ঢেলে সাজানো হচ্ছে জার্মানির পরিত্যক্ত কয়লাখনি অঞ্চল
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩জার্মানির পূ্র্বাঞ্চলে গ্রোসকোশেন গ্রাম৷ বার্লিনের প্রায় দেড়শো কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পোল্যান্ডের সীমান্তের কাছে অখ্যাত জায়গাটি একহার্ড হোইকার বাইক রেন্টালের বিপুল চাহিদার কারণে অঞ্চলের পর্যটকদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে৷
২০ বছর আগে হোইকা যখন তাঁর ব্যবসা শুরু করেছিলেন, তখন কেউ বিশ্বাসই করে নি যে লাউসিৎস নামের এই অঞ্চল আদৌ কোনো পর্যটক আকর্ষণ করতে পারবে৷ কয়লাখনির জন্য পরিচিত এই অঞ্চলের গঠন অনেকটা চাঁদের পৃষ্ঠের মতো৷ একহার্ড বলেন, ‘‘সবাই আমাকে প্রশ্ন করতো, তুমি কী করো? মানুষকে গর্ত দেখাও? সে সময় মানুষের মনমেজাজ ভালো ছিলো না৷ তখন ওপেন কাস্ট মাইনের অনেক পিট তখনো চালু ছিলো৷ আজ স্থানীয় মানুষ অতীত নিয়ে গর্ব করে৷''
লাউসিৎসের কয়লা শিল্পে এক সময়ে প্রায় ৮০,০০০ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে৷ কিন্তু গত শতাব্দীর নব্বাইয়ের দশকের শেষে জার্মানির জ্বালানি খাতের কাঠামো ঢেলে সাজানো হয়৷ সে সময়ে অনেক খনি বন্ধ হয়ে যায়৷ প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মী ছাঁটাই করা হয়৷ প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে একজন সেই অঞ্চল ছেড়ে চলে যান৷ বর্তমানে জার্মানি ২০৩৮ সালের মধ্যে কয়লার ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে৷ লিগনাইট উত্তোলনের শেষ ওপেন কাস্ট মাইনও বন্ধ হয়ে যাবে৷
খনিগুলি ধাপে ধাপে ইউরোপের সবচেয়ে বড় হ্রদ এলাকায় রূপান্তরিত করা হচ্ছে৷ প্রায় সাড়ে তিনশো বর্গ কিলোমিটার জুড়ে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে৷ এই উদ্যোগ লাউসিৎস অঞ্চলকে পরিবেশবান্ধব ছুটি কাটানোর জায়াগা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে সাহায্য করছে৷
আজ এই অঞ্চলে চওড়া সাইকেল ট্র্যাক, হোটেল ও নানা সৌধ শোভা পাচ্ছে৷ ‘রাস্টি নেল' নামের এক সৌধ শিল্পাঞ্চলের অতীত চিত্র তুলে ধরছে৷ টাওয়ারের উপর থেকে দর্শকরা আরেকটি হ্রদের নির্মাণকাজ দেখতে পারেন৷ অতীতের ওপেন কাস্ট মাইনে ধীরে ধীরে ভূগর্ভস্থ পানি ভরা হচ্ছে৷
সেই এলাকায় সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষেধ৷ বহু দশকের খনন কাজের কারণে সেখানকার মাটি বেশ আলগা৷ ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত বেড়ে চলায় পায়ের নীচে মাটি ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে৷ লাউসিৎস খনি সংগঠনের প্রতিনিধি ফিলিপ সোলটাউ বলেন, ‘‘কয়েক প্রজন্ম ধরে এই কাজ চলবে৷ মৌলিক পুনর্গঠনের উদ্যোগের আওতায় আমাদের আরো ৩০,০০০ হেক্টর জমি নিরাপদ করে তুলতে হবে৷ নির্দিষ্ট কিছু প্রযুক্তিরও উন্নতি করতে হবে৷ যেমন জমির ক্ষতি না করে মাটি শক্ত করার ‘ব্লাস্ট ইনডিউস্ড কমপ্যাকশন' পদ্ধতি পরীক্ষা করছি৷''
এখনো পর্যন্ত গোটা এলাকার রূপান্তর সত্যি নাটকীয়৷ এমন কাজ করার কোনো পূর্বনির্ধারিত ব্লুপ্রিন্টও নেই৷
গাড়িতে করে প্রায় আধ ঘণ্টা দূরে গেলে গ্রিনহাউস নামে পরিচিত এক জায়গায় তিন হাজারেরও বেশি প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতি নতুন বাসা পেয়েছে৷ জায়গাটি জীববৈচিত্র্যের ‘হটস্পট' হয়ে উঠেছে৷ ইকোলজিস্ট হিসেবে স্টেফান ব়্যোরশাইড বলেন, ‘‘প্রকৃতি কীভাবে মানুষের সাহায্য ছাড়াই নিজস্ব শক্তি দিয়ে আবার জমি দখল করছে, আমরা সেটা দেখতে পাচ্ছি৷ এই জায়গাটির ভালোই উন্নতি হয়েছে৷ জার্মানির একটি প্রজাতি এখানেও ভালোভাবে বেড়ে উঠেছে৷ সেটা হলো ‘বুশগ্রাস'৷
স্টেফান ব়্যোরশাইড সেই সব ইকোলজিস্টদের একজন, যিনি এই এলাকায় হস্তক্ষেপ না করে প্রকৃতির হাতে তুলে দেবার পরামর্শ দিয়েছিলেন৷
লাউসিৎস এখন সবুজ পর্যটন গন্তব্য হয়ে উঠেছে৷ শিল্পাঞ্চলের ঐতিহ্যের ইতিহাস সম্পর্কে পর্যটকদের ধারণা দিতে বেশ কিছু কর্মসূচি চালু হয়েছে৷
জার্মানির প্রায় ৫০ শতাংশ জ্বালানি ইতোমধ্যেই পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎস থেকে আসছে৷ সে দেশের কয়লা-পরবর্তী জীবনযাত্রার রোডম্যাপ ভারতের মতো অন্যান্য দেশেরও কাজে লাগতে পারে৷
নিকোল রিসইয়ুডিট শালার/এসবি