কলকাতার পুলিশ-কুকুরদের কথা
এরাও পুলিশ। অপরাধীদের ধরতে, বিস্ফোরক, মাদক খুঁজে বের করতে এদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। দক্ষতার সঙ্গে তারা অপরাধীদের ধরে।
তদন্তকারী কুকুর
এমন বহু তদন্তের নজির রয়েছে যার কুলকিনারা তদন্তকারী পুলিশ কর্মীরা করতে পারেননি কিন্তু অপরাধী ধরে দিয়েছে অন্য কেউ। কারো নাম মার্শাল, কেউ বা মিলি, পায়েল, রানি, জিপসি, ব্ল্যাকি, লুসি। এরা হলো কলকাতা পুলিশের প্রশিক্ষিত তদন্তকারী কুকুর বাহিনী।
কবে তৈরি হয়েছিল এই বাহিনী?
১৯৭১ সালে তৈরি হয় কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়াড। শুধুমাত্র অপরাধীদের চিহ্নিত করার জন্যই নয়, অপরাধ আটকানোর জন্যও এই বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়। তাই বিশেষজ্ঞ দিয়ে এদের প্রশিক্ষিত করা হয়।
কুকুর দেবে অনুমতি
এদের সবুজ সঙ্কেত পেলে তবেই নির্দিষ্ট রুটে হাঁটার অনুমতি পান প্রধানমন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি থেকে রাজ্যপাল সকলেই। তবেই অচেনা জায়গায় পা ফেলার ছাড়পত্র পান ভিআইপিরা।
নির্ভুল তদন্ত
অভিজ্ঞ পুলিশকর্তাদের মতে মানুষ তদন্তে গিয়ে ভুল করতে পারে, কিন্তু কুকুর অপরাধী চিনতে ভুল করে না। এদের তীব্র ঘ্রাণশক্তি, স্মৃতিশক্তি, দৌড়ঝাঁপ করার ক্ষমতা মানুষের থেকে অনেক বেশি, বুদ্ধিও আছে। মানুষ পুলিশের মত এদেরও রয়েছে ইউনিফর্ম।
বিশেষজ্ঞ সারমেয়
ডোবারম্যান, বিগেল, গোল্ডেন রিট্রিভার, অ্যালসেশিয়ান, জার্মান শেফার্ড, ককার স্পেনিয়াল মিলিয়ে কলকাতা পুলিশের ডগ স্কোয়্যাডের সদস্য ৪৮। এরা প্রত্যেকে বিভিন্ন কাজে দক্ষ। অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজ, অপরাধমূলক তদন্ত, নারকোটিকস, বম্ব স্কোয়াড-সহ আলাদা আলাদা বিভাগ রয়েছে।
প্রশিক্ষণের রোজনামচা
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা কুকুরদের প্রশিক্ষণ চলে পিটিএস অর্থাৎ পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে। অফিসার ইন চার্জ শান্তনু মণ্ডল জানালেন, সপ্তাহের বেশিরভাগ দিনই আউটডোর প্র্যাকটিস চলে। ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে অনুশীলন সেরে এসে তাদের পরিষ্কার করা হয়, এরপর যাদের ডিউটি থাকে তারা ডিউটিতে চলে যায়, বিকেলে ফিরে আবার হাল্কা গা ঘামানো। এর মাঝে এমার্জেন্সি ডিউটি পড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ছুটতে হয় সেখানে।
আহার বিধি
ইচ্ছে করলেই মেলে না বাহারি খাবার। ফিট থাকতে যেমন প্রতিদিনের নিয়মিত অনুশীলন জরুরি, তেমনই খাওয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে মাপা নিয়ম। চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যালান্স ডায়েটেই থাকতে হয় এদের। রান্নাঘরে হলুদ-রসুনের ঢোকার অনুমতি থাকলেও নুন-চিনিতে নিষেধ রয়েছে।
রয়েছে অবকাশও
সাধারণত ছয় থেকে নয় মাস বয়সে একটা কুকুরকে প্রশিক্ষণ দিতে স্কোয়াডে ভর্তি করা হয়। থাকা খাওয়া চিকিৎসা সহ প্রত্যেক পুলিশ-কুকুরদের খরচ বহন করে সরকার। প্রত্যের কুকুরের জন্য বরাদ্দ থাকে একটা করে ঘর। গরম থেকে বাঁচতে রয়েছে কুলারের ব্যবস্থাও। মানুষ পুলিশদের মত এদেরও ছুটিছাটা রয়েছে, সেদিন ঘরে বসে আরাম। তবে উর্দিধারীদের মতোই করতে হয় এমার্জেন্সি ডিউটি।
অবসরের বয়স
আট বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করতে পারে এরা। তবে কুকুরদের কর্মক্ষমতার উপর নির্ভর করে তারা কত বছরে অবসর নেবে। মানুষের মতই এদেরও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। তখনই অবসরের কথা চিন্তা করতে হয়, তবে মানুষের মত একেবারে নির্ধিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া নেই। অক্ষম কুকুরকে সময়ের আগেও বসিয়ে দেওয়া হয়।
বাইরেও প্রশিক্ষণ
কলকাতা পুলিশের কুকুরের ট্রেনিং যে শুধু কলকাতাতেই হবে এমন কথা নেই। মানুষের মতো এরাও রাজ্যের বাইরে প্রশিক্ষণ নিতে যায়।
প্রশিক্ষণের পদ্ধতি
গন্ধ শুঁকিয়ে, ওপর থেকে ঝাঁপ দিইয়ে, দৌড়ঝাঁপ করিয়ে – নানান উপায়ে প্রশিক্ষিত করা হয় এই কুকুরদের। ছবিয়ে যেমন দেখা যাচ্ছে, একটি কুকুর একজনের হাতে কামড় বসাচ্ছে। এখানে কুকুরটিকে আগে থেকে একটি গন্ধ শুঁকিয়ে সেটি খুঁজে বের করার ‘টাস্ক’ দেওয়া হয়েছিল। কুকুরটি সেই গন্ধ শুঁকে অপরাধীকে খুঁজে তাকে ধরেছে।
মায়ার বাঁধন
ছোট্ট বয়সে প্রশিক্ষণ নেয় এরা। তখন তাদের সঙ্গে থাকে তাদের হ্যান্ডলার বা মাস্টার। সেই সময় মাস্টারের সঙ্গে আত্মিক যোগ তৈরি হয়ে যায় ওদের। মাস্টারকে দেখতে না পেলে ওদের যতটা মনখারাপ হয় ততটাই মনখারাপ হয় মাস্টার বা ট্রেনারদের। এএসআই কুশল সিং ডেসিলার সামনেই অবসর, এদের ছেড়ে থাকতে হবে ভেবে মন খারাপ তার।