থাইল্যান্ডে বেওয়ারিশ লাশের গণসৎকার
চীনা অভিবাসীদের হাত ধরে থাইল্যান্ডে এক অভিনব মৃতদেহ সৎকারের রীতি চালু হয়৷ এর নাম লাং পা চা ৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
বিশেষ নিয়মে সৎকার
চীনের সং রাজাদের আমলে শুরু হয় লাং পা চা রীতি, যা থাইল্যান্ডে রাথে করে নিয়ে আসেন চীনা অভিবাসীরা৷ এই রীতি অনুযায়ী, যাদের অপঘাতে মৃত্যু হয়েছে বা যাদের পরিচিতি জানা যায়নি, তাদের দেহাংশকে আবার সৎকার করা হয়, বিশেষ নিয়ম মেনে৷
কী হয় এই রীতিতে?
লাং পা চা রীতি মেনে থাইল্যান্ডের ৭৭টি রাজ্যেই মৃতদেহের সৎকার আয়োজন করে থাকে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন৷ বৌদ্ধ ও তাও রীতি মেনে মৃতদেহগুলিকে কবর থেকে তুলে তাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে নানা ধরনের জিনিস দিয়ে সাজানো হয়৷ তারপর, সেই দেহাবশেষ পোড়ানো হয়৷ এই রীতির লক্ষ্য হলো বেওয়ারিশ লাশের আত্মার স্বর্গ যাত্রা নিশ্চিত করা৷
পবিত্র পানিতে পরিষ্কার
দেহাবশেষগুলি কবর থেকে বের করার পর কঙ্কালগুলিকে টুথব্রাশের সাহায্যে পরিষ্কার করা হয়৷ পরিষ্কারের জন্য ব্যবহৃত হয় একটি বিশেষ পবিত্র পানি৷ এই কাজ করেন মূলত বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী স্বেচ্ছাসেবকরা৷ তারপর, একজন ধর্মীয় গুরু এসে মৃত ব্যক্তির লিঙ্গ পরিচিতি নিশ্চিত করেন৷ এরপর সেই হাড়ের গায়ে বসানো হয় সোনার তবক৷
কেন এই কাজ করেন স্বেচ্ছাসেবকেরা?
৬৩ বছর বয়েসি টনপ্লয় বুনপর্ন জানালেন তার অভিজ্ঞতা৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি লাং পা চা করতে শুরু করি ২০ বছর আগে, একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে৷ এরপর ভেতরে সত্যি একটা আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা বোধ হয়৷ তাই আর থামিনি, এই কাজ করে চলেছি৷’’
যেভাবে বিদায় জানানো হয়
পুরুষ ও নারীদের জন্য রয়েছে দাহের আলাদা ব্যবস্থা৷ শুধু সোনার তবকে মোড়াই নয়, বিদায়ের আগমুহূর্তে স্বেচ্ছাসেবকেরা কঙ্কালগুলির পাশে সাজিয়ে রাখেন টাকাও৷
সব লাশ বেওয়ারিশ নয়
২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে মারা যায় দু’মাস বয়সি বিবেয়াম৷ তার শহরের মন্দিরগুলি মৃতদেহ দাহ করতে রাজি হয়নি, কারণ তার বয়স অনেক কম৷ কোনো ধর্মীয় রীতি ছাড়াই তাকে সমাধিস্থ করা হয় আরেকটি জায়গায়৷ অবশেষে, এক বছর পর, তার বাবা-মায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী, বিবেয়ামের শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়, বৌদ্ধ রীতি মেনেই৷
কাদের জন্য এই রীতি?
থাইল্যান্ডে মৃতদেহ দাহের চল রয়েছে বহুদিন ধরেই৷ শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন বিবেয়ামের ক্ষেত্রে, বা পরিচয়হীন বেওয়ারিশ লাশের ক্ষেত্রে, সেই সব মৃতদেহকে কবর করা হয়৷ এর মধ্যে রয়েছে বহু পরিযায়ী শ্রমিকের লাশও, যাদের পরিচিতি শনাক্ত করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ৷