জোড়াসাঁকোর অন্দরমহলে
কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি এখন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ হিসেবে ব্যবহৃত৷ এই বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর৷ আধুনিক বাংলা সাহিত্যে এই বাড়ির অবদান অনস্বীকার্য৷
যাবার দিনের কথা
বারান্দায় কবির মূর্তির সামনে রয়েছে একটি ট্রেনের অনুকৃতি। শান্তিনিকেতন থেকে যে ট্রেনে কবিকে শেষবারের মতো কলকাতায় আনা হয়, এটি তারই অনুকৃতি। ভারতীয় রেল ঠাকুরবাড়িকে এই উপহার দিয়েছে।
দিনুর ঘর
রবীন্দ্রসঙ্গীতের ‘সকল গানের ভাণ্ডারী’ দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর অধিকাংশ রবি গানের স্বরলিপিকার ছিলেন। কবি নতুন কোনও গান রচনা করার পরপরই দিনেন্দ্রনাথ স্বেচ্ছায় বা কবির নির্দেশে সে গান কণ্ঠে তুলে নিতেন।
নিরাকারের জন্য প্রার্থনাস্থল
বাড়ির পুরনো অংশের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে দালানটি। ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার আগে এটি ছিল ঠাকুরদালান। তখন এখানে দুর্গাপুজো হত। ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষার পর এই দালান নিরাকার ব্রহ্মকে উৎসর্গ করা হয়।
প্রাচীন ঠাকুরবাড়ি
১৭৮৪ সালে এই দালান অংশের নির্মাণকাজ শুরু হয়। এর বিপরীতে রয়েছে একটি স্থায়ী মঞ্চ। এখানেই বাল্মিকী প্রতিভা নাটক নিয়ে কবির আত্মপ্রকাশ।
শয়নকক্ষ
কবি ও কবিপত্মী মৃণালিনী দেবীর ব্যবহৃত এই ঘরটিতে রয়েছে অনুচ্চ গদিযুক্ত লম্বা পালঙ্ক, বই রাখার তাক ও বেতের চেয়ার। রয়েছে বেশ কয়েকটি ছবি। তার মধ্যে একটি গুরুদেবের শান্তিনিকেতনে ক্লাস নেওয়ার ছবি।
এসো বস আহারে
দোতলায় সিঁড়ি দিয়ে উঠেই প্রথমে পড়ে ঠাকুরবাড়ির ভোজন কক্ষ। টেবিল ও হেলান দেওয়া চেয়ারে প্রতিফলিত ঠাকুর পরিবারের আভিজাত্য।
রাজা সাজার ঘর
কবির ব্যবহৃত পোশাক-পরিচ্ছদের ঠাঁই ছিল এখানেই। বিচিত্রা ভবনে যতবার পারিবারিক নাটকের আয়োজন হয়েছে, কবি এই আয়নায় নাটকের সাজ করেছেন। ঘরটিতে সাজানো রয়েছে কবির নানা বয়সের ছবি।
দক্ষিণের বারান্দা
জীবনস্মৃতিতে উল্লিখিত সেই দক্ষিণের বারান্দা এটাই। এখানে কবির জীবনের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে। এই বারান্দা পেরিয়েই যে ঘর, সেখানে রয়েছে বংশ তালিকা। বারান্দার আবরণীর ওপাশে দেখা যাচ্ছে বাড়ির পুরোনো অংশ।
সঙ্গিনীর শেষের দিনে
জীবনের শেষের দিকে কবি-পত্নী এই ঘরেই কাটিয়েছেন। এমনকী তাঁর শেষশয্যাও এখানেই পাতা হয়েছে। সারা রাত মৃত্যুশয্যায় স্ত্রীকে পাহারা দেওয়ার পর কবি চলে গিয়েছিলেন ছাদে। আজও কাঁচের আলমারিতে তাঁর ব্যবহৃত শাড়িটি পরম যত্নে রাখা।
ওই দেখা যায় হেঁশেল
দোতলার রান্নাঘরটি বেশ ছিমছাম এবং আলোবাতাস পূর্ণ। এখানেই জাপানি অতিথিদের জন্য নাকি প্রথমবার চা খাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। আমদানি করা হয়েছিল চায়ের সরঞ্জাম সমূহ। হেঁশেলের আলমারিতে রাখা আছে দেড়শো বছরের পুরনো চিনামাটির পাত্র ও পাথরের বাসনপত্র।
ভোজের উৎসস্থল
ঠাকুরবাড়ির যাবতীয় সৃজনশীল রান্নার উৎসস্থল দোতলার এই মাটির উনুন। প্রজ্ঞাসুন্দরী দেবী বা মৃণালিনী দেবীর নানা রকম অভিনব আয়োজনের শরিক এই উনুনই। চা করার জন্য কয়লার চুল্লিরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
যাত্রী নেই
কবিগুরুর ব্যবহৃত কালো রঙের এই গাড়ি আজ সম্পূর্ণ বিশ্রামে। অনেক আলোকবর্ষ দূরে চলে গিয়েছেন এই গাড়ির যাত্রী। তাঁর স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে জোড়াসাঁকোয়।
ছবির ঘর
প্রবীণ কবির কাছে ক্যানভাসই হয়ে উঠেছিল কবিতা। কবিগুরুর নানা ছবির সম্ভার রয়েছে এই ঘরে।
আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু
দেওয়ালে টাঙানো ছবিগুলো দেখলে বোঝা যায় এ তাঁর রোগশয্যার চিহ্ন। এই প্রয়াণকক্ষেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এর পিছনের ঘরে পর্দা টেনে তাঁর অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকেরা।