এবার জলদূষণও ঠেকাল কলকাতা
২০ নভেম্বর ২০২০বায়ুদূষণ রুখতে, আদালতের নির্দেশে দীপাবলির আতশবাজি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছিল এই বছর৷ পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের তৎপরতায়, পুলিশের সতর্কতায় এবার প্রায় শব্দহীন ছিল আলোর উৎসব৷ কান–ফাটানো বাজির আওয়াজ প্রায় শোনাই যায়নি কলকাতা শহর ও সংলগ্ন অঞ্চলে৷ এবার জলদূষণও আটকে দিতে সফল হলো প্রশাসন৷ মূলত বিহার থেকে আসা কলকাতার অবাঙালি বাসিন্দারা প্রতিবছর এই সময় করেন, যার অন্যতম আচার হলো গঙ্গা, বা অন্য কোনও নদী, অথবা জলাশয়ে নেমে পুজোপাঠ৷ এর দরুণ প্রচুর ফুল, পাতা, সিঁদুর, ঘি, তেল মিশে যেত জলে, দূষণ ছড়াত৷ সরাসরি প্রভাব পড়ত জলবাসী প্রাণীর বেঁচে থাকায়৷ বেশ কয়েক বছর ধরেই এই নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছিলেন পরিবেশপ্রেমীরা৷ গত বছরও আদালতের নির্দেশ ছিল, কলকাতার দুই বৃহত্তম প্রাকৃতিক জলাশয়, উত্তরে বেলেঘাটা লেক, বা সুভাষ সরোবর এবং দক্ষিণে ঢাকুরিয়া লেক, বা রবীন্দ্র সরোবরের জলে নেমে পুজো করা যাবে না৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত আদালতের সেই নির্দেশ মান্যতা পায়নি৷ রবীন্দ্র সরোবরের বন্ধ ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে জলাশয় নোংরা করেন পুণ্যার্থীরা৷
এবারও কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল দুটি লেকে ছট পুজো করতে না দেওয়ার পক্ষে৷ কলকাতা পুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ একদিকে সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে যেমন উচ্চতর আদালতে আপিল করেছিল, তেমনই ছট পুজোর বিকল্প বন্দোবস্তও করতে শুরু করেছিল৷ মোট ১,৩০০ কৃত্রিম জলাশয় তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল, যেখানে পুজো করা যাবে৷ শেষ পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়েও নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকায় হাত শক্ত হয় প্রশাসনের৷ রবীন্দ্র এবং সুভাষ সরোবরের সব ফটক তালাবন্ধ করে, তার সামনে বাড়তি বাঁশের বেড়া বানিয়ে, বাড়তি পুলিশ পাহারা বসিয়ে শুক্রবার দুটি লেককেই সুরক্ষিত রাখা হয়েছে৷ আদালতের নির্দেশে তার আগের রাত থেকেই একেবারে শনিবার বিকেল পর্যন্ত সাধারণের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে দুটি লেক৷
২০১৪ সাল থেকে সুভাষ সরোবরের জলকে দূষণমুক্ত রাখার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পরিবেশবিদ সুদীপ্ত ভট্টাচার্য৷ তাঁরা স্বাগত জানিয়েছেন আদালতের হস্তক্ষেপ এবং প্রশাসনিক তৎপরতাকে৷ সুদীপ্তবাবু বিশদে বোঝালেন, ছটপুজোর কারণে কীভাবে জলে দূষণ ছড়ায়৷ ফুল, পাতা পচে, জলে তৈলাক্ত আবর্জনা ছড়িয়ে গিয়ে শুধু জলই নষ্ট করে না, জলচর প্রাণীদেরও অকালমৃত্যুর কারণ হয়৷ যদিও পুণ্যার্থীরা এত কিছু বুঝতে চান না৷ এদিনও তাঁরা কেউ কেউ রবীন্দ্র সরোবরের বন্ধ ফটকের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন৷ এ ব্যাপারে সুদীপ্ত ভট্টাচার্যের সাফ কথা, ‘‘ধর্মীয় ভাবাবেগ সব ধর্মেই আছে৷ হিন্দু ধর্মে আছে, আবার অন্য যে সমস্ত সংখ্যালঘু ধর্ম, তাদেরও আছে৷ কিন্তু পরিবেশ সব কিছুর ওপরে৷ পরিবেশ যদি ঠিকঠাক থাকে, তা হলেই কিন্তু আমরা, সব ধর্মের মানুষ, সবাই মিলে ঠিকভাবে বেঁচে থাকতে পারব৷ করোনা কিন্তু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, এই লাগামহীন দূষণ হলে কী ঘটতে পারে! ফলে পরিবেশের বিষয়টা সব ধর্মের ঊর্ধ্বে৷ এখানে কোনও আবেগকে গ্রাহ্য করাটা ঠিক না৷’’