অ্যামস্টারডম কেন পর্যটকদের পছন্দ
নেদারল্যান্ডসের রাজধানী অ্যামস্টারডম৷ বুক চিরে বয়ে যাওয়া খাল, সাইকেলের আধিক্য, রেনেসাঁ যুগের শিল্প যেমন পর্যটকদের টানে, তেমনি যৌনতার জাদুঘর, ঐতিহাসিক পতিতাপল্লী ও অবাধ গাঁজা শহরটিকে আলাদা করে চেনায়৷
খালের শহর
১০০ কিলোমিটার বিস্তৃত খাল প্রবাহিত হচ্ছে গোটা অ্যামস্টারডম শহরের বুক চিরে৷ ১৭ শতকে এই খাল কেন্দ্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে৷ সেসময় অ্যামস্টারডম ছিল বিশ্বের অন্যতম ধনী শহর আর ব্যস্ততম বন্দর নগরী৷ বর্তমানে এই খালগুলোই সেখানকার মানুষের নিত্য যাতায়তের মাধ্যম আর পর্যটকদের ভ্রমণ আকর্ষণ৷
দ্বিচক্রযান
নৌকাভ্রমণ ভালো না লাগলে স্থলে বাইসাইকেল হতে পারে সবচেয়ে ভাল পছন্দ৷ ৮ লাখের বেশি সাইকেলের শহর অ্যামস্টারডমে মানুষের চেয়ে এই দ্বিচক্রযানের সংখ্যাই বেশি৷ সেখানকার বাসিন্দারাই শুধু নন শহরটিতে যারা ঘুরতে যান সাইকেলে চেপে অ্যামস্টারডম ঘুরে দেখার সুযোগ হাতছাড়া করেন না তাদের অনেকেও৷
শিল্প সম্ভার
শিল্পপ্রেমীদের কাছেও আকর্ষণীয় শহর অ্যামস্টারডম৷ রেমব্রান্ট, হালস, ফেরমিয়ারের মতো জগদ্বিখ্যাত শিল্পীদের শিল্পসম্ভার নিয়ে আছে রাইক্স মুজিউম বা মিউজিয়াম৷ রেমব্রান্টের ‘দ্য নাইট ওয়াচ’ চিত্রকর্মটি দেখতে হলেও আপনাকে এখানে আসতে হবে৷
সূর্যমুখীর ধাঁধা
নেদারল্যান্ডসের কথা বললে শিল্প প্রেমীদের কাছে অবশ্য সবার আগে ভিনসেন্ট ফান গখকে মনে পড়বে৷ তাঁর ৭০০ পেইন্টিং আর ড্রয়িং নিয়ে আছে ফান গখ জাদুঘর৷ ২০১৫ সালে জাদুঘরটির চারপাশে তৈরি করা হয়েছে সূর্যমুখীর মেইজ বা গোলকধাঁধা৷ কেন সূর্যমুখী, সেটি ঠিকই জানেন ফান গখ প্রেমীরা৷
সেই মেয়েটি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ২ বছর একটি বাড়িতে বন্দী থেকে মৃত্যু হয় মেয়েটির৷ সেই সময়কার কথা সে লিখে রেখেছিল হৃদয়স্পর্শী বর্ণনায় ডায়রির পাতায়৷ যা পরে অনুবাদ হয়েছে ৬০টি ভাষায়৷ আনা ফ্রাংক নামের সেই মেয়েটি লুকিয়ে ছিলো এই বাড়িরই এক চিলেকোঠায়৷ যা এখন একটি জাদুঘর৷
ডাচ উৎসব
ইতিহাস, শিল্প আর চোখ জুড়ানো স্থাপত্য, সব মিলিয়ে অ্যামস্টারডম রঙীন সব মুহূর্ত কাটানোর জন্য অসাধারণ এক শহর৷ আর কোনো উৎসবের সময় যদি সেখানে গিয়ে হাজির হন, তাহলে তো কথাই নেই৷ যেমন ৫ মে নেদারল্যান্ডসের স্বাধীনতা দিবসের দিনে৷ গোটা শহর, তার খাল, পথ ঘাট সবই যেন প্রাণপ্রাচুর্যে ভরে ওঠে৷
লাল বাতির নগরী
নগরীর ভেতের বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ যৌন পল্লীটি অ্যামস্টারডমের ঐতিহাসিক খ্যাতিকে কিছুটা প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে৷ তবে এটি এখন অনেক সমাজ গবেষকের কাছেও প্রিয় গন্তব্য৷ কেননা সেখানে আছে যৌনতার ইতিহাস আর সংস্কৃতি নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন যৌন জাদুঘর ভেনুসটেম্পেল৷ আছে পতিতাবৃত্তি নিয়ে বিশ্বের প্রথম জাদুঘরও৷
গাঁজায় বুদ
অ্যামস্টারডমের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি আর উদারতার কিছু দিক অনেকের ভাল নাও লাগতে পারে৷ অ্যামস্টারডম বিখ্যাত গাঁজা খাওয়ার অনুমোদন দেয়ার কারণেও৷ গাঁজা সেবনে কোনো বাধা নেই এই শহরে৷ তাতে পর্যটকরা চান বা না চান বিশেষ এই দ্রব্যটির ধোঁয়ার ঘ্রাণ নাকে আসতেই পারে৷ আবার অনেকে এই টানেও শহরটিতে বারবার ছুটে আসে৷
আধুনিক স্থাপত্য
অ্যামস্টারডমের বাড়ি ঘরের নকশায় বরাবরই ঐতিহ্যের ছোঁয়া থাকে৷ কিন্তু তাই বলে আধুনিক স্থাপত্য বিমুখও তারা নয়৷ রেনেসাঁ যুগের বিপরীত ধর্মী এমন চোখ ধাধানো নকশার ভবনও তাই দেখা মিলবে শহরের পথে পথে৷