কেনিয়ায় হ্রদের অস্তিত্ব বাঁচাতে বিশেষ উদ্যোগ
৩১ মে ২০২৩কেনিয়ায় ওলবোলোসাত হ্রদের দিকে নজর দিলেই সে দেশে খরার প্রকৃত মাত্রা বোঝা যায়৷ প্রায় ৯০ শতাংশ পানি শুকিয়ে গেছে, যেমনটা আগে কখনো ঘটে নি৷ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে বলে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিচ্ছেন৷ যেমন জলবায়ু বিজ্ঞানী হিসেবে ক্রিস নগএটিচ মনে করিয়ে দেন, ‘‘বেশিরভাগ জলবায়ুর মডেল অনুযায়ী খরার মতো চরম আবহাওয়ার ঘটনা আরও ঘনঘন এবং আরও মারাত্মক আকারে দেখা যাবে৷ মূলত বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এমনটা ঘটছে৷''
স্থানীয় মানুষের জন্যও খরা বড় এক সমস্যা৷ অনেক চাষি নিজেদের রুজি-রুটি হারানোর আশঙ্কা করছেন৷ লাগাতার তাপপ্রবাহের কারণে গোটা দেশে চাষের খেত ঝলসে গেছে৷ চাষি হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে পল মবাতিয়া বলেন, ‘‘অবস্থা সত্যি খুবই খারাপ৷ বেশ কয়েক বছর ধরে আমাদের এখানে বৃষ্টি হয় নি৷ খেতে যেমনটা দেখলেন, অনেক ফসল নষ্ট হয়ে গেছে৷ আমাদের গাছপালার বেহাল অবস্থা৷ আমরা সত্যি বৃষ্টির অপেক্ষায় রয়েছি৷''
বছরের পর বছর ধরে ওলবোলোসাত হ্রদের এমন সমস্যার জন্য স্থানীয় হস্তক্ষেপ দায়ী৷ স্থানীয় সংরক্ষণ গ্রুপগুলির সূত্র অনুযায়ী, বন নিধন ও নির্মাণ কার্যকলাপের জের ধরে হ্রদের পানিতে বিশাল পরিমাণ মাটি ফেলা হয়েছে৷ তার উপর মানুষ প্রায়ই সেই এলাকার ভূগর্ভস্থ পানিও তুলে নেন৷ সংরক্ষণ গ্রুপের প্রধান ওয়াচিরা নজারি বলেন, ‘‘আমার পেছনের পাহাড় থেকে হ্রদের পানির কিছু অংশ আসে৷ পাহাড়ের মধ্যে অনেক পরিমাণ ভূগর্ভস্থ পানি রয়েছে৷ সেখান থেকে পানি উত্তোলনের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ন্ত্রণ বা প্রক্রিয়া মেনে চলতে হয় না৷''
আরও টেকসই পদ্ধতিতে পানির ব্যবহার চাষিদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ সেটাই নাইরোবি ওয়াটার ফান্ডের অন্যতম লক্ষ্য৷ বৃষ্টির মরসুমে জলাশয় থেকে পানি সংগ্রহ করে খেতে সেচের ব্যবস্থা করা যায়৷ সংগঠনের প্রতিনিধি জর্জ নজুগি বলেন, ‘‘ছাদ বা বাড়ির অন্যান্য অংশ থেকে গড়িয়ে পড়া পানি যাতে জলাশয়ে জমা করা হয়, আমরা তা নিশ্চিত করি৷ সেটা অন্যতম প্রযুক্তি৷ এছাড়া আমরা চাষিদের ধাপ চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করতে শেখাই, বিশেষ করে যে জমিতে ঢাল রয়েছে৷ নেপিয়ার ঘাস দিয়ে সেই ধাপগুলি স্থিতিশীল করা হয়৷ তখন পানি আর মাটি চুঁইয়ে নদীতে বয়ে যায় না৷''
এই তহবিল ইতোমধ্যেই প্রায় ১৬,০০০ চাষির এক নেটওয়ার্কের সঙ্গে কাজ করছে৷ তারা তিন মাসের জন্য প্রায় ২,০০০ একর এলাকায় ফুলের চাষ করতে যথেষ্ট সেচের পানি জমা করছে৷ ডেভিড কামাউ-ও এই প্রকল্পের ফলে উপকার পাচ্ছেন৷ নতুন এই প্রক্রিয়ার দৌলতে তিনি এমনকি খরার সময়েও চাষের জন্য যথেষ্ট পানি পাচ্ছেন৷ চাষি হিসেবে ডেভিড কামাউ বলেন, ‘‘নাইরোবি পানি প্রকল্প আমাকে একটি ওয়াটার প্যান দিয়েছে৷ আমি মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাজে লাগিয়ে পানি পাম্প করে একটি স্প্রিংকলার ব্যবহার করতে পারি৷''
মানুষের কার্যকলাপে পরিবর্তন না এলে হ্রদের জন্য হুমকি দূর হবে না৷ তবে পানির আরও টেকসই ব্যবহার সেটিকে হয়তো পুরোপুরি শুকিয়ে যেতে দেবে না৷
টুকু কারিউকি/এসবি