ইউরোপে মসজিদের ছবির অভিনব সংগ্রহ
৩০ মার্চ ২০২৩প্রাচ্যদেশীয় অলংকার, ক্যালিগ্রাফি ও জমকালো ঝাড়বাতি হোক, বা কোপেনহেগেনের প্রধান মসজিদের স্থাপত্য ও নান্দনিকতা – এমন সব স্থাপনা জার্মান-ডেনিশ আলোকচিত্রী একহার্ড আহমেদ ক্রাউসেন-কে মুগ্ধ করে৷ শুধু তাই নয়, সামগ্রিকভাবে তাঁর কাছে মসজিদের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে৷ একহার্ড বলেন, ‘‘মসজিদের মধ্যে শান্ত পরিবেশ আমাকে মুগ্ধ করে৷ মানুষ সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ক্যালিগ্রাফি পড়তে পারেন, অন্যান্য মুসলিমদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন৷ অবশ্যই নামাজ পড়া তো যায়ই৷ শান্তিতে পরিবেশও উপভোগ করা যায়৷''
ফটোগ্রাফার হিসেবে তিনি অনেক বছর ধরে ইউরোপের মসজিদ ও ইসলামি স্থাপত্য নথিভুক্ত করে চলেছেন৷ জার্মানি, ইটালি, স্পেন ও ব্রিটেনের মতো ইউরোপের ১৫টি দেশে তিনি ৭০টিরও বেশি মসজিদের ছবি তুলেছেন৷ সেই ছবির একটি সংকলনও প্রকাশিত হয়েছে৷ ইসলামি বিশ্বের সঙ্গে একটি পার্থক্য তিনি লক্ষ্য করেছেন৷ একহার্ডের মতে, মুসলিম দেশগুলির তুলনায় ইউরোপের মসজিদগুলির আকার-আয়তন ও চাকচিক্য কম৷
ইউরোপের মসজিদগুলিতে সাধারণত লাউডস্পিকারের মাধ্যমে আযান দেওয়ার অনুমতি নেই৷ বহুকাল আযানের মিনার নির্মাণেরও অনুমতি ছিল না৷ তবে ইউরোপে মুসলিমদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় অনেক মসজিদ বাইরে থেকেও সহজে চেনা যায়৷ একহার্ড আহমেদ ক্রাউসেন বলেন, ‘‘ডেনমার্কে নতুন ও আধুনিক মসজিদে মিনার তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়৷ আগে সেটা সম্ভব ছিল না৷ ১৯৬৪ সালে কোপেনহেগেনের বাইরে প্রথম মসজিদ তৈরির সময়ে সেটা স্পষ্টভাবে নিষেধ করা হয়েছিল৷ সৌভাগ্যবশত আজ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে৷''
একহার্ড আহমেদ ক্রাউসেন জার্মানির পশ্চিমে আখেন শহরে এক রক্ষণশীল খ্রিস্টান পরিবারে বড় হয়েছেন৷ গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের শেষে তিনি জার্মানি ছেড়ে এশিয়া ও আফ্রিকার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন৷ মিশরে গিয়ে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন৷
১৯৯২ সালে তিনি ধর্মান্তরিত হন৷ তখন তাঁর বয়স তিরিশের শেষ দিকে৷ ইউরোপীয় মুসলিম হিসেবে নিজের পরিচয়ের খোঁজে তিনি ফটোগ্রাফিকে হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন৷ একহার্ড বলেন, ‘‘আমি বুঝতে পারলাম, আমি আসলে ইউরোপীয় ইসলামি স্থাপত্যের সন্ধান করছি৷ সেটা আমার এত ভালো লেগেছিল, যে আমি সরাসরি এই সব মসজিদ ভালোবেসে ফেলেছিলাম৷ এগুলি আমারই মসজিদ, আমার বিশাল ভালোবাসা৷''
দুই দশক ধরে একহার্ড যে সব মসজিদের ছবি তুলে চলেছেন, সেগুলি একাধিক প্রদর্শনীতে দেখানো হয়েছে৷ তাঁর বইয়ে ব্যক্তিগত স্তরে সবচেয়ে প্রিয় মসজিদগুলির ছবি স্থান পেয়েছে৷ একহার্ড আহমেদ ক্রাউসেন বলেন, ‘‘বেলারুশের মসজিদ আমার সবচেয়ে প্রিয়৷ হলুদ আমার সবচেয়ে পছন্দের রং বলে হলুদ রংয়ের এই মসজিদ মনে ধরেছে৷ ডেনিশ ভাষায় একটি বই আমার অন্য প্রকল্প৷ সেটির মধ্যে এই বইয়ের তুলনায়ও বেশি অভিব্যক্তি ফুটে উঠবে৷''
একহার্ড আহমেদ ক্রাউসেন ডেনমার্কেই বাসা বেঁধেছেন৷ নিজের তোলা ছবির মধ্যে তিনি নিজের জীবনকাহিনির প্রতিফলন ঘটিয়েছেন৷ ইউরোপে মুসলিমদের সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করার লক্ষ্যে কাজ করতে চান তিনি৷
ইরফান আফতাব/এসবি