কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় কতটা এগোতে পারবে ইউরোপ?
১৬ ডিসেম্বর ২০২৪প্রশ্ন হচ্ছে, ইউরোপীয়রা কি এআইতে সামনে এগোতে পারবে? বর্তমানে তাদের অবস্থান কী? চলুন জেনে নেই৷
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শিল্প তৈরি করতে পারে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই খাতের নেতৃত্বে রয়েছে৷ চীনে এআইয়ের সহায়তায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে চা উৎপাদন করা হচ্ছে৷
তবে এআইয়ের প্রসারের দিক দিয়ে ইউরোপ এখনো পিছিয়ে রয়েছে৷ গুরুত্বপূর্ণ এই প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ইউরোপীয়রা কি চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে?
ফ্রান্সে ন্যুকএআই স্টার্টআপ লজিস্টিক কোম্পানির জন্য নতুন সমাধান তৈরি করছে৷ প্রতিষ্ঠানটির সহপ্রতিষ্ঠাতা ভেরোনিক ভেনটোস বলেন, ‘‘আমাদের আর অন্যদের মধ্যে বর্তমানে বড় ব্যবধান হচ্ছে আমরা মানবকেন্দ্রিক ভাবনায় আছি৷ আমরা অনেক ডেটা ব্যবহার করতে যাচ্ছি না এবং সাধারণভাবে ধরে নিচ্ছি যে যন্ত্র আরো ভালো জানে৷ মানবকেন্দ্রিক অর্থ হচ্ছে মানুষ এবং যন্ত্রের মধ্যে এক সহযোগিতা স্থাপন যাতে মানুষ যন্ত্র ব্যবহার করে আরো ভালো কাজ করতে পারে৷’’
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় বিশ্বের শীর্ষ অবস্থানে পৌঁছাতে চায় ফ্রান্স৷ দেশটি মাইক্রোসফটের মতো বিনিয়োগকারীদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে৷ তারা দেশটিতে চার বিলিয়ন ইউরোর ডেটা সেন্টার করতে চায়৷ ফরাসি স্টার্টআপগুলোও লাভের মুখ দেখছে৷
ভেরোনিক ভেনটোস বলেন,‘‘সবার আগে স্টার্টআপগুলো অনেক সহায়তা থেকে লাভবান হচ্ছে৷ শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, পরামর্শও৷’’
তারপরও প্যাটেন্ট রেজিস্ট্রেশন এবং এআই ডেটা সেন্টারে বিনিয়োগের বিবেচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক পিছিয়ে ফ্রান্স৷ ভেরোনিক ভেনটোস বলেন, ‘‘ফরাসি সরকারের উচিত আমেরিকান এবং চীনাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার চেষ্টা করার চেয়ে আমাদের নিজস্ব শক্তিমত্তার দিকে নজর দেয়া৷ উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি তাদের উচিত হালনাগাদ ফ্যাশনের এআইয়ের চেয়ে ভিন্নধর্মী এআই প্রযুক্তিকে সহযোগিতা করা৷’’
জার্মানির রাজনৈতিক এবং এআই রাজধানী বার্লিন৷ জেটব্রেইনসের মতো অত্যাধুনিক কোম্পানি এখানে স্থায়ী হয়েছে৷ তারা বড় এবং জটিল কাজের সমাধানে নতুন উপায় খুঁজছে৷ যেমন পঞ্চাশ পাতা পড়ার দরকার কী যখন এসংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব?
জেটব্রেইন্সের জোডি বার্চেল বলেন, ‘‘সমস্যার একটি দিক হচ্ছে আমরা এসব মডেলের দিকে এমনভাবে অগ্রসর হচ্ছি যেন আমরা আরেকজন মানুষের সঙ্গে কথা বলছি যিনি আমাদের বোঝেন৷ কিন্তু আসলে এগুলো হচ্ছে পরিশীলিত অ্যালগরিদম যেগুলোর সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা প্রয়োজন৷ ফলে ওয়ার্ডিং এবং টেনে পরিবর্তন আমাদেরকে সম্পূর্ণ আলাদা ফলাফল দিতে পারে৷''
কখনো কখনো সন্তোষজনক ফলাফল পেতে চারপাতার মতো টেক্সট দিতে হয়৷ প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং তুলনামূলকভাবে নতুনক্ষেত্র, ফলে এখাতে বিশেষজ্ঞের ঘাটতি রয়েছে৷ প্রয়োজনীয়তাও অনেক৷ তাসত্ত্বেও মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো ভালো বেতন দিতে পারছে না ইউরোপীয় স্টার্টআপগুলো৷
জোডি বার্চেল বলেন, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই চাকুরিতে গড় বাৎসরিক বেতন এক লাখ ত্রিশ হাজার মার্কিন ডলারের মতো৷ কিন্তু অনেকেই প্রম্পটিং নিয়ে কাজ করেন, তাদের মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এমএল ইঞ্জিনিয়াররা৷ এই চাকুরিতে এমএল মডেল সম্পর্কে আরো বিস্তৃত জ্ঞানের প্রয়োজন হয় যা প্রম্পটিংয়ের চেয়ে বেশি কিছু৷ আর এমএল ইঞ্জিনিয়ারদের গড় বেতন এক লাখ ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার৷’’
অবশ্য সেরা মেধা পাওয়ার লড়াই সবকিছু নয়৷ জোডি বার্চেল বলেন, ‘‘সুতরাং মনোযোগ সত্যিই ভিন্ন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠানগুলো সেরা মডেল তৈরি করছে এবং সেগুলো এমনভাবে বাজারে ছাড়ছে যাতে তারা মুনাফা করতে পারে৷ সেগুলো ব্যবহার করতে পয়সা দিতে হবে৷অন্যদিকে চীন এবং ইউরোপে প্রচুর মনোযোগ ওপেন-সোর্স মডেলের দিকে৷ অর্থাৎ এমন মডেল যা বিনা খরচায় যেকেউ ব্যবহার করতে পারবে৷ মজার ব্যাপার হচ্ছে এরকম কিছু মডেল সেরা মার্কিন এআই প্রতিষ্ঠানগুলোর তৈরি মডেলের সঙ্গে প্রতিযোগিতাও করছে৷’’
যদিও এআই দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তারপরও দেশটির প্রতিষ্ঠানগুলোর কোটি ডলার বিনিয়োগ তুলতে সময় লাগবে৷ ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তুলনামূলকভাবে ছোট লক্ষ্য নিয়ে আগাচ্ছে৷ তবে ইউরোপের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে চীন৷ ফলে এআইয়ে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই আরো বহুদিন চলবে৷
প্রতিবেদন: ম্যাথিয়েডস স্মিড্থ/এআই