1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
উদ্ভাবনচেক প্রজাতন্ত্র

দৃষ্টিকটু স্থাপত্য কি সরিয়ে ফেলা উচিত?

৩০ নভেম্বর ২০২৩

স্থাপত্যশৈলী পরিবর্তনশীল৷ অতীতের কিছু স্থাপনা এখনো আমাদের মুগ্ধ করে, কিছু ভবন আবার দৃষ্টিকটু মনে হয়৷ প্রাগ শহরের ব্রুটালিস্ট ভবনগুলি সম্পর্কেও এমন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে৷

https://p.dw.com/p/4ZdM8
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবিছবি: Reuters/M. Djurica

চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাগ যে ছবির মতো সুন্দর, সে বিষয়ে সংশয় থাকার কথা নয়৷ তবে প্রাগের কিছু অংশে গত শতাব্দীর ষাট ও সত্তরের দশকের কংক্রিটের তৈরি জ্যামিতিক আকারের সহজ-সরল স্খাপনা রয়েছে৷ সেই শৈলিকে ‘ব্রুটালিজম' বলা হয়৷

সবাই কিন্তু এমন ভবন পছন্দ করেন না৷ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে এমন ধরনের বেশ কয়েকটি স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে৷ ‘আর্কিটেকটুরা ৪৮৯' গোষ্ঠীর সদস্য ও শিল্পের ইতিহাসবিদ হিসেবে লুকাশ ভাইরকার মতে, সেটা ভুল পদক্ষেপ৷ অন্যান্য ইতিহাসবিদ ও স্থপতিদের সঙ্গে মিলে তিনি ব্রুটালিস্ট স্থাপত্য সংরক্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ লুকাশ বলেন, ‘‘এটা সময়ের দর্পণ৷ তাই শিল্প ইতিহাসবিদ হিসেবে আমার কাছে সেগুলি অক্ষত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ সেগুলির মাধ্যমে আমরা শহরের বয়স, মানুষ, স্থাপত্যের প্রবণতা তথা তত্ত্ব এবং ভাবনাচিন্তা বুঝতে পারি৷''

ব্রিটেনে উৎপত্তির পর ব্রুটালিজম গত শতাব্দীর ষাটের দশকে প্রাগে পা রাখে৷ সে সময়কার চেকোস্লোভাকিয়ার উপর সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব ছিলো৷ প্রাক্তন সংসদ ভবনের মতো স্থাপনা এখনো রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়৷ লুকাশ ভাইরকার মতে, ‘‘অনেকে বলবেন, খোদ কমিউনিজমের সঙ্গে এর যোগ রয়েছে৷ কিন্তু ভবনটি খুবই আধুনিক এবং সমসাময়িক পশ্চিমা স্থাপত্যের প্রতিফলন৷ ষাটের দশকের শেষে কারেল প্রাগার সেটি ডিজাইন করেছিলেন৷ তিনি পশ্চিমা বিশ্বের শিল্প ও স্থাপত্য সম্পর্কে বেশ ওয়াকিবহাল ছিলেন৷''

অর্থাৎ ব্রুটালিজম মোটেই সোভিয়েত উদ্ভাবন ছিল না৷ এই শৈলির উদ্যোক্তারা সাহসি আকার-আয়তন ও খোলামেলা উপাদান দিয়ে সৎ, সহজ-সরল ও কেজো স্থাপত্য গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন৷ গোটা বিশ্বেই ব্রুটালিস্ট ভবন ছড়িয়ে রয়েছে৷

কিন্তু প্রশ্ন হলো, লন্ডনের বার্বিক্যান এস্টেটের মতো ভবনকে কি সুন্দর বলা চলে? লুকাশ ভাইরকা বলেন, ‘‘আমি ঠিক সুন্দর বলবো না, কারণ সুন্দর শব্দটি ভালো নান্দনিক কোনো শ্রেণি বোঝায় না৷ আমি বরং ইন্টারেস্টিং, স্কাল্পচারাল বা আবেদনময় হিসেবে বর্ণনা করবো৷ কারণ ব্রুটালিস্ট ভবনগুলির চরিত্রই হলো বিশেষ আবেদন সৃষ্টি করে আশেপাশের পরিবেশের সঙ্গে কনট্রাস্ট সৃষ্টি করা৷''

শহরের আকর্ষণ আর বাড়ায় না যেসব স্থাপত্য

হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ভবনটি প্রাগ শহরের দুটি অবশিষ্ট ব্রুটালিস্ট স্থাপনার অন্যতম৷ খোলামেলা কংক্রিটের তৈরি জ্যামিতিক আকারের এই ভবনের সঙ্গে অন্য কোনো শৈলি খাপ খায় না৷ আপাতত সেটির সংস্কারের কাজ চলছে, যদিও সেই উদ্যোগকে ঘিরে বিতর্ক কম নয়৷

তবে প্রাগের সব ব্রুটালিস্ট ভবন এতটা অজনপ্রিয় বা লুপ্তপ্রায় নয়৷ এমনকি জাতীয় থিয়েটার সংরক্ষিত ভবনের তালিকায় রয়েছে৷ একই শৈলি সম্পর্কে এমন ভিন্ন মনোভাব কেন? লুকাশ ভাইরকার মতে, ‘‘মনে হয় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের লোকজনের নান্দনিকতা সম্পর্কে নিজস্ব মতামত রয়েছে৷ সেটাই হলো সমস্যা৷ তারাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সবকিছু দেখছে৷ সেটার সঙ্গে সবসময়ে ভবনের মূল্য খাপ খায় না৷''

এ ক্ষেত্রে ব্রুটালিজম এমনকি আরো জনপ্রিয় গথিক ও বারোক শৈলিকে ছাপিয়ে টিকে যেতে পেরেছে৷ প্রাগের এমাউস মনাস্ট্রি চতুর্দশ শতকে গড়ে উঠেছিল৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেই স্থাপনার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল৷

মনাস্ট্রির দুটি টাওয়ার আবার গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিষোগিতায় এক ব্রুটালিস্ট ডিজাইনের জয় হয়েছিল৷ যদিও অনেক মানুষ মূল টাওয়ার পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ দেখতে চেয়েছিলেন৷ লুকাশ ভাইরকা বলেন, ‘‘আমার মনে হয় এই ধরনের স্থাপত্য বিশেষ এক অনুভূতি জাগিয়ে তোলে৷ নির্মাণের সময়ে এমন সব ভবন খুবই ইন্টারেস্টিং ছিল৷ তারপর ৬০ বা ৭০ বছর পর আমরা এখনো হয় এর পক্ষে বা বিপক্ষে সংগ্রাম চালাচ্ছি৷''

তাহলে একটি প্রশ্ন থেকেই যায়৷ যে স্থাপত্য আর যুগোপযোগী নয়, তা নিয়ে আমাদের কী করা উচিত? সেগুলি ভেঙে ফেলা ভালো? নাকি অতীত যুগের দূত হিসেবে সেগুলি অক্ষত রাখাই শ্রেয়?

তাতিয়ানা শ্ভাইৎসার/এসবি