ঐতিহাসিক হেট স্পিচ
পৃথিবী জুড়ে রাজনৈতিক নেতারা হেট স্পিচে মেতেছেন৷ তবে রাজনৈতিক ইতিহাসে হেট স্পিচ নতুন কিছু নয়৷ নানা সময়ে নানা নামে নানা কায়দায় হেট স্পিচ চালু ছিল৷ ছবিঘরে তারই কিছু উদাহরণ দেওয়া গেল৷
ডোনাল্ড ট্রাম্প
বিশ্ব রাজনীতিতে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি হেট স্পিচের জন্য নাম কিনেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ একবার নয়, বার বার হেট স্পিচ দিয়েছেন৷ তাঁর টার্গেট হয়েছেন কখনো মুসলিমরা আবার কখনো আফ্রিকার মানুষেরা৷ একদা তিনি বলেছিলেন, মুসলিমদের দেশে ঢোকা বন্ধ করে দেবেন তিনি৷ আর আফ্রিকার কয়েকটি দেশের মানুষদের বিষয়ে বলেছিলেন, তাঁরা ‘শিটহোল’ দেশ থেকে এসেছেন৷ যা নিয়ে প্রভূত সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছিল তাঁকে৷
খেয়ার্ট ভিল্ডার্স
গোটা ইউরোপেই এখন অতি দক্ষিণপন্থিদের বারবাড়ন্ত৷ হল্যান্ডে এখনো দক্ষিণপন্থিরা সেভাবে থাবা বসাতে না পারলেও ডাচ নেতা খেয়ার্ট ভিল্ডার্স সংসদে দাঁড়িয়ে যে বক্তৃতা করেছিলেন তা ডাচ ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্কের দিন৷ ভিল্ডার্স বলেছিলেন, ইসলাম একটি খারাপ বিষয়৷ ইসলামের জন্য হল্যান্ডের সংস্কৃতি নষ্ট হচ্ছে৷ সংসদেই ভিল্ডার্সকে এরপর চ্যালেঞ্জ করেছিলেন অন্যান্য সংসদেরা৷
যোগী আদিত্যনাথ
ভারতে বর্তমান শাসকদল বিজেপি এবং তার সহযোগীরা হেট স্পিচের জন্য বিখ্যাত৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরাসরি অভিযুক্ত গুজরাট দাঙ্গার জন্য৷ হেট স্পিচও দিয়েছেন তিনি একসময়৷ তবে সমসময়ে তাঁর শিষ্য এবং উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ হেট স্পিচের জন্য সবচেয়ে কুখ্যাত হয়েছেন৷ উত্তর প্রদেশে মুসলিমদের বিরুদ্ধে একাধিক হেট স্পিচ দিয়েছেন তিনি প্রকাশ্যে৷ দাঙ্গাও বাঁধিয়েছেন৷
প্রবীণ তোগাড়িয়া
বিশ্বহিন্দু পরিষদ বিজেপিরই অন্যতম শাখা সংগঠন৷ সেই সংগঠনের প্রধান প্রবীণ তোগাড়িয়া একটি জনসভায় মুসলিমদের কুকুরের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন৷ এরপর তাঁর বিরুদ্ধে বহু মামলা হয়েছে৷ সে সব মামলা এখনো চলছে৷
জর্জ ডাব্লিউ বুশ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগেও বহু মার্কিন প্রেসিডেন্ট হেট স্পিচের জন্য ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছেন৷ ট্রাম্পের সমকক্ষ না হলেও জর্জ ডাব্লিউ বুশ তাঁর অন্যতম৷ বর্ণবিদ্বেষমূলক নীতি গ্রহণের অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে৷ বিশেষত স্কুলের ছাত্রদের ক্ষেত্রে তিনি বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ৷
জন ক্যালভিন কোলড্রিজ
১৯২৩ থেকে ১৯২৯ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন কোলড্রিজ৷ ১৯২৭ সালে হয় ভয়াবহ মিসিসিপি বন্যা৷ অভিযোগ, শ্বেতাঙ্গদের দ্রুত উদ্ধারের ব্যবস্থা করলেও কোলড্রিজ কৃষ্ণাঙ্গদের উদ্ধারের কোনো ব্যবস্থাই করেননি৷ বহু কৃষ্ণাঙ্গ সে সময় প্রাণ হারিয়ে ছিলেন৷ পৃথিবী জুড়ে কোলড্রিজের বিরুদ্ধে সমালোচনা হয়েছিল৷
উড্রো উইলসন
১৯১৩ থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন উড্রো উইলসন৷ বহু ভালো কাজের জন্য প্রশংসিত হলেও অধিকাংশ মার্কিন প্রেসিডেন্টের মতো তিনিও হেট স্পিচ দিয়েছেন৷ ক্ষমতায় এসে ফেডারেল শ্রমিকদের কাজের পুনর্নবিকরণ করেছিলেন৷ সে সময় অধিকাংশ কৃষ্ণাঙ্গকে চাকরিচ্যূত করেছিলেন৷ যাঁদের কাজ বেঁচে গিয়েছিল, তাঁদের জন্য আলাদা খাওয়ার ঘর, কাজের পরিসরের ব্যবস্থা হয়েছিল৷ শ্বেতাঙ্গদের সঙ্গে কাজ করার অধিকার ছিল না তাঁদের৷
আডল্ফ হিটলার
কমিউনিস্ট, মুসলিম এবং ইহুদিদের বিরুদ্ধে তিনি যা বলেছেন, সবই হেট স্পিচ৷ শুধু বলেছেন না, ইহুদিদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানোরও ব্যবস্থা করেছেন৷ বিশ শতকের দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি হেট স্পিচের রেকর্ড আডল্ফ হিটলারের মুকুটেই৷
বেনিটো মুসোলিনি
তাঁর শাসনকালেই ‘ফাশিস্ত’ শব্দটির উদ্ভব৷ বিরোধীদের প্রসঙ্গে যে ধরনের মন্তব্য তিনি করতেন, তা এক কথায় হেট স্পিচ৷
ইদি আমিন
১৯৭১ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত উগান্ডার স্বৈরাচারী শাসক ছিলেন ইদি আমিন৷ তাঁর আগের শাসক আবোটের অনুগামীদের বিরুদ্ধে কুৎসিত মন্তব্য করে তিনি নিজের সমর্থকদের তাতিয়ে দিতেন৷ অভিযোগ, আকোলি এবং ল্যাঙ্গো উপজাতির বিরুদ্ধেও একইরকম মন্তব্য করতেন তিনি৷ এবং শেষ পর্যন্ত ওই দুই উপজাতির মানুষদের নৃশংস ভাবে হত্যা করেছিল তাঁর দলবল৷ উগান্ডার ইতিহাসে এখনো যা সবচেয়ে কলঙ্কিত অধ্যায়৷
জোসেফ স্ট্যালিন
সোভিয়েত রাশিয়ার এই কমিউনিস্ট নেতার বিরুদ্ধেও হেট স্পিচের অভিযোগ আছে৷ কেবল অ্যামেরিকা নয়, তাঁর নিজের দেশের বিরোধীদের সম্পর্কেও বহু হেট স্পিচ দিয়েছেন তিনি৷ মানুষ উসকেছেন বিরোধীদের একঘরে করার জন্য৷ বস্তুত আয়রন ক্যাম্পও তাঁরই সৃষ্টি৷
আশিন উইরাথু
তিনি ‘মিয়ানমারের বিন লাদেন’ হিসেবেও পরিচিত৷ এই কট্টর জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষু ফেসবুকে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে উস্কানি ও বিদ্বেষমূলক পোস্ট দিয়ে ব্যাপক আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছেন৷ তার বিদ্বেষমূলক বক্তব্য এতটাই প্রভাব বিস্তার করছিল যে ফেসবুক তাঁর পেজটি মুছে ফেলতে বাধ্য হয়৷
জুলফিকার আলী ভুট্টো
বাংলাদেশ ও এদেশের জনগণ পাকিস্তানের শোষণমূলক ব্যবস্থার বিরোধিতা করায় এ নিয়ে জুলফিকার আলী ভুট্টোর খুবই মনোকষ্ট ছিল৷ তিনি কখনো মেনে নিতে পারেননি যে, এদেশের মানুষ তাঁর কথার বিরোধিতা করেছে৷ এমনকি প্রকাশ্যে তিনি জনসভাতেই বলে ফেলেছিলেন৷ ঢাকায় এক জনসভায় তিনি বলেই ফেলেছিলেন যে, ‘‘মঞ্জুর হ্যায় তো ঠিক হ্যায়, নেহি মঞ্জুর হ্যায় তো শুয়োর কে বাচ্চে, জাহান্নাম মে যায়ে৷’’