ড. ইউনূস-সুলিভান ফোনালাপ : যা জানানো হয়, যা জেনে নিতে হয়
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪সোমবার রাতের এই ফোনালাপ নিয়ে হোয়াইট হাউস একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি দিয়েছে৷ তাতে বলা হয়েছে, ‘‘দুই নেতাই সব ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষের অধিকারের প্রতি সম্মান এবং প্রতিশ্রতির প্রতি অঙ্গীকার প্রকাশ করেছেন৷’’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘‘একটি চ্যালেঞ্জিং সময়ে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সুলিভান৷’’
সমৃদ্ধ, স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন জেইক সুলিভান৷ বাংলাদেশ যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে, সেগুলো মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সমর্থনের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি৷
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর যা বলছে
ঢাকায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘‘তাদের দুইজনের আলোচনায় দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থের বিষয় উঠে আসে৷ গত ৮ আগস্ট দায়িত্ব গ্রহণের পর গত সাড়ে চার মাস ধরে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারে যে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তার প্রশংসা করেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা৷’’
বাংলাদেশের অর্থনীতি ইতোমধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক, নির্বাচন সংক্রান্ত এবং অন্যান্য সংস্কার শুরুর বিষয়ে যে অগ্রগতি হয়েছে, জেইক সুলিভান তারও প্রশংসা করেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়৷
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করায় প্রধান উপদেষ্টাকে তিনি ধন্যবাদ দেন এবং বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় মার্কিন সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন৷
প্রফেসর ইউনূস দেশের প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকা সংকট কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশকে উদার সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান৷
প্রফেসর ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পুনরায় সমর্থন জানিয়ে জেইক সুলিভান একটি সমৃদ্ধ, স্থিতিশীল ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের জন্য মার্কিন সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলে নিশ্চিত করেন৷
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান৷ তিনি সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্ক সফরের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে তার বৈঠকের কথা স্মরণ করেন৷
বিজ্ঞপ্তি অনযায়ী টেলিফোন কথোপকথনে জানুয়ারি মধ্যে ছয়টি বড় সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন প্রফেসর ইউনূস৷ তিনি বলেন, এরপর সংস্কার ও নির্বাচনের জন্য জাতিকে প্রস্তুত করতে জাতীয় ঐকমত্য গঠন গঠন প্রক্রিয়া শুরু হবে৷
হোয়াইট হাউসের বিবৃতি আরো যা বলছে
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেয়া বিবৃতিতে মানবাধিকারের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়নি৷ তবে হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে তার স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে৷
এ প্রসঙ্গে সাবেক কূটনীতিক সাকিব আলী বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে যা জানা গেছে তাতে ওই ফোনালাপে তিনটি মেসেজ আছে৷ প্রথমত, ইউনূস সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পুরোপুরি সমর্থন আছে৷ এবং একটি গণতান্ত্রিক ও মুক্ত বাংলাদেশের প্রতি তাদের সমর্থন আছে৷ দ্বিতীয়ত, সকল ধর্মাবলম্বীসহ নাগরিকদের নিরাপত্তা তারা দেখতে চায় এবং তৃতীয়ত, বাংলাদেশের জন্য তাদের সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে৷’’
তার কথা, ‘‘ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পর বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন৷ জানুয়ারিতেই তিনি দায়িত্ব নিচ্ছেন৷ তার আগে বিদায়ী বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের ব্যাপারে তাদের অবস্থান প্রকাশ করলো৷ ট্রাম্পের সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে বক্তব্যের রেসপন্সে বাইডেন প্রশাসনও সব ধর্মের মানুষের মানবাধিকার নিয়ে কথা বললো৷ এটাও এক ধরনের ধারবাহিকতা৷’’
আর সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উপদেষ্টার বার্তা মানে হোয়াট হাউসের বার্তা৷ এতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নীতি প্রতিফলিত হয়েছে৷ তার মতে, ‘‘ড. ইউনূস এবং জেইক সুলিভানের ফোনালাপের মূল বার্তা হলো মানবাধিকার৷ তারা নিরাপত্তার বিষয়ে কনসার্ন৷ এখানে সব ধর্মের মানুষের মধ্যে সংখ্যালঘুও আছে৷ এখন এখানে যে নিরাপত্তার নানা সংকটি তৈরি হচ্ছে৷ আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হচ্ছে৷ তাদের কথা হলো, বাংলাদেশের সঙ্গে আমরা আছি, তবে মানবাধিকারের বিষয়ে আমাদের কনসার্ন আছে৷’’
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলন, ‘‘হোয়াইট হাউসের বিবৃতিকে সব ধর্মের মানুষের অধিকারের ব্যাপারে আলোচনা এবং প্রতিশ্রুতির কথা বলা হলেও প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে সেটার উল্লেখ করা হয়নি৷ এর কারণ হতে পারে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে ইতিবাচক দিকগুলোই জানানো হয়েছে৷ কিন্তু হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে আলোচনার মূল বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে৷’’
অন্যদিকে আরেকজন সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) এম শহীদুল হক মনে করেন, ‘‘ইউনূস সরকারের প্রতি যে বাইডেন প্রশাসনের আস্থা আছে সেটাই আসলে তাদের ফোনালাপে প্রকাশ পেয়েছে৷ অন্য যে ইস্যুগুলো সেগুলো সাইড লাইনের আলা৷’’
তার কথা, ‘‘তবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে অপপ্রচার হচ্ছে, তার একটা প্রভাব আছে৷ আর আওয়ায়ামী লীগের পলাতক নেতাদের তৎপরতা আছে। ফলে সংখ্যালঘু, মানবাধিকার প্রসঙ্গ সামনে আছে৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘ট্রম্প দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন এই নীতির যে খুব পরিবর্তন হবে, তা মনে করি না৷’’
এর আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গত ১০ ডিসেম্বর জানানো হয়, সংখ্যালঘুদের ‘টার্গেট' করে সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৮৮টি মামলা এবং ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷