ইস্তফা দিতে চান আলিয়ার নিগৃহীত উপাচার্য
উপাচার্য নিগ্রহের ঘটনার পর আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় আবার খবরের শিরোনামে। উপাচার্য মহম্মদ আলি ইস্তফা দিতে চেয়েছেন।
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
দেশের অন্যতম পুরনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এখন রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের নাম ছিল মহামেডান কলেজ অফ ক্যালকাটা। প্রথমে কলেজের ভবন ছিল শিয়ালদহের কাছে। তারপর ওয়েলেসলি স্কোয়ারে ক্যাম্পাস হয়। এখন পার্ক সার্কাস, তালতলা ও নিউ টাউনে আলিয়ার ক্যাম্পাস আছে।
কী পড়ানো হয়
আলিয়াতে এখন পড়ানো হয় ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যানেজমেন্ট, নার্সিং, বিজ্ঞান ও কলা বিভাগের বিভিন্ন বিষয়। কলা বিভাগের বিষয়ের মধ্যে উর্দু, ইসলামিক থিওলজি, ইসলামিক স্টাডিজও আছে।
উপাচার্য নিগ্রহ
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলেন মহম্মদ আলি। আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন। সেখান থেকে আলিয়ার উপাচার্যের দায়িত্ব নিয়েছেন। দিন কয়েক আগে গিয়াসুদ্দিন নামে এক ছাত্রনেতা ও তার দলবল উপাচার্যের ঘরে ঢুকে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে, চড় মারার হুমকি দেয়। তার উপর মানসিক নির্যাতন করে গিয়াসুদ্দিনরা। এই গিয়াসুদ্দিন একসময় তৃণমূল ছাত্রশাখার নেতা ছিল। আগেও সে দুইজন উপাচার্যকে নিগ্রহ করেছিল বলে অভিযোগ।
দায়িত্ব ছাড়তে চান
মহম্মদ আলি এখন আলিয়ার দায়িত্ব ছাড়তে চান। তিনি বলেছেন, নৈতিক দায় নিয়ে তিনি এই পদ ছেড়ে আবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যেতে চান। মহম্মদ আলি জানিয়েছেন, তিনি সত্যিই ভয় পেয়ে গেছিলেন। পুলিশকে ডাকলেও তারা আসেনি। তার মনে হচ্ছিল, গিয়াসুদ্দিনরা কিছু করে দেবে
তৃণমূল নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, তাদের সঙ্গে গিয়াসুদ্দিনের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু গোটা ঘটনায় বেশ কিছু তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রীর নাম সামনে এসেছে। কিছু ভিডিও ক্লিপে (যার সত্যতা ডিডাব্লিউ যাচাই করতে পারেনি) রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, গোলাম রাব্বানিদের নাম এসেছে। ছবিতে তৃণমূলের নেতা অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে গিয়াসুদ্দিনকে দেখা যাচ্ছে।
কে এই গিয়াসুদ্দিন?
গিয়াসুদ্দিন ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ছিল। ২০১৪ সালে গিয়াসুদ্দিনকে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি হয়। ২০১৭ সালে আলিয়া ক্যাম্পাসের হস্টেল থেকে টাকা আদায় করা ও ক্যান্টিনের টাকা নয়ছয় করা নিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ, পরপর দুই জন উপাচার্য আবু তালেব খান ও মহম্মদ আলিকেও হেনস্থা করে গিয়াসুদ্দিন। তারপর সে আলিয়া থেকে বহিষ্কৃত হয়।
গিয়াসুদ্দিন গ্রেপ্তার
পুলিশ গিয়াসুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাকে আদালত সাতদিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ''আলিয়াতে পুলিশ পদক্ষেপ নিয়েছে। যা করার করেছে। আলিয়াতে যারা পড়াশুনো করে, সবাই খুব ভালো। তবে তাদের ক্ষোভ থাকতে পারে। যে কটু কথা বলেছিল, তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আমাদের এখানে কিছু হলে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়।''
বিরোধীদের বক্তব্য
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ''একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল কী করতে পারে, এটা তার প্রমাণ। আনিস খানকে নিয়ে ছাত্র আন্দোলন হচ্ছে। তার থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে এই ঘটনা।'' রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ, ''এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটাই এখন পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি। উপাচার্যকে ঘেরাও করা, বিক্ষোভ দেখানো রাজ্যে প্রায়ই হয়। কিন্তু আলিয়াতে যা হয়েছে তা নজিরবিহীন।''
রাজ্যপালের কাছে গেলেন না মুখ্যসচিব
আলিয়া-কাণ্ড নিয়ে জানতে রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। সেকথা তিনি টুইট করেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু মুখ্যসচিব রাজ্যপালের কাছে যাননি।
আনিসের মৃত্যু
কিছুদিন আগে ছাত্রনেতা আনিস খানের মৃত্যু হয়েছে। তার পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের পোশাক পরিহিত চারজন বাড়ির ছাদ থেকে আনিসকে ঠেলে ফেলে দিয়েছিল। তাতেই তিনি মারা গেছেন। আনিস এই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল।
বিক্ষোভ চলছে
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ছাত্রবিক্ষোভ চলছে। উপাচার্যের সমর্থনে ও গিয়াসুদ্দিনের বিরোধিতা করে ছাত্রছাত্রীরা এখন আলিয়ায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
ছাত্রের দাবি
আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইরফান শরিফও বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ''গিয়াসুদ্দিনরা আগেও সাধারণ ছাত্রদের আক্রমণ করেছিল। গিয়াসুদ্দিনের মাথার পিছনে অদৃশ্য হাত আছে। সেগুলিকে খুঁজে বের করতে হবে। গিয়াসুদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে আনিস-কাণ্ডের মতোই সব ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে।''
ছাত্রনেতার বক্তব্য
পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ মাসাদুর রহমান ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''গিয়াসুদ্দিন বড় বড় নেতা-মন্ত্রীদের ছত্রছায়ায় আছে, তা ভাইরাল ক্লিপিংস থেকেই স্পষ্ট।'' মাসাদুর বলেন, গিয়াসুদ্দিনের মতো গুণ্ডাকে ছাত্রনেতা বলা উচিত নয়।