দিল্লির বইমেলায় আকর্ষণ বাংলাদেশের বই, দেশভাগের সাহিত্য এবং শীর্ষেন্দু-সুনীল

চিত্তরঞ্জন পার্ক হলো দিল্লিতে একটুকরো বাঙালি-প্রধান এলাকা। সেখানেই চিত্তরঞ্জন ভবনে বসেছে বইমেলার আসর। উদ্যোক্তা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন মেমোরিয়াল সোসাইটি এবং সপ্তর্ষি। সহযোগিতায় কলকাতার পাবলিশার্স ও বুকসেলার্স গিল্ড। বাংলা ও ইংরেজি বইয়ের অঢেল সম্ভার আছে সেখানে। বইমেলা চলবে আগামী রোববার পর্যন্ত।

বইমেলায় অন্যতম আকর্ষণ বাংলাদেশের বই। নয়া উদ্যোগের স্টলে পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশের বই।

বাংলা একাডেমির অভিধান থেকে আনিসুজ্জামান, হুমায়ুন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন-সহ অনেক লেখকের বই আকর্ষণের কেন্দ্রে। এমনকী কলকাতায় সচরাচর পাওয়া য়ায় না এমন বইও আছে এখানে।

বাংলা ও ইংরাজি বইয়ের স্টলে অবধারিতভাবে উপস্থিত আছেন রবীন্দ্রনাথ। তার লেখা বই যেমন আছে, তেমনই আছে, তাকে নিয়ে লেখা বইয়ের অঢেল সম্ভার। বোঝা যাচ্ছে, তার বই, তাকে নিয়ে বই এখনো বাঙালি এবং অবাঙালি পাঠকদের টানে।

কলকাতার বইয়ের প্রকাশকদের স্টলে গেলে চোখ টানবে শীর্ষেন্দু ও সুনীলের বইয়ের সম্ভার। কলকাতার প্রকাশকদের বইবিক্রির তালিকায় তারা এখনো শীর্ষে। সেই সঙ্গে আছেন, বুদ্ধদেব গুহ, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর বই। এখনো ভালো বিক্রি হয়, তিন বন্দ্যোপাধ্যায় তারাশঙ্কর, বিভূতিভূষণ এবং মানিকের বই।

বইমেলায় পাশাপাশি রয়েছে দুইটি স্টল, আনন্দ পাবলিশার্স ও নন্দী এন্টারপ্রাইজ। একটি বাংলা, অন্যটি ইংরেজি বইয়ের স্টল। দুইটি স্টলেই আছে সত্যজিৎ রায়ের বই এবং সত্যজিতের উপর লেখা বই। এখনো সত্যজিৎ বেস্টসেলার। তার ফেলুদার বইয়ের দেদার বিক্রি হচ্ছে। সঙ্গে আছে শরদিন্দুর ব্যোমকেশও। সত্যজিতের চিঠি নিয়ে দামি বইও বিক্রি হচ্ছে নন্দী এন্টারপ্রাইজ থেকে।

দেশভাগ নিয়ে প্রচুর বই আছে গাঙচিলের স্টলে। অধিকাংশ বই গবেষণাধর্মী। সেই সঙ্গে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের উপরও বই আছে এখানে। সেই বইয়ের বিক্রি ও চাহিদা দুইই তুঙ্গে।

বইমেলায় বাচ্চাদের বইয়ের সম্ভার নিয়ে এসেছে স্কলাসটিক্স এবং শিশু সাহিত্য সংসদ। বাচ্চাদের কাছে এখন কার্টুন, সেলফোন, ইন্টারনেটের আকর্ষণ অমোঘ। তারপরেও বাচ্চারা বাবা-মায়ের সঙ্গে আসছে। বইও কিনছে।

শুধু পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বই নয়, বইমেলায় আছে ত্রিপুরার বইও। ত্রিপুরা থেকে বইমেলায় যোগ দিয়েছে অক্ষর। তারা ত্রিপুরার একগুচ্ছ বই নিয়ে এসেছে। ত্রিপুরার ইতিহাস থেকে সেই রাজ্যের সাহিত্যিকদের বই রয়েছে এখানে।

মেলার মধ্যেই আছে চিকিৎসার ব্যবস্থা। শরীর হঠাৎ খারাপ হয়ে গেলে বা রক্তচাপ মেপে নিতে বা জরুরি প্রয়োজন মেটাতে আছে এই ব্যবস্থা।

বইয়ের আকর্ষণে মানুষ আসছেন, তারা বই কিনছেন, দিল্লিতে বাংলা বই ভালো বিক্রি হচ্ছে, প্রকাশক ও সংগঠকদের কাছে এটাই বড় কথা। দিল্লিতে প্রায় ২৫ লাখ বাঙালি থাকেন। তাদের কাছে ভালো বাংলা ও ইংরেজি বইয়ের সম্ভার তুলে দেয়াই বইমেলার লক্ষ্য বলে সংগঠকরা জানিয়েছেন।

বইমেলার উদ্বোধন করেছিলেন সাহিত্যিক অনিতা অগ্নিহোত্রী। তিনি তার বই নিয়ে আলোচনাও করেছেন। আরেক সাহিত্যিক জয়া মিত্র আলোচনা করেছেন ভীলদের মহাভারত ও ভারতীয় ঐতিহ্য নিয়ে। রাজীব ডোগরা আলোচনা করেছেন তার বই ওয়ার টাইম নিয়ে। বিভূতিভূষণের জগতের কথা জানিয়েছেন তার নাতি তৃণাঙ্কুর। প্রতিদিনই বইমেলায় আলোচনা। হয়েছে সেই সঙ্গে হয়েছে বইয়ের কেনাকাটা। বই দেখা। সবমিলিয়ে জমজমাট দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কের বই নিয়ে হৈচৈ।