দক্ষিণ আফ্রিকায় হাঙর সংরক্ষণের অভিনব উদ্যোগ
২৩ মে ২০২৩পরিযায়ী নীল হাঙর দক্ষিণ আফ্রিকা উপকূলে প্রায়ই ঢুঁ মারে৷ ‘পাফাডার' জাতের লাজুক হাঙর এবং ‘গালি শার্ক' সমুদ্রের নীচে বাদামী অ্যালজির বনেই থাকতে ভালোবাসে৷ প্রায়২০০ প্রজাতির হাঙর এমন জলজ উদ্ভিদের মাঝে বাস করে৷ হাঙর বিশেষজ্ঞ রায়ান ডালি নিয়মিত এই প্রাণীার কার্যকলাপের উপর নজর রাখেন৷ তাঁর মতে, ‘‘হাঙর সংরক্ষণ করতে হলে তাদের গতিবিধি, তারা কোথায় সময় কাটায়, সেসব আমাদের জানতে হবে৷ আমরা এই সব হাঙরের পিছু নিয়ে তাদের ‘ক্রিটিকাল হ্যাবিট্যাট' চিহ্নিত করতে পারি৷ তারপর সেই এলাকায় সুরক্ষার উন্নতি করতে পারি৷''
তিনি ও তাঁর টিম হাঙরের গায়ে অ্যাকুস্টিক ট্রান্সমিটার লাগিয়ে প্রাণীগুলির গতিবিধির উপর নজর রাখেন৷ হাঙর সেই প্রক্রিয়া প্রায় টেরই পায় না৷ একবার ‘ট্যাগ' করা হলে ট্রান্সমিটার ছয় বছর পর্যন্ত সংকেত পাঠাতে পারে৷ রায়ান ডালি জানালেন, ‘‘গত কয়েক বছরে আমরা দশ থেকে বারো প্রজাতির একশোরও বেশি হাঙরের শরীরে ট্রান্সমিটার বসিয়েছি৷ সেগুলির মধ্যে কয়েকটি লুপ্তপ্রায় প্রজাতি৷ কয়েক বছর ধরে সেই প্রাণীর গতিবিধির উপর নজর রেখে তাদের জন্য ‘ক্রিটিকাল এরিয়া' শনাক্ত করার আশা করছি৷''
ট্যাগ করা হাঙরের সংকেত গ্রহণ করতে সমুদ্রের তলদেশে দেড়শোরও বেশি রিসিভার বসানো হয়েছে৷ হাঙর সেগুলির মধ্যে কোনো একটির কাছ দিয়ে গেলেই রিসিভার সেটির আইডি নম্বর নথিভুক্ত করে৷ সিগন্যালের পরিধি এক কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত৷ সেই অ্যাকুস্টিক রিসিভারগুলি নিয়মিত ডাঙায় তুলে এনে সংগৃহিত তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়৷ হাঙর বিশেষজ্ঞ হিসেবে রায়ান ডালি বলেন, ‘‘এই রিসিভারে তথ্য পেতে আমাদের সহযোগীদের বড় নেটওয়ার্কের সঙ্গে কাজ করতে হয়৷ ফলে আমাদের সংগৃহিত সব তথ্য এক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে শেয়ার করা হয়৷ আমরা দেখতে পাই, হাঙর কোথায় গেছে, কোথায় সময় কাটিয়েছে৷ এভাবে আমরা এই প্রাণীর সংরক্ষণের জায়গাকে অগ্রাধিকার দিতে পারি৷''
যতকাল হাঙর সংরক্ষণ উদ্যোগের প্রতি জনসমর্থন থাকবে, এই কর্মসূচি ততদিন চালানো সম্ভব হবে৷ বয়স কম থাকতেই মানুষ সমুদ্রের এই শিকারি প্রাণীকে ভয় করে আসছে৷ হাঙরের প্রতি সার্বিক মনোভাবে পরিবর্তন এলে তবেই এই প্রাণীর সংরক্ষণ কাজ করবে৷ তার জন্য সচেতনতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন৷ শার্ক এডুকেশন সেন্টারের জাস্টিন সোয়ার্ৎস বলেন, ‘‘মানসিকতা বদলে আমি পৃথিবীও এক ধাপ বদলে দিচ্ছি বলে বিশ্বাস করি৷ ৪০ জন শিক্ষার্থীর এক গ্রুপ পেয়ে একটি মাত্র শিশুর মানসিকতা বদলাতে পারলে, অথবা তারা বাসায় গিয়ে পরিবারের সদস্যদের হাঙরের গুরুত্ব তুলে ধরলে আমরা ইতোমধ্যেই পরিবর্তন আনছি বলে মনে করি৷''
সংরক্ষণবাদীরা টোপের মধ্যেও পানির নীচের ক্যামেরা বসিয়ে আরো ছোট ও লাজুক হাঙর পর্যবেক্ষণ করছেন৷ উপকূল থেকে কিছুটা দূরে বাদামী অ্যালজির জঙ্গলে সেগুলি বিচরণ করে৷ টোপের লোভে সেই প্রাণী আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে৷ তখন গবেষকরা মহাসাগরের জীববৈচিত্র্য সম্পর্কে মূল্যবান চিত্র পেতে পারেন৷
টিমের তৈরি একটি প্রোগ্রামের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্য খতিয়ে দেখে বিজ্ঞানীরা ফলাফল বিশ্লেষণ করতে পারেন৷ কেপ আরএডিডি সংগঠনের ডায়লান ইরিয়ন বলেন, ‘‘আমরা একটি ওপেন সোর্স মেশিন লার্নিং সফ্টওয়্যার নিয়ে সেটিকে ফল্স বে এলাকার হাঙর ও অন্যান্য প্রজাতির মাছের কয়েকশো ছবি দেখিয়েছি৷ ভবিষ্যতে ভিডিও থেকে সেই সব প্রজাতি শনাক্ত করতে সেই সফ্টওয়্যার ব্যবহার করতে চাই৷''
তাঁদের গবেষণা ইতোমধ্যেই অত্যন্ত গঠনমূলক প্রমাণিত হয়েছে৷ হাঙর সংরক্ষণের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়েছে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মহাসাগর এলাকায় সংরক্ষিত অংশের অনুপাত পাঁচ শতাংশ বেড়ে গেছে৷ সামুদ্রিক ইকোসিস্টেমের সুরক্ষার লক্ষ্যে সংরক্ষণবাদীরা সেই অনুপাত আরো বাড়াতে চান৷
জেসন বসওয়েল/এসবি