ঢাকার ইলিশ এসে দাম কমালো কলকাতার ইলিশের
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌজন্যে কলকাতার বাজারে এখন ইলিশই ইলিশ। দামও কমেছে অনেকটা।
ইলিশের তুলনা নেই
ইলিশ স্বাদে যেমন অনন্য তেমনই এর ব্যতিক্রমী জীবন চক্রের সঙ্গে তুলনা হয় না অন্য কোনও মাছের। লবনাক্ত জলের মাছ, শুধুমাত্র ডিম পাড়তে স্রোতের বিপরীতে এসে মিষ্টি জলে পৌঁছায়। ফলে স্বাদে তা অনন্য। বাঙালির রসনাতৃপ্তির জন্য ইলিশের কোনো বিকল্প নেই।
শেখ হাসিনার সৌজন্যে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌজন্যে এখন কলকাতার বাজারে ঢালাও বাংলাদেশের ইলিশ। চওড়া পেট। এদিকের ইলিশের তুলনায় তেল কিছুটা বেশি। এই ইলিশের তুলনা মেলা ভার।
এক থেকে দেড় কেজি ওজন
বাংলাদেশ থেকে যে ইলিশ এসেছে, তা এক থেকে দেড় কেজি ওজনের। খাদ্যরসিকদের মতে, দেড় থেকে দুই কেজির ইলিশের স্বাদের কোনো তুলনা নেই। সঙ্গে যদি ডিম থাকে তাহলে তো ভুবমমোহন।
দাম কত?
মানিকতলা বাজারের মাছ বিক্রেতা স্বপন মাঝি জানালেন, এখন তারা শুধুই বাংলাদেশের ইলিশ বিক্রি করছেন। এক কেজি ওজনের বাংলাদেশের ইলিশ এখন এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, ক’দিন আগে এটাই ১৮০০ টাকায় বিকিয়েছে। ওজন বাড়লে দামও বাড়বে।
কলকাতার ইলিশের দাম কমেছে
বাংলাদেশের ইলিশ আসার আগে কলকাতায় ইলিশ বিক্রি হচ্ছিল দেড় হাজার টাকা কেজি দরে। বাংলাদেশের ইলিশে বাজার ছেয়ে যাওয়ায় কলকাতার ইলিশের দাম কমেছে। এখন ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাতশ থেকে আটশ টাকায়। এক কেজি হলে এক হাজার থেকে বারোশ।
কোলাঘাটের ইলিশ
পদ্মার ইলিশ যেমন বিখ্যাত, তেমনই নামডাক রয়েছে কোলাঘাটের ইলিশের। রূপনারায়ণের স্রোতে একসময় জাল ফেললেই উঠে আসত ঝাঁকে ঝাঁকে রূপোলি শস্য। কিন্তু সেই দিন আর নেই।
কমে গেছে
অর্জুনপুর বাজারের মাছ বিক্রেতা তাপস রাজবংশী বললেন, “সত্যি কথা বলতে, কোলাঘাটের মাছ ২০১৬ সালের পরে এইদিকের বাজারে দেখা যায়নি। রূপনারায়ণ নদীর গভীরতা এখন কমে গেছে। ইলিশ তো গভীর জলের মাছ, তাই আর ওখানে আসে না।”
নাব্যতা ও দূষণ
কোলাঘাটের এক মৎসজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শুধুমাত্র রূপনারায়ণের নাব্যতাই নয়, দূষণও এর একটা বড় কারণ। সামনেই কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং একটি বেসরকারি সিমেন্ট কারখানার দূষিত জলও রূপনারায়ণে এসে মেশে। মিষ্টি জলের আশায় বঙ্গোপসাগর থেকে আসা মাছেরা তাই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
মাথায় হাত
ইলিশের ওপরেই নির্ভরশীল কোলাঘাটের একটা বড় অংশের মৎসজীবী। তারা জানাচ্ছেন, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র এই তিনটে মাসের দিকে তাকিয়ে থাকতেন তারা। একেকদিনে একটি নৌকায় এক থেকে দেড় কুইন্টাল পর্যন্ত মাছ ধরেছেন একসময়। আজ চাহিদা থাকলেও মাছ নেই।
ছোট জালে ছোট ইলিশ
রয়েছে অভিযোগও। সমুদ্রে ছোট ফাঁসযুক্ত জাল ব্যবহার করে ইলিশের পোনা ধরে নেওয়া হচ্ছে। গেঁওখালিতেই হুগলি-রূপনারায়ণ-দামোদর সঙ্গম। এখানে হুগলি থেকে ইলিশ-ঝাঁক রূপনারায়ণে ঢোকে। তার আগেই অধিকাংশ মাছ ধরে নেওয়ায় কোলাঘাট পর্যন্ত ইলিশ প্রায় আসছেই না।
ডায়মন্ড হারবারের ইলিশ
ছবিটা কিছুটা অন্যরকম ডায়মন্ড হারবারে। গত দেড় দিনে প্রায় ১২০ টন ইলিশ এসেছে ডায়মন্ড হারবারের নগেন্দ্রবাজারে। এই মরসুমে তো বটেই, গত কয়েক বছরে এত ইলিশ এক সঙ্গে আসেনি বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। শুধু পরিমাণেই নয়, গায়েগতরেও বড়সড় ইলিশ ধরা পড়েছে জালে।
কারণ কী?
ডায়মন্ড হারবারে এত ইলিশ ধরা পড়ার কারণ কী? মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, ঝোড়ো হাওয়ায় বাংলাদেশের দিকে নয়, সামুদ্রিক স্রোত ভারতের দিকে বয়ে গিয়েছে। আর সে কারণেই ডায়মন্ড হারবারে এই বার এত ইলিশের আমদানি। মৎস্যজীবীদের আশা আগামী কয়েকদিন আরও ইলিশ উঠবে।
পুজোর মরশুমে
পুজোর উপহার হিসেবে বাংলাদেশ সরকার ২৪৫০ টনের কাছাকাছি ইলিশমাছ পশ্চিমবঙ্গে পাঠিয়েছে। এর পরই ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধে সরকারকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন অ্যাডভেকেট মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান। তার অভিযোগ ভারতে ইলিশ রপ্তানি করায় ঢাকায় দাম বেড়েছে। কিন্তু কলকাতার বাজারে ইলিশের দাম কমেছে। পুজোর মরশুমে পশ্চিমঙ্গের বাঙালির পাতে ইলিশ থাকছে।
ঢাকার ইলিশই পছন্দ
কলকাতা শহরের এক বিখ্যাত বাঙালি খাবারের রেস্তোঁরার মালিক নৃপেন্দ্র চন্দ্র ভৌমিক জানান, তারা বাংলাদেশের ইলিশই ব্যবহার করেন। কারণ, বাংলাদেশের ইলিশের স্বাদ অন্য কোনও জায়গার ইলিশের স্বাদের সঙ্গে মেলে না। তাদের রেস্তোঁরায় অভ্যাগতদের একটা বড় অংশই কলকাতায় কাজে বা বেড়াতে আসা বাংলাদেশি।
দাম বেশি হলেও বাংলাদেশের ইলিশ চাই
একই চিত্র আরেক বিখ্যাত বাঙালি রেস্তোঁরাতেও। তাদের বক্তব্য, বাংলাদেশের ইলিশের দাম যদি পাঁচ হাজার টাকা কেজি হয়ে যায়, তাহলেও সেই মাছই কিনতে হবে।