জার্মানির ১০টি মনোমুগ্ধকর পুরনো শহর
পুরনো কাঠের কড়িবর্গা দেওয়া বাড়ি, নাকি গথিক বা রেনেসাঁস শৈলীর? জার্মানির বহু পুরনো শহর যেন তাদের অতীতকে ধরে রেখেছে৷ আর সে অতীত এতই সুন্দর যে কাকে ছেড়ে কা’কে দেখি?
ল্যুবেক
এই হানসিয়াটিক শহরটির সমুদ্রযাত্রার সঙ্গে যোগ অনেক দিনের৷ শহরের কেন্দ্রটিকে একটি দ্বীপের মতো করে ধরে রেখেছে ট্রাফে নদীর দুই শাখা৷ নদীটি গিয়ে পড়েছে বালটিক সাগরে৷ মধ্যযুগের শেষ দিকে বাণিজ্যে ফুলে-ফেঁপে ওঠে ল্যুবেক৷ বহু বাড়ি দেখলে সেই সমৃদ্ধির একটা আন্দাজ পাওয়া যায়৷ প্রায় ১,৮০০ বাড়ি ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে সংরক্ষিত৷ ল্যুবেকের পুরনো অংশটিকে ১৯৮৭ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় যোগ করা হয়৷
ভিসমার
ল্যুবেকের মতো ভিসমারও একটি হানসিয়াটিক শহর৷ তবে ভিসমারের বালটিক সাগরের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগ আছে৷ ভিসমারও রয়েছে ইউনেস্কোর বিশ্ব সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের তালিকায়৷ ভিসমারে বিশেষভাবে দ্রষ্টব্য হল তার তিনটি বড় গির্জা, বন্দর ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক বাড়ি, যেগুলির চুড়ো আর বার্নিশ করা লাল ইট দেখলেই তাদের চেনা যায় (যেমন ছবিতে)৷
কোয়েডলিনবুর্গ
স্যাক্সনি-আনহাল্ট রাজ্যের কোয়েডলিনবুর্গ শহর ১৯৯৪ সাল থেকে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায়৷ কাঠের কড়িবর্গা দেওয়া প্রায় ১,২০০টি পুরনো বাড়ি, মাঝখান দিয়ে চলে গেছে সরু সরু গলি, মাঝেমধ্যে আসে কোনো খোয়াবাঁধানো চত্বর – প্রায় ছয় শতাব্দী ধরে কোয়েডলিনবুর্গে এই ধরনের বাড়িই তৈরি হয়েছে৷ আজ সেগুলো দেশ-বিদেশের পর্যটকদের দর্শনীয় বস্তু৷
গ্যোরলিৎস
জার্মানির একেবারে পুবের শহর গ্যোরলিৎসে রেনেসাঁস, গথিক ও ব্যারোক, এই তিন ধরনের শৈলী পাশাপাশি পাওয়া যাবে৷ হয়তো সেই কারণেই শহরটি ‘লোকেশন’ হিসেবে হলিউডের এত প্রিয়: ‘ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস’, ‘গ্র্যান্ড বুদাপেস্ট হোটেল’ ও ‘গ্যোটে’র মতো ছবির শুটিং হয়েছে এখানে৷ ছবিতে কৃত্রিম তুষারসহ একটি ফিল্মের সেট দেখা যাচ্ছে৷
ফ্রিৎসলার
হেসে রাজ্য তার অসংখ্য ‘হাফ-টিম্বার্ড’ বাড়ি, অর্থাৎ কাঠের কড়িবর্গার বাড়ির জন্য বিখ্যাত৷ বাড়িগুলিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকার ও জনসাধারণ সচেষ্ট৷ এই বাড়িগুলির কাঠামো কাঠের, কিন্তু বাকি দেয়াল ও মেঝে কাদামাটির – তবুও বাড়িগুলো শক্তপোক্ত৷ ফ্রিৎসলারের বাজারের চত্বরটি চতুর্দ্দিকে ‘হাফ-টিম্বার্ড’ বাড়ি দিয়ে ঘেরা৷
বামব্যার্গ
ঐতিহাসিক বামব্যার্গের কেন্দ্রে রয়েছে তার পুরাতন টাউন হল৷ শহরটির পরিচিতি চিহ্ন এবং পর্যটকদের ছবি তোলার প্রিয় মোটিফ৷ টাউন হলটি রেগনিৎস নদীর বুকে একটি কৃত্রিম দ্বীপের উপর নির্মাণ করা হয়৷ বামব্যার্গের ২,০০০টি সংরক্ষিত বাড়ির মধ্যে এই টাউন হলও পড়ে৷ শহরের পুরনো অংশ ১৯৯৩ সালে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি পায়৷
হাইডেলব্যার্গ
নেকার নদী, পুরনো ব্রিজ, দুর্গ আর শহরের পুরনো অংশ মিলিয়ে হাইডেলব্যার্গ ছিল রোম্যান্টিক যুগের রোম্যান্টিকদের কাছেও রোম্যান্টিক৷ গ্যোটে, হ্যোল্ডারলিন, হাইনে ও হেগেলের মতো স্বনামধন্য জার্মান কবি ও দার্শনিকরা হাইডেলব্যার্গকে নিয়ে উচ্ছ্বাস করেছেন৷ আজও প্রায় এক কোটি বিশ লাখ টুরিস্ট প্রতিবছর হাইডেলব্যার্গে যান৷
রোটেনবুর্গ অব ডের টাউবার
পুরনো জার্মান শহর বলতে যা বোঝায়, বাভারিয়ার রোটেনবুর্গ শহরটি যেন তার পরাকাষ্ঠা৷ প্রাকার দিয়ে ঘেরা, আঁকাবাঁকা গলির দু’ধারে কাঠের কাঠামোর বাড়ি৷ শহরটির মধ্যযুগীয় কেন্দ্র সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে, তার চারপাশে দুর্গপ্রাকারের মতো প্রাচীরটি দিয়ে হেঁটে বেড়ানো যায়৷ আধুনিক সভ্যতার কোনো বাহ্য নিদর্শন চোখে পড়ে না৷ জার্মান পর্যটন শিল্পে যাকে ‘রোম্যান্টিক রোড’ বলা হয়, রোটেনবুর্গ তার একটি মূল আকর্ষণ৷
পাসাউ
ইলৎস, ইন ও ড্যানিউব, এই তিনটি নদী এসে মিলেছে পাসাউ শহরে৷ ইন আর ড্যানিউবের মাঝে এক ফালি জমির ওপর পাসাউ-এর প্রাচীন অংশ – সপ্তদশ শতাব্দীর ব্যারোক শৈলীর কিছু অসাধারণ নিদর্শন৷ একাধিক গির্জা ও খ্রিষ্টীয় মঠ আছে এখানে, যার মধ্যে সেন্ট স্টিফেন্স ক্যাথিড্রাল সবার মাথা ছাড়িয়ে৷ এই ক্যাথিড্রালের অর্গানটি আবার বিশ্বের অন্য যে কোনো ক্যাথিড্রালের অর্গানের চেয়ে বড়৷
ফ্রাইবুর্গ
ব্ল্যাক ফরেস্টের পাদদেশে ফ্রাইবুর্গ শহরটির ‘চার্ম’ আলাদা৷ বিশেষ করে শহরের পুরনো অংশে পথের ধারে যে ছোট ছোট নালাগুলো দিয়ে পানি বয়ে যায়, সেগুলি৷ এই নালাগুলো খুব সম্ভবত শহরের ময়লা পানি নিষ্কাশন প্রণালীর অঙ্গ ছিল৷ তবে মনে রাখবেন, এই নালার পানিতে পা দিলে নাকি শেষমেশ ফ্রাইবুর্গের কারুর সঙ্গে বিয়ে হয়!