এক নজরে মেকলেনবুর্গ-ফরপমার্ন
২২ মার্চ ২০১৩জার্মানির পূর্বাঞ্চলের পাঁচটি অঙ্গরাজ্যের একটি মেকলেনবুর্গ-ফরপমার্ন৷ এই অঙ্গরাজ্যের পশ্চিমে শ্লেসভিক হলস্টাইন এবং লোয়ার স্যাকসনি অঙ্গরাজ্য, দক্ষিণে ব্রান্ডেনবুর্গ৷ রাজ্যের উল্লেখযোগ্য বড় শহরগুলো হল- রস্টক, শোয়েরিন, নয়ব্রান্ডেনবুর্গ ও ভিসমার৷ বাল্টিক সাগরের তীরে এক গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর রস্টক৷
বাল্টিক সাগরের তীরে ৬ টি হানজা শহর
বাল্টিক সাগরের তীর ঘেঁষে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য দ্বীপ ও উপদ্বীপ: উজেডোম, প্যোয়েল, হিডেনজে, রুগেন৷
মেকলেনবুর্গ-ফরপমার্ন অঙ্গরাজ্যে রয়েছে ৬ টি হানজা শহর: রস্টক, ভিসমার, গ্রাইফ্সভাল্ড, শ্ট্রালজুন্ড, ডেমিন, ও আনক্লাম৷ মধ্যযুগে সাগর তীরবর্তী কয়েকটি শহর রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক সুবিধার জন্য হানজে নামে একটি সমিতি গঠন করে৷ আর এ থেকেই হানজা শহর নামের উৎপত্তি৷
হ্রদের অঙ্গরাজ্য মেকলেনবুর্গ -ফরপমার্ন
২০০০ হ্রদ এই অঙ্গরাজ্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে৷ পর্যটকদের আকৃষ্ট করে এইসব জলাশয়৷ এই রাজ্যের অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্পের এক বড় ভূমিকা রয়েছে৷ এছাড়া এই রাজ্যের আরও কটি প্রধান অর্থনৈতিক শাখা হল - কৃষি, বন্দর, বাণিজ্য ও জাহাজ নির্মাণশিল্প৷
মেকলেনবুর্গ অর্থ বড় দুর্গ
মেকলেন শব্দটি এসেছে মিকিল থেকে৷ আর মিকিল মানে বড়৷ বুর্গ অর্থ দুর্গ৷ একাদশ শতাব্দীতে এই অঞ্চলের এক রাজার প্রশাসনিক কেন্দ্রের নাম ছিল মিকিলিনবুর্গ৷ মধ্যযুগে অনেক রাজা রাজড়া বসবাস করতেন এই অঞ্চলে৷ এখনও অনেক রাজবাড়ি চাকচিক্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে৷ কয়েকটিকে আবার রূপান্তরিত করা হয়েছে হোটেল বা মিউজিয়ামে৷
তথ্য ও উপাত্তঃ
জনসংখ্যাঃ ১৭ লক্ষ
আয়তনঃ ২৩০০০ বর্গকিলোমিটার
প্রতিষ্ঠাঃ ৩.১০.১৯৯০
প্রধান অর্থনৈতিক শাখাঃ কৃষি, পর্যটনশিল্প
মেকলেনবুর্গ-ফরপমার্ন রাজ্যের মানুষ আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতে পছন্দ করেন৷ বিশেষ করে প্রবীণ ও গ্রামাঞ্চলের মানুষ আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলতেই অভ্যস্থ৷
কৃষক মিশাইল কন্সটিনের ভারী বুট ও খামারে পরার পোশাক বদলানোর জন্য খুব কম সময়ই হাতে থাকে৷ মিশাইল কন্সটিন কৃষিকাজ ভালবাসেন অন্যদিকে একটি হোটেলের দায়িত্বও হাতে নিয়েছেন তিনি৷ বলা যায় মেকলেনবুর্গ -ফরপমার্নে হারিয়েছেন তাঁর হৃদয়৷
মেকলেনবুর্গীয় গ্রাম ইওরগেন্সহাগেনের একটি দৃশ্যঃ
এইমাত্র সূর্য উঠল৷ গরুর ডাক শোনা যাচ্ছে গোয়াল থেকে৷ প্রসব যন্ত্রণায় কাতর গরুটি৷ মিশাইল তাড়াতাড়ি পা চালালেন গোয়ালের দিকে৷ সস্নেহে হাত বোলালেন গরুটির গায়ে৷ কিছুক্ষণ পর জন্ম হল এক বাছুরের৷ আনন্দে উজ্জ্বল হয়ে উঠল মিশাইলের চোখ মুখ৷
কৃষিকাজে তাঁর প্রবল আগ্রহ
মিশাইল কন্সটিনের খামারে ৪০ জন কৃষক কাজ করেন৷ চারিদিকে দেখা যায় শস্যক্ষেত৷ ঘাসে ঢাকা মাঠ৷ চরে বেড়াচ্ছে গরু বাছুর৷ ১৫০০ এর মত গরু আছে তাঁর৷ ৫৪ বছর বয়সী কন্সটিন যখনই সময় পান তখনই খামারে এসে দেখাশোনা করেন এই প্রাণীগুলোর ৷
৭টা বাজে৷ একেবারে কাঁটায় কাঁটায় খামারে এসে পৌঁছাল দুধ নেয়ার ট্রাকটি৷ আজ ৮হাজার লিটার দুধ হয়েছে৷ কৃষক মিশাইল সন্তুষ্ট এতে৷ কিছু দূরে এক বড় দুধের কারখানায় নিয়ে যাওয়া হবে এই দুধ৷ কৃষক মিশাইলের খামারের গরুর মাংস, শস্য ইত্যাদিও প্রক্রিয়াজাত করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বড় বড় কারখানায়৷
পর্যটন শিল্পেও উত্সাহ কম নয়
কৃষিকাজ ও পশুপালনের পাশাপাশি পর্যটনশিল্পেও খুব উত্সাহী মিশাইল৷ আর তাই তাঁর খামারের অদূরে একটি গ্রামীণ হোটেলের উদ্বোধন করেছেন কৃষক মিশাইল কন্সটিন৷ এখানে তিনি প্রায়ই আঞ্চলিক ভাষাসন্ধ্যা, বিয়ে বা অন্যান্য পারিবারিক উত্সবের আয়োজন করেন৷
যতদূর দেখা যায় শুধুই প্রকৃতি৷
খামারে বা হোটেলে তেমন কোনো কাজ না থাকলে মিশাইল চলে যান শিকারে৷ হরিণ, বন্য শুয়োরের গতিবিধি লক্ষ্য করেন তিনি৷ শিকার একটি প্রিয় হবি মিশাইলের৷ তাঁর মতে মেকলেনবুর্গ-ফরপমার্ন শিকারের জন্য সবচেয়ে উপযোগী জায়গা৷ পশু পাখী ছাড়াও এই অঞ্চলে রয়েছে বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রকৃতিঃ পাহাড়, নদী, হ্রদ৷ শিকারের মঞ্চ থেকে এইসব প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করেন তিনি৷ লক্ষ্য করেন সারস ও বাজ পাখির চলাফেরা৷
মিশাইল কন্সটিন কর্মতত্পর মানুষ৷ অন্যদিকে আবার আরামপ্রিয়, রসবোধও কম নয়৷ গির্জার কোরাস গানে অংশ নেন তিনি৷ প্রয়োজনে গ্রামের মেয়রের প্রতিনিধিত্ব করেন৷ পর্যটকদের ভ্রমণের জন্য সুন্দর এক পথ তৈরির উদ্যোক্তাও তিনি৷ এই পথ দিয়ে যেতে যেতে নজরে পড়বে ছোট ছোট রোমান্টিক গ্রাম, ঝকঝকে গির্জার চূড়া, কৃষি ও গ্রামীণ যাদুঘর৷ মিশাইলের কৃষিখামারের মত আধুনিক খামারও দৃষ্টি এড়াবেনা৷
মিশাইল কন্সটিনের মতে, জার্মানির ১৬ টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে মেকলেনবুর্গ-ফরপমার্নই সবচেয়ে সুন্দর৷ ‘‘ঈশ্বর পৃথিবী সৃষ্টির সময় এখানেই হয়তো সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করেছেন৷'' হেসে বলেন তিনি৷