ইন্দোনেশিয়ায় প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদন
৯ নভেম্বর ২০২২ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা প্রদেশে থাউজেন্ড আইল্যান্ডস দ্বীপপুঞ্জের প্রামুকা দ্বীপ পর্যটকদের কাছে নতুন এক আকর্ষণ হয়ে উঠেছে৷ কিন্তু সেখানে এত আবর্জনা ছড়িয়ে রয়েছে কেন?
দ্বীপের প্লাস্টিক বর্জ্যের সমস্যা ধীরে ধীরে সমাধান করা হচ্ছে৷ ২০০৬ সাল থেকে স্থানীয় বাসিন্দা মাহারিয়া সান্দ্রি ও রুমা লিটেরাসি হিজাউ নামের সম্প্রদায় প্রামুক দ্বীপের বর্জ্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালাচ্ছে৷
অতীতে সেখানকার আবর্জনা পশ্চিম জাভা প্রদেশের বান্তারগেবাং ময়লার ভাগাড়ে নিয়ে গিয়ে ফেলা হতো৷ মাহারিয়া সান্দ্রি বলেন, ‘‘আসলে থাউজেন্ড আইল্যান্ডসে আমাদের বর্জ্য একেবারে আমাদের নিজস্ব বলে সেটার ব্যবস্থাপনা অপেক্ষাকৃত সহজ৷ আমরা যদি অন্য বর্জ্যের সঙ্গে সেটি মিশিয়ে আরও জটিল করে তুলি, সেটা সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে৷ আমাদের মতে, বান্তারগেবানে নিয়ে যাবার আগেই পুলাউ সেরিবুর বর্জ্য শেষ করতে হবে৷''
গত দুই বছর আগে রুমা লিতেরাসি হিজাউ সম্প্রদায় সহায়তা হিসেবে তিনটি পাইরোলাইসিস যন্ত্র পেয়েছে৷ এই যন্ত্রগুলি আবর্জনা থেকে জ্বালানি সৃষ্টি করতে পারে৷ সহজে বলতে গেলে পাইরোলাইসিস আসলে এমন এক রাসায়নিক পচন প্রক্রিয়া, যার আওতায় অক্সিজেন ছাড়াই উত্তাপ সৃষ্টি করা হয়৷
সেই প্রণালীকে ঘিরে বেশ কিছু প্রশ্ন রয়েছে৷ যেমন সেটি সহজে চালু করা যায় কিনা অথবা সেই প্রক্রিয়ায় তৈরি ধোঁয়ার প্রভাবই বা কতটা? রুমা লিতেরাসি হিজাউ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি কোমারুল্লাহ বলেন, ‘‘এ ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধা নেই, কারণ প্রায় সব কাজ হাতে করেই করা হয়৷ রুমা লিতেরাসি হিজাউয়ের কাছে ১০, ১১ ও ১২ এই তিনটি প্রজন্মের যন্ত্র রয়েছে৷ ‘গেট প্লাস্টিক'-এর বন্ধুরা সেগুলি দিয়েছে৷ এই তিন প্রজন্মের যন্ত্র ব্যবহার করা বেশ মজার৷ সব পদক্ষেপ অত্যন্ত মানুষ-নির্ভর হওয়ায় এখনো কোনো সমস্যা হয় নি৷''
এই প্রক্রিয়ার ফলে সৃষ্ট গ্যাসের চার শতাংশ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়৷ বর্জ্য গরম করার এই প্রক্রিয়া সত্ত্বেও পাইরোলিসিস যন্ত্র থেকে কোনো ধোঁয়া বার হয় না৷ বন্ধ আধারে কোনো অক্সিজেন ছাড়াই বর্জ্য পোড়ানো হয়৷ প্রামুকা দ্বীপের বাসিন্দা মাহারিয়া সান্দ্রি বলেন, ‘‘যে সব জেলে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করছেন, তাঁদের আমরা ইকো রেঞ্জার্স বলি৷ মাত্র ১৬ জন জেলে রয়েছেন৷ তাঁরা সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে বর্জ্য পেলে এখানে নিয়ে আসেন৷ ফলে মাছ ধরার সময় তাঁরা সমুদ্রেরও দেখাশোনা করেন৷''
অন্যান্য এলাকায়ও এই প্রকল্প চালু করা যাবে বলে তাঁদের আশা৷ সে ক্ষেত্রে আরও প্লাস্টিক বর্জ্য জ্বালানিতে রূপান্তরিত করা সম্ভব হবে৷ স্থানীয় জেলেদের কাছ থেকে কতটা সাড়া ও সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে? আহমেদ আউলিয়া তাঁদেরই একজন৷ তিনি বলেন, ‘‘বর্জ্য খুঁজে পাওয়া মোটেই কঠিন নয়৷ আমি প্রায়ই সেগুলি রেখে দুই-তিন লিটার ডিজেল পাই৷ তেল বেশ ভালো, সস্তায় ইঞ্জিন চালানো যায়৷''
প্রামুকা দ্বিপের জনসংখ্যা প্রায় ২,০০০৷ সেখানে পাইরোলিসিস-ভিত্তিক ইকো সিস্টেম সুরক্ষা দেখিয়ে দিচ্ছে, যে প্লাস্টিক বর্জ্য কাজে লাগিয়ে মূল্যবান কিছু সৃষ্টি করার উদ্যোগ শুধু বড় শহরেই সম্ভব নয়৷
উই আজহারি/এসবি