ইরাক : জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাড়ছে ‘সাংস্কৃতিক সংঘাত'
২৫ জুলাই ২০২৩মারামা হাবিব সাংবাদিক৷ গ্রাম এবং শহরের মানুষের ভাবনার এবং কর্মের জগতের পার্থক্য তার ভালোই জানা৷ জানার আরেকটি কারণ, এখন বাগদাদবাসী হলেও জন্ম থেকে শুরু করে জীবনের বড় একটা সময় কাটিয়েছেন ছোট্ট শহর কারবালায়৷ তারপরও গ্রামের মানুষরা শহরে এসে যেভাবে নিজেরা সমস্যায় পড়ছেন, অন্যদেরও সমস্যা বাড়াচ্ছেন তা দেখে মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যান৷ কী ধরনের বিষয় নিয়ে বেশির ভাগ সংঘাতের সূত্রপাত সে বিষয়ে মারামা জানান, ‘‘গ্রামের মানুষ নিজেদের সম্পত্তির ভিতরে বা বাইরের দেয়ালেও কোনো আগন্তুককে বসতে দেয় না৷ কিন্তু শহরে কেউ এ নিয়ে মাথা ঘামায় না৷ কারো বাড়ির সামনের রাস্তায় অন্য কেউ বসলে তা নিয়ে কেউ বিশেষ চিন্তাই করে না৷ শহরে এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার৷ কিন্তু গ্রাম থেকে আসা কৃষকেরা তা বুঝতে চান না৷ কেউ বসলেই গ্রাম থেকে আসা কৃষকেরা বেরিয়ে এসে ঝগড়া শুরু করে দেন৷ অনেক ক্ষেত্রে এমন ছোট বিষয় নিয়ে তাদের মারামারি করতেও দেখেছি আমি৷''
পোশাক দেখে পতিতা চেনা!
মারামা জানান, গ্রামের মানুষের পোশাকভাবনাও একেবারে আলাদা৷ নারীদের পাশ্চাত্যের পোশাক পরা মোটেই ভালো চোখে দেখেন না তারা৷ পশ্চিমা ঘরানার পোশাকে কোনো নারীকে দেখলে গ্রামের অনেক মানুষ তাকে বেশ্যা ভেবে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করতেও ছাড়েন না৷
মারামা হাবিব ঘরের বাইরে বলতে গেলে সব সময়ই মাথায় একটা স্কার্ফ জড়িয়ে নেন৷ তা সত্ত্বেও অনেক সময় গ্রাম থেকে আসা মানুষদের ‘আপত্তিকর' মন্তব্য শুনতে হয় তাকে৷
মারামা জানান, ‘‘ অনেক সময় আমি তাদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করি৷ কিন্তু তাতে সমস্যা আরো বাড়ে৷''
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদন বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পাঁচ দেশের একটি ইরাক৷ মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির ৯২ শতাংশ ভূমিই এখন মরুভূমি হওয়ার আশঙ্কায়৷ সারা বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির চেয়ে সাতগুণ দ্রুত বাড়ছে ইরাকের তাপমাত্রা৷এই পরিস্থিতিতে গ্রামের মানুষ যখন শহরমুখো, তখন শহরের অবস্থাও মোটেই ভালো নয়৷
শহর এলাকায় এখন চাকরির অভাব, শহরবাসীর জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর অভাব, সুপেয় পানির অভাব, পর্যাপ্ত স্কুলের অভাব, হাসপাতালের অভাব- সব মিলিয়ে সমস্যার যেন শেষ নেই৷
এই পরিস্থিতিতে হঠাত প্রচুর মানুষ গ্রাম থেকে চলে আসায় ভোগ্যপণ্যের বাজার, চাকরির বাজার এমনকি পরিকাঠামোর ওপরও বেড়ে গেছে চাপ৷ জাতিসংঘের অভিবাসনসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সংস্থার এক মুখপাত্র ডয়চে ভেলেকে জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অন্তত ৮৩ হাজার মানুষ গ্রাম থেকে শহরে চলে আসায় শহরের মানুষের জীবনে সংকট অনেক বেড়েছে৷
তিনি বলেন, ‘‘ গ্রাম থেকে আসা মানুষদের বেশিরভাগই সাধারণত দিনমজুরি বা স্বল্প বেতনের দিনচুক্তির কাজ করছেন৷ তাতেও গণপরিবহন, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষাখাতে চাপ বাড়ছে৷ কোথাও কোথাও পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং পরিষ্কার পানি সরবরাহেও দেখা দিচ্ছে সংকট৷''
এর পাশাপাশি শহর এলাকায় বাড়ছে অপরাধ, বাড়ছে সহিংসতা৷এসবের জন্য মূলত গ্রাম থেকে আসা মানুষদের দায়ী করছেন শহুরেরা৷
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দ্রুত বিষয়টির দিকে নজর না দিলে গ্রাম এবং শহরের মানুষদের এই আপাত মুখোমুখি অবস্থান ভবিষ্যতে বড় সংকটের জন্ম দিতে পারে৷ সেই আশঙ্কা দূরে ঠেলতে গ্রাম থেকে আসা মানুষদের শহুরে জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ায় সহায়তা এবং তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে মনে করেন তারা৷
কাথরিন শায়ের/ এসিবি