জার্মান উগ্র ডানপন্থিদেরকে মাস্কের সমর্থন, সম্পাদকের পদত্যাগ
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪জার্মানির উগ্র ডানপন্থি দল অলটারনেটিভ ফর ডয়চল্যান্ডকে (এএফডি) সমর্থন জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে টেক-বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ক৷ কট্টর ডানপন্থি হিসেবে পরিচিত এই দলটিকে সমর্থন জানিয়ে জার্মানির সংবাদমাদ্যম ভেল্ট আম সনটাগে একটি কলাম লেখেন তিনি৷ তাতে তিনি এএফডিকে জার্মানির ‘শেষ আশার আলো' বলে মন্তব্য করেন৷
জার্মানিতে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্রের এই টেক জায়ান্টের এমন সমর্থন নিয়ে জার্মান রাজনীতিতে শুরু হয়েছে বিতর্ক৷
আর কলামটি অনলাইনে প্রকাশিত হওয়ার পর সংবাদমাধ্যমটির মতামত বিভাগের এডিটর ইভা মারিয়ে কোগেল পদত্যাগ করেন৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে তিনি পদত্যাগের বিষয়টি জানান৷
কী বলেছেন মাস্ক
জার্মান সংবাদমাধ্যমে মতামত প্রকাশের আগে গত সপ্তাহে সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক বার্তায় মাস্ক বলেন, একমাত্র এএফডি-ই জার্মানিকে রক্ষা করতে পারে৷ বলা হচ্ছে, এক্সে দেওয়া ওই বার্তার বিস্তারিত জানাতেই মতামত লেখেন তিনি৷
মাস্ক লিখেছেন, ‘‘এএফডিকে যেভাবে কট্টর ডানপন্থি হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা৷ দলের প্রধান আলিসে ভিডেলের একজন শ্রীলঙ্কান সমলিঙ্গের সঙ্গী রয়েছেন৷ এটি কী আপনাদের কাছে হিটলারের মতো মনে হয়?''
মাস্কের দাবি, জার্মানির অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ, জ্বালানি সরবরাহ এবং অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারে শক্ত অবস্থান অবলম্বন করেছে এএফডি৷
তিনি লিখেছেন, ‘‘ডানপন্থি দল হিসেবে বিবেচনা করা হলেও এএফডি একটি রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রতিনিধিত্ব করে৷ বিষয়টি অনেক জার্মানের ভাবনার সাথে মিলে যায়, যারা মনে করে যে, তাদের উদ্বেগগুলো কর্তৃপক্ষ অবহেলা করছে৷ এটি বর্তমানের সমস্যাগুলোকে সামাধন করছে- রাজনৈতিক শুদ্ধতা ছাড়া, যা অনেক সময় সমস্যাকে ঢেকে দেয়৷
মাস্ক আরো লিখেছেন, ‘‘নিয়ন্ত্রিত অভিবাসন নীতির পক্ষে এএফডি, যা জার্মান সমাজে একীভূতকরণের বিষয়টি এবং জার্মানির সংস্কৃতি ও নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেয়৷ এর সাথে জেনোফোবিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই বরং এটি নিশ্চিত করে যে, বিশ্বায়নের দিকে ছুটতে গিয়ে জার্মানি নিজের পরিচয় হারিয়ে ফেলছে না৷
সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া
এদিকে মাস্কের কলামের পরই তার সাথে দ্বিমত করে আরেকটি মতামত প্রকাশ করেন সংবাদমাদ্যমটির ভবিষ্যত এডিটর-ইন-চিফ ইয়ান ফিলিপ বুরগার্ড৷
তিনি লিখেছেন, ‘‘মাস্ক যেভাবে বিশ্লেষণ করেছেন তা সঠিক কিন্তু সমস্যা সমাধানে তার যে পদক্ষেপ, অর্থাৎ একমাত্র এএফডি-ই জার্মানিকে রক্ষা করতে পারবে, তা মারাত্মক ভুল৷’’
সংবাদমাদ্যমটির অন্য সাংবাদিকেরাও এক্সে ইলন মাস্কের মতামতের বিরোধিতা করেন৷
‘জার্মান রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের চেষ্টা'
এএফডিকে সমর্থন করে মাস্কের এই মতামত নিয়ে জার্মান রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে৷ কোনো কোনো সাংসদ মাস্ক জার্মানির রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছেন বলেও অভিযোগ তোলেন৷
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং রক্ষণশীল দল সিডিইউর সাংসদ ইয়েনস স্ফান এক্সে দেওয়া এক পোস্টে লিখেছেন, ‘‘ইলন মাস্ক বলছেন, এএফডিকে যেভাবে দেখানো হয়, তার বাইরে গিয়ে দেখুন৷ তাহলে চলুন দেখি: ন্যাটো ত্যাগ করতে চায় এএফডি, নর্ড স্ট্রিম ২ আবার চালু করতে চায়৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী, পুটিনের সমর্থক, রাশিয়ার সমর্থক এএফডি৷ যুক্তরাষ্ট্র কি এটাই চায় যে এমন এক জার্মানি যেটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরে গিয়ে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ুক? ইউরোজোন ত্যাগ করতে চায় এএফডি, যেটি আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক পার্টনার৷ ইউরোজোনের ভেতরে আমরা ৪০ ভাগ বাণিজ্য করে থাকি৷ ইউরো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছাড়া জার্মান অর্থনীতি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়বে৷''
স্ফান জানান, জার্মানির গ্র্যুনহাইডে টেসলার (ইলন মাস্কের মালিকানাধীন) ফাক্টরি স্থাপনের বিরোধিতা করেছিল এএফডি৷
আরআর/এআই (এএফপি, ডিপিএ)