1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
মানবাধিকারকম্বোডিয়া

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনলাইনে ফাঁদ পেতে মানবপাচার

২৬ এপ্রিল ২০২৩

মানবপাচারকারীরা এখন আর কোনো এলাকায় সাধারণত যান না৷ অনলাইনেই কার্যসিদ্ধি হয় তাদের৷ এশিয়ার বাইরের অনেক দেশ থেকেও বহু মানুষকে প্রথমে বন্ধু এবং সবশেষে দাস বা দাসী বানান তারা৷

https://p.dw.com/p/4Qak0
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবিছবি: Panthermedia/imago images

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে মানবপাচারকারীদের তৎপরতা দেখা গেলেও তাদের রুখতে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না৷ 

সম্প্রতি মিয়ানমারে শয়ে কোক্কো এলাকায় অভিযান চালায় সেনাবাহিনী৷ মিয়ানমারে মানবপাচারের এপিসেন্টার হিসেবে পরিচিত সেই এলাকায় অভিযানের সময় আদিবাসী বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ শুরু হলে কয়েক হাজার মানুষ ঘর-বাড়ি ছেড়ে থাইল্যান্ডে চলে যান৷ কয়েক হাজার এলাকাবাসী ঘরছাড়া হলেও মানবপাচার রোধে এ অভিযান দৃশ্যত বিশেষ কাজে আসেনি৷

বিশ্লেষকরা মনে করেন, সেনা সরকার এবং গণতন্ত্রকামীদের মধ্যে চলমান সংঘাতের কারণে মিয়ানমারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানবপাচার রোধে যথেষ্ট তৎপরতা দেখাতে পারছে না৷ এ কারণে মিয়ানমার এবং আশপাশের কয়েকটি দেশে মানবপাচার বাড়ছে৷

মানবপাচারের নতুন গন্তব্য কম্বোডিয়া

গত কয়েক বছরে মানবপাচারকারীদের অন্যতম প্রধান গন্তব্য হয়ে উঠেছে কম্বোডিয়া৷ পাচারকারীরা অনলাইন মাধ্যমকে প্রতারণার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করছেন ব্যাপক হারে৷ নানা ধরনের বিজ্ঞাপন বা ছলচাতুরির মাধ্যমে অনেকের টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রতারকরা৷ কেউ কেউ টাকা-পয়সা দিয়ে চাকরির আশায় ধরা দিচ্ছেন পাচারকারীদের কাছে৷ কোনোভাবে তাদের কম্বোডিয়া পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারলে আরো বড় অঙ্কের টাকা আয়ের সুযোগ হয়ে যাচ্ছে প্রতারকদের৷ তারা তখন প্রতারিত ব্যক্তিকে পণ্যের মতো বিক্রি করে দিচ্ছেন কারো কাছে৷ বিক্রি হয়ে যাওয়া সেই জীবনে নেমে আসছে দাসত্বের শৃঙ্খল৷ তখন শুরু হয় আরো টাকা আদায়ের চেষ্টা, টাকা দিতে না পারলে শুরু হয় শারীরিক, মানসিক নির্যাতন৷ নির্যাতনেও কাজ না হলে শেষ পর্যন্ত কোনো কোনো ‘দাস' বা ‘দাসী'কে হত্যা করতেও কুণ্ঠা বোধ করে না পাচারকারীরা৷

কয়েক সপ্তাহ আগে তাইওয়ানের আদালতে মানবপাচারকারীদের একটি দলের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দায়ের করা হয়৷ দলটির বিরুদ্ধে অভিযোগ- তারা তাইওয়ানের ৮৮ জন নাগরিককে কম্বোডিয়ায় পাচার করেছে৷

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানবাধিকার কর্মী এবং অ্যাক্টিভিস্টরা মনে করেন, ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা এই মানবপাচারকারী চক্রের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর অভিযান শুরু করা উচিত৷ কিন্তু বার্মা প্রোগ্রাম অব ইউনাইটেড স্টেটস ইন্সটিটিউট অব পিস (ইউএসআইপি)-র কান্ট্রি ডিরেক্টর কোনো দেশেই তেমন কোনো অভিযান না দেখায় হতাশ৷ তিনি মনে করেন, মানবপাচারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যে গতিতে কাজ করছে তা পাচারকারীদের কাজের গতির চেয়ে অনেক মন্থর৷

এক বাংলাদেশির ‘দাস' হওয়ার গল্প

বাংলাদেশের নাগরিক মোহাম্মদ আব্দুস সালামও মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিলেন৷ অনলাইনে চাকরির প্রলোভনে সাড়া দিয়ে কম্বোডিয়ায় কার্যত দাসের জীবন যাপন করতে হয়েছে তাকে৷ একসময় তাকে ব্যবহার করেই বিভিন্ন দেশ থেকে চাকরি দেয়ার নামে মানুষ ধরে আনার কাজ শুরু করে পাচারকারীরা৷ তখন সালামের কাজই ছিল অনলাইনে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মানুষে খুব ভালো চাকরি বা ক্রিপ্টো কারেন্সির ব্যবসায় ব্যাপক লাভের লোভ দেখিয়ে বিনিয়োগের জন্য টাকা আদায় করা বা টাকা আদায়ের পর তাদের কম্পোডিয়ায় নিয়ে আসা৷

পাঁচ মাস এভাবে অস্তিত্ব রক্ষার পর এক সুযোগে কম্বোডিয়ার ওই বন্দিশালা থেকে পালিয়ে আসেন আব্দুস সালাম৷

মানবপাচারকারীদের হাত থেকে বাঁচার কৌশল জানাতে গিয়ে সালাম ডয়চে ভেলেকে বলেন , ‘‘অনলাইনে কেউ যদি আপনার বন্ধু হওয়ার  বিষয়ে খুব আগ্রহ দেখায়, সে যদি নিজের বিলাসবহুল জীবনযাপনযাপন কায়দা করে দেখায় এবং কয়েকদিন পরে ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে প্রচুর টাকা আয় করছে জানিয়ে আপনাকেও ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করতে বলে-  তাহলেই বুঝতে হবে আপনার ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যাওয়ার সময় এসে গেছে৷ ঘুরুন এবং দ্রুত দৌড়ে পালান, কারণ, তখন বুঝতে হবে যে, (নারী বা পুরুষ যা-ই হোন না কেন) তিনি একজন প্রতারক৷''

এঞ্জো হিন্জ/ এসিবি