1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আরজি কর নিয়ে সিবিআই তদন্তে দেরি হচ্ছে কেন?

২৯ আগস্ট ২০২৪

সিবিআই আরজি কর মামলার তদন্তভার হাতে নেয়ার পর দুই সপ্তাহ হয়ে গেছে। এখনো সেই একজনই গ্রেপ্তার। তদন্তে দেরি হচ্ছে কেন?

https://p.dw.com/p/4k3Pk
আরজি করে সিবিআই কর্মকর্তারা।
আরজি করে সিবিআই কর্মকর্তারা তদন্তের কাজ করছেন। ছবি: Satyajit Shaw/DW

তরুণী চিকিৎসকে ধর্ষণ ও খুনের পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে। এরপর কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছে সিবিআই। 

সিবিআই তদন্তে সমস্যা

আরজি করের যে সেমিনার রুমে চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়েছিল সেখানে কোনো সিসিটিভি নেই, এই ঘটনার কোনো প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া যায়নি বলে তদন্তকারীরা দাবি করছেন। সেক্ষেত্রে ঘটনাস্থলের সাক্ষ্যপ্রমাণ ও ফরেনসিক পরীক্ষা এই মামলার রহস্য ভেদ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু সিবিআই দাবি করছে, অকুস্থল আগের থেকে অনেক বদলে গিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানিতে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এমনটাই জানিয়েছেন। যদিও রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল দাবি করেন, দেহ উদ্ধারের পর সুরতহাল ও ময়না তদন্তের ভিডিওগ্রাফি করা হয়েছে। পুলিশ এলাকা ঘিরে রেখেছিল প্রমাণের সুরক্ষার জন্য।

যদিও প্রমাণের অভাবে কেন্দ্রীয় সংস্থা একাধিক মূল প্রশ্নের উত্তর এখনো খুঁজে পাচ্ছে না বলে সূত্রের খবর। চিকিৎসককে সেমিনার রুমে খুন করা হয়, নাকি অন্য কোথাও কুকীর্তি ঘটিয়ে দেহ সেখানে রেখে দেয়া হয়েছিল? এই ঘটনায় ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় কি একাই অপরাধ ঘটিয়েছে, নাকি তার সঙ্গে একাধিক ব্যক্তি ছিল? এই প্রশ্নেরও উত্তর পাওয়া যাচ্ছে না।

সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ, কয়েকজন জুনিয়র চিকিৎসক, কলকাতা পুলিশের আধিকারিক থেকে সিভিক ভলান্টিয়ার কিংবা সাফাইকর্মী, এমন প্রায় শখানেক মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরও তদন্তকারীদের কাছে ছবিটা স্পষ্ট নয় বলে সূত্রের দাবি। সে কারণে তদন্ত কি শ্লথ হয়ে পড়ছে?

সাবেক পুলিশকর্তা ড. নজরুল ইসলাম ডিডাব্লিউকে বলেন, "সিবিআইয়ের দেরি হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। সিবিআই তৎক্ষণাৎ এই কেস হাতে পায়নি। তখন যারা তদন্ত করছিলেন, অর্থাৎ কলকাতা পুলিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মিলিত হয়ে কেসটা ধামাচাপা দিতে চাইছিলেন। তাতে অনেক প্রমাণ লোপাট হয়েছে। বাকি যে প্রমাণ আছে সেগুলো থেকে রহস্য উদঘাটন করতে সময় লাগাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।"

আর এক সাবেক পুলিশকর্তা সন্ধি মুখোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেন, "পশ্চিমবঙ্গেরআইনের শাসন অত্যন্ত দুর্বল। সমাজবিরোধীদের যেভাবে রাজনৈতিক দলগুলি আশ্রয় দিচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষ সাক্ষী দিতে ভয় পায়। ফলে দ্রুত তদন্ত করতে গেলে সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসনের যে সহযোগিতা দরকার , সেটা সিবিআই পাচ্ছে না।"

প্রমাণ লোপাটের শঙ্কা

চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর থেকেই বিভিন্ন শিবির প্রমাণ লোপাটের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে যেমন জুনিয়র চিকিৎসকরা রয়েছেন, তেমনই আছেন বিরোধী দলের নেতারা। তাদের দাবি, শাসক শিবিরের বড় নেতাদের যোগ রয়েছে এই ঘটনার সঙ্গে। তাদের আড়াল করতে প্রমাণ লোপাট করা হয়েছে।

দুদিন আগে সমাজ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। গণমাধ্যমে প্রচারিত সেই ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর সেমিনার রুমে প্রচুর মানুষের ভিড়। সেখানে আরজিকর হাসপাতালে বাইরের কেউ কেউ আছেন। এতে প্রমাণ লোপাটের আশঙ্কা জোরালো হয়েছে। তবে এই ভিডিওর সত্যতা ডিডাব্লিউর যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

পুলিশের দাবি, ওই ঘরের বেশিরভাগ অংশই পুলিশ কর্ডন করে রেখেছিল। ফলে প্রমাণ নষ্ট হওয়ার ভয় নেই। যে ভিডিও সামনে এসেছে, সেটি কর্ডনের বাইরে সেমিনার রুমের বাকি অংশের। কিন্তু ওই সেমিনার রুমে ঢোকা ও বেরোনোর দরজা ছিল একটি। সেটি দিয়ে এত মানুষ যাতায়াত করলে প্রমাণ কি অটুট থাকে?

বৃহস্পতিবার সমাজ মাধ্যমে সিবিআইয়ের সাবেক যুগ্ম অধিকর্তা উপেন বিশ্বাস লেখেন, "তদন্তের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল ঘটনাস্থল সুরক্ষিত করা। এখানে কলকাতা পুলিশ বলছে, তারা ৫১ ফুট ঘটনাস্থলের ৪০ ফুট সুরক্ষিত করেছে। ১১ ফুট ছেড়ে দিয়েছে। অবাক হতে হয়। যে স্থানে অপরাধ হয়েছে, তার সমগ্র ঘরটাই সুরক্ষিত করতে হবে। তা না হলে সর্বনাশ হবে তদন্তের। যে ১১ ফুট ছেড়ে দেয়া হয়েছে, সেখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকবে না, এ কথা কে বলতে পারে?"

সন্ধি মুখোপাধ্যায়ের মতে, "সিবিআই-ও একটা পুলিশ এজেন্সি। তাদের কোনো ঐশ্বরিক শক্তি নেই। বারবার প্রমাণ লোপাট করা, আরজি করের কোনো কর্মীর সাক্ষ্য দিতে এগিয়ে না আসার জন্য সিবিআই আধিকারিকদের সময় লাগছে।"

আর জি করের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাদের কেন্দ্রীয় সংস্থা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, তাদের বয়ান বিভ্রান্তি বাড়াচ্ছে বলে সিবিআই সূত্রের দাবি। রহস্য ভেদ করতে একসঙ্গে সাত জনের পলিগ্রাফ টেস্ট করা হচ্ছে, যা নজিরবিহীন। এর মধ্যে ধৃত ছাড়াও রয়েছেন সাবেক অধ্যক্ষ,  চারজন জুনিয়র চিকিৎসক, একজন সিভিক ভলান্টিয়ার।

সিবিআই-এর কোনো ঐশ্বরিক শক্তি নেই: সন্ধি মুখোপাধ্যায়

ফরেনসিক ভরসা

অকুস্থল থেকে মেলা সাক্ষ্যপ্রমাণ যেখানে স্পষ্ট নয়, সেক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার রিপোর্ট খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

চিকিৎসকের দেহের ময়নাতদন্ত থেকে যে বিষয়গুলি সামনে এসেছে, তার সঙ্গে সন্দেহভাজনদের নমুনা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। তাতে বোঝা যাবে, তরুণী গণধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন কিনা। যদি একাধিক ব্যক্তি এই কান্ড ঘটিয়ে থাকে, তাহলে খুনিদের চিহ্নিত করতে সুবিধা হবে।

ফরেনসিক ল্যাবরেটরি থেকে পরীক্ষার নমুনা না আসা পর্যন্ত ধোঁয়াশা কাটবে বলে মনে করেন না বিশেষজ্ঞরা। কেন্দ্রীয় সংস্থা দ্রুত পরীক্ষার রিপোর্ট দেয়ার আবেদন জানিয়েছে ফরেনসিকের কাছে।

ধর্ষণ ও খুনের পাশাপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও খতিয়ে দেখছে সিবিআই। বৃহস্পতিবার তদন্তকারীদের একটি দল আরজিকর হাসপাতালে যায়। তারা ফরেনসিক বিভাগের মর্গ সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়। অভিযোগ, সন্দীপ দায়িত্বে থাকার সময় দেহ পাচার করা হয়েছিল।

সন্দীপকে নিয়মিত তলব করা সত্ত্বেও কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। ড. ইসলাম বলেন, "সন্দীপ ঘোষ যদি একই রকম কথা বলতেন, তাহলে এতবার ডাকতে হতো না। তার কথাবার্তায় মিল থাকছে না বলেই এতবার ডাকতে হচ্ছে। আর যারা সত্যিকার তদন্ত করে, লোক দেখানোর জন্য তারা গ্রেপ্তার কেন করবে? তথ্যপ্রমাণ পেলে করবে।"

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷