচেতনতা ও অবহেলার কারণে৷
অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে ওঠার পরিণতি
২০০৩ সালের ৮ জুলাই অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামালের কারণে এমভি নাসরিন-১ লঞ্চের তলা ফেটে ডুবে যায়৷ এতে সরকারি হিসেবে ১১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয় এবং ১৯৯ জনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ তবে বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা অনেক বেশি (কারও মতে আটশর অধিক) বলে দাবি করা হয়৷ (ছবিটি প্রতীকী)
নৌকা উলটে ৬৯ জনের মৃত্যু
পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীতে গত রোববার নৌকাডুবে ৬৯ জন মারা যান৷ যাত্রীরা মহালয়া উপলক্ষে বোদা উপজেলার বরদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন৷ নৌকায় সর্বোচ্চ ২০ জনের ধারণক্ষমতা থাকলেও উঠেছিলেন ১৫০ জনের বেশি৷ তখন সেখানে পুলিশ ছিল৷ ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছিলেন৷ যারা তীরে ছিলেন তারাও সাবধান করছিলেন৷ পুলিশও দুই-একবার তাদের নিবৃত্ত করতে চেষ্টা করেছে৷ কিন্তু তবুও নৌকাটি ছেড়ে যায় এবং মাঝ নদীতে ডুবে যায়৷
পিনাক-৬ লঞ্চ দুর্ঘটনা
ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের কারণে ২০১৪ সালের ৪ আগস্ট মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি থেকে মাওয়া ঘাটে যাওয়ার পথে এমএল পিনাক-৬ নামের একটি লঞ্চ ডুবে যায়৷ ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল৷ নিখোঁজ ৬৪ যাত্রীর সন্ধান মেলেনি৷ পরে লঞ্চটি তোলা সম্ভব হয়নি, এবং এর ধ্বংসাবশেষও খুঁজে পাওয়া যায়নি৷
এমভি কোকো লঞ্চ দুর্ঘটনা
২০০৯ সালের ২৬ নভেম্বর ভোলার লালমোহনের নাজিরপুরে এমভি কোকো-৪ লঞ্চ ডুবে ৮১ জন যাত্রী প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে৷
রেলক্রসিংয়ে মৃত্যু
গত আড়াই বছরে রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় ২১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে গত জুলাইতে জানায় ‘রোড সেফটি ফাউন্ডেশন৷’ দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হিসেবে যানবাহনের চালক ও সড়ক ব্যবহারকারীদের মধ্যে অসচেতনতা ও অধৈর্য মানসিকতাকে দায়ী করেছে তারা৷ বাকি কারণগুলো হচ্ছে রেলক্রসিংয়ে গেটম্যান ও গেটবারের ব্যবস্থা না থাকা, গেটম্যানদের দায়িত্বে অবহেলা, লোকবলের সংকট ও দায়ীদের উপযুক্ত শাস্তি না হওয়া ইত্যাদি৷
পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
ইউনিসেফ বলছে বাংলাদেশে প্রতিবছর পানিতে ডুবে ১৪ হাজারের বেশি শিশু মারা যায়, যা ৫ বছরের কমবয়সি শিশুদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে বলেছে, তথ্যপ্রমাণ বলে, খুব সহজেই পানিতে ডুবে যাওয়া রোধ করা যায়৷ এজন্য কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে তারা৷ এর মধ্যে একটি পরিবার ও কমিউনিটির মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো৷
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা: বেপরোয়া গতি, হেলমেট না থাকা
প্রথম আলো বলছে, এবারের রোজার ঈদের ছুটির সময় সড়কে যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় ৪৮ শতাংশই মোটরসাইকেলের চালক ও আরোহী৷ এসব দুর্ঘটনার কারণ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই মোটরসাইকেলচালক ছিলেন বেপরোয়া৷ একটি মোটরসাইকেলে চালকের বাইরে সর্বোচ্চ একজন আরোহী তোলার নিয়ম থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি৷ চালক ও আরোহীদের বেশির ভাগেরই হেলমেট ছিল না৷