আবু ধাবিতে বাজপাখির হাসপাতাল
শারীরিক, মানসিক নানা রোগের জন্য নিয়মিতই আমাদের হাসপাতালে যেতে হয়৷ পশুপাখির জন্যও আছে চিকিৎসালয়৷ কিন্তু শুধু বাজপাখির জন্য একটা আস্ত হাসপাতাল! হাসপাতালটি অবস্থিত আরব আমিরাতের আবু ধাবিতে৷
আবু ধাবির বাজপাখি হাসপাতাল
হাসপাতালটিতে ঢোকার পথে আগতদের স্বাগত জানায় বিশাল আকারের এক বাজপাখির প্রতিকৃতি৷ এই ভবনটি যে শিকারি পাখিটির নিরাপদ আশ্রয়স্থল, তা স্পষ্ট হয় শুরুতেই৷
বিশ্রাম কক্ষ
হাসপাতালটিতে প্রতিনিয়ত ভিড় লেগেই থাকে৷ মানুষ না হতে পারে, তাই বলে চিকিৎসা নিতে এসে অপেক্ষা করার ব্যবস্থা তো বাজপাখির জন্যও থাকা উচিত, তাই না? পাখিদের প্রত্যেকের জন্য তাই ২০ সেন্টিমিটার উঁচু কাঠের খুঁটি বরাদ্দ৷ প্রতিটি খুঁটি ঢেকে দেয়া হয়েছে কৃত্রিম ঘাস দিয়ে৷ তবে শ্যেন দৃষ্টি নিয়ে যাতে একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে না পড়ে, সেজন্য সবার চোখ ঢেকে দেয়া হয় চামড়া দিয়ে তৈরি ঢাকনা দিয়ে৷
বেড়েই চলেছে ভিড়
প্রতি বছর ১১ হাজারেরও বেশি বাজপাখির চিকিৎসা করানো হয় এই হাসপাতালে৷ ১৯৯ সালে চালুর পর থেকে হাসপাতালটি মোটামুটি ৭৫ হাজার বাজপাখিকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছে৷
কে সেই ডাক্তার?
আমিরাতিরা হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসককে ডাকে ‘ডক্টরা’ নামে৷ ৪৯ বছরের জার্মান ডাক্তার মার্গিট ম্যুলার আবু ধাবির এই হাসপাতালটি পরিচালনা করছেন ২০০১ সাল থেকে৷ বাজপাখির এই বিশেষজ্ঞের নাম এরই মধ্যে আরব সংযুক্ত আমিরাতের সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে৷ অভিজ্ঞতা এবং কর্মদক্ষতার দিক দিয়ে এই ক্ষেত্রে বিশ্বে নেতৃস্থানীয়৷
বাজের জন্য সবকিছু
একজন মানুষের জন্য যা যা দরকার, তার সবই আছে এই হাসপাতালে৷ একটি অপারেশন থিয়েটার, ছোঁয়াচে রোগের জন্য কোয়ারেন্টাইন রুম, পরীক্ষাগার, এক্সরে রুম, এমনকি একটি নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রও আছে হাসপাতালটিতে৷
খুদে রোগির জন্য খুদে মেশিন
হাসপাতালের মেশিনগুলো মূলত এসেছে একটি শিশু হাসপাতাল থেকে৷ একটি ছোট শিশুর জন্য যে আকারের মেশিন দরকার, একটি বাজপাখিরও সেই আকারের মেশিনেই চিকিৎসা করা যায়৷ প্রি-ম্যাচিওর শিশুদের জন্য যে ইনকিউবেটর ব্যবহার করা হয়, বাজপাখিদের ক্ষেত্রে তা ব্যবহার করা হয় নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে৷
নিয়মিত চেক-আপ
শুধু অসুখ হলে নয়, আবু ধাবিতে বাজপাখির অভিজাত মালিকেরা তাদের পোষা প্রাণিটির নিয়মিত চেক-আপ করাতেও এই হাসপাতালে আসেন৷ রক্ত পরীক্ষা এই নিয়মিত চেক-আপের অংশ৷ এছাড়াও ভাঙা পা এবং পাঁজর নিয়েও আসেন অনেকে৷ ভাঙা পালক, চামড়ায় ক্ষত এবং সংক্রমণও দেখা যায়৷ তবে শুধু আরব আমিরাত নয়, ১৬ দেশের ১০৭ বাজপাখির মালিক তাদের পোষা প্রাণিকে এই হাসপাতালেই চিকিৎসা করান৷
পাখির অস্ত্রোপচার
কোন কোন ক্ষেত্রে ওষুধ বা ব্যান্ডেজেই শেষ হয় না চিকিৎসা৷ প্রয়োজন হয় শল্যচিকিৎসার৷ বাজপাখির অপারেশনে জন্য অবশ্য কার্পেট কাটার বা স্যান্ডিং মেশিনের মতো সাধারণ যন্ত্রপাতিই যথেষ্ট৷
কৃত্রিম পালক
পালক ভেঙে গেলে বা পড়ে গেলে যাতে উড়তে সমস্যা না হয়, আছে সে ব্যবস্থাও৷ বিভিন আকার এবং রংয়ের পালক সাজিয়ে রাখা আছে হাসপাতালের স্টোর রুমে৷ এই পালক আঠা দিয়ে লাগিয়ে দেয়া হয় মূল পালকের জায়গায়৷ একদিন পরে অবশ্য প্রাকৃতিকভাবেই নতুন পালক পায় বাজপাখি৷
জার্মানি থেকে আমিরাত
মার্গিট ম্যুলারের জন্ম জার্মানির উল্ম শহরে৷ জার্মানিতেই তিনি পশুচিকিৎসক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন৷ তাঁর গবেষণা ছিলো বাজপাখির পায়ের রোগ নিয়ে৷ এরপর ব্যবহারিক প্রশিক্ষণে আবু ধাবি যান তিনি৷ তখন থেকেই চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে তার নাম৷
খরুচে চিকিৎসা
বাজপাখি আমিরাতিদের বেশ প্রিয় পোষা প্রাণি৷ এদের সুস্থ রাখতে তাই প্রচুর খরচ করতেও তাঁরা পিছ পা হন না৷ যারা বাজপাখি লালনপালন করেন, তাদের এ বাবদ প্রতি মাসেই ৩০০-৪০০ ইউরো রাখতে হয় খরচের খাতায়৷ বাজপাখির একটি অ্যান্ডোস্কোপির জন্য খরচ হয় প্রায় ৭০ ইউরো (৮২ ডলার)৷ বড় অপারেশনের ক্ষেত্রে স্বভাবতই খরচ আরো বেশি৷
পাসপোর্ট, প্লিজ
হয়তো অনেকেই জানেন না, আমিরাতে বাজপাখিরও আছে নিজেদের পাসপোর্ট৷ জন্মতারিখ, মালিক এবং ১৩ ডিজিটের যে মাইক্রোচিপটি বাজের গলায় লাগানো আছে সেটির নম্বরও থাকে এই পাসপোর্টে৷ বাজপাখির চেহারা দিনদিন বদলায়, তাই এই পাসপোর্টে বাজপাখির কোন ছবি থাকে না৷
পর্যটন আকর্ষণ
২০০৭ সাল থেকে দর্শণার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে হাসপাতালটি৷ উপসাগরীয় দেশগুলোতে বাজপাখি কেন এতো জনপ্রিয়, তা দর্শণার্থীদের সামনে তুলে ধরতে এখানে একটি জাদুঘরও স্থাপন করা হয়েছে৷ বর্তমানে আবু ধাবির অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে হাসপাতালটি৷