নতুন বছরের আনন্দ নেই, আছে শুধু আন্দোলনের পথ
কলকাতা-সহ পুরো দেশ যখন নতুন বছরের খুশিতে মাতবে, তখনো এই মানুষগুলি রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে যাবেন।
প্রতিবাদে, প্রতিরোধে
তারা কেউ ছয়শ দিন ধরে, কেউ ১৭০ দিন ধরে, কেউ ১৩৫ দিন ধরে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন। সরকার তাদের দাবি মানেনি। তা সত্ত্বেও আশায় বুক বেঁধে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে, চাকরি পাওয়ার আন্দোলন।
শহিদ মিনারের পাশে
“দাবি মোদের একটাই, যোগ্য লোকের চাকরি চাই” এমন নানান স্লোগানে মুখরিত ধর্মতলার শহিদ মিনারের পাশের এলাকা। আপার প্রাইমারি, গ্রুপ-ডি, মাদ্রাসার শিক্ষাকর্মী নিয়োগ, এরকম নানান ক্ষেত্রের চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরে অবস্থান করছেন। ২০২২-কে বিদায় ও ২০২৩-এর শুরুও তারা দেখবেন এই অবস্থানে বসে থেকেই।
কবে মানা হবে দাবি?
গান্ধীমূর্তির পাদদেশে সাড়ে ছয়শো দিনেরও বেশি সময় ধরে অবস্থান করে আসছেন এসএসটির চাকরিপ্রার্থীরা। অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের প্রতিবাদে তারা আন্দোলনের পথ দেখিয়েছিলেন। তাদের দাবি মানা হয়নি। তাদের আন্দোলনও চলছে। চলবে নতুন বছরেও।
লড়াই করে বাঁচা
সেই পথ অনুসরণ করে মাতঙ্গিনী হাজরার মূর্তির নিচে ১৯০দিন ধরে নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তারা আন্দোলন করে যাচ্ছেন। কলকাতা দীর্ঘদিন ধরে পরিচিত আন্দোলনের শহর বলে। কলকাতার সেই আন্দোলনের ঐতিহ্য এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তারা।
১৩৫ দিন ধরে
দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলনও ১৩৫ দিন অতিক্রান্ত। সাধারণ মানুষ যখন বর্ষশেষের উৎসবে মাতোয়ারা, সেইসময় চাকরির দাবিতে জীবনযাপনকে উৎসর্গ করেছেন এই চাকরিপ্রার্থীরা। প্রথম প্রথম মিডিয়া খবর করে। তারপর তারা থেকে যান খবরের বৃত্তের বাইরে। তখন শুধু দিন যোগ হয়। সামনের বছর কি এই সময়ে পাঁচশ দিন ধরে আন্দোলন করতে দেখা যাবে তাদের!
তবু আশা নিয়ে
মাতঙ্গিনী হাজরার মুর্তির নীচে ৩২ দিন ধরে অনশন চালিয়ে আসছেন সুন্দরবনের প্রেমাংশু হালদার। কিছুদিন হলো বাবার ব্লাডক্যান্সার ধরা পড়েছে। আপার প্রাইমারির প্রার্থী, আটবছর ধরে চাকরির আশায় থেকে থেকে দিন মজুরের কাজ শুরু করেছিলেন। এখন অনশন-প্রতিবাদ চলছে। যদি তার কথা পৌঁছয় কর্তাদের কানে।
নিয়োগপত্র চাই, না হলে আব্দোলন
বিকেল গড়াতে না গড়াতেই মশার উপদ্রবে বসা দুষ্কর হয়ে ওঠে। তবু হাল ছাড়েননি এই আন্দোলনকারীরা। এসএসসি আন্দোলনকারীদেরই একজন শহিদুল্লাহ জানালেন, নিয়োগপত্র হাতে পেলে সেটাই হবে আমাদের উৎসব। যতক্ষণ না হাতে পাচ্ছি, বড়দিন, নতুন বছর সবই আমাদের কাছে অর্থহীন।
আসা-যাওয়ার মাঝখানে
নদীয়ার হরিনঘাটা অঞ্চলে বাড়ি মেহেবুবা খাতুনের। চার বছরের কন্যা সন্তানকে নিয়ে প্রতিদিন সকাল এগারোটায় এই ধর্ণামঞ্চে এসে পৌঁছনোর জন্য বাড়ি থেকে সকাল সাতটায় রওনা দেন। বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত আটটা বাজে। এভাবেই চলছে। জানেন না আর কতদিন এভাবে থাকতে হবে। তার জীবনে কোনো উৎসব নেই। আছে শুধু যাওয়া-আসা এবং প্রতিবাদ জানানো।
আশার আলো নিভে গেলো
৩০ জানুয়ারি ২০১৪ সালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েও আপার প্রাইমারিতে একবার নিয়োগ বাতিল। এক নিয়োগে দু-দুবার ইন্টারভিউ সম্পন্ন করেও আজ নিয়োগ অধরা। অবস্থানকারীদের দাবি- তারা বঞ্চিত, ইন্টারভিউয়ের ডাক পাননি। দীর্ঘ আট বছরে শূন্যপদ বৃদ্ধি হয়নি। গেজেট মেনে ইন্টারভিউ ১৫ দিন আগে পর্যন্ত সমস্ত শূন্যপদ বৃদ্ধি করে তাদের ইন্টারভিউ ডাকতে হবে।
অন্য পথ নেই
গ্রুপ-ডির আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, ঘোষিত শূন্যপদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী অধীনে দপ্তর, তবুও তারা আজ নিয়োগের দাবিতে রাজপথে অবস্থানে। এছাড়া তাদের কাছে আর কোনো রাস্তা নেই।
নতুন বছরে
তাদের এই মরিয়া প্রয়াস কি নতুন বছরে সফল হবে? তাদের কি দাবিপূরণ হবে? রাজপথে আন্দোলনের জীবন থেকে তারা কি পৌঁছতে পারবেন চাকরির জীবনে? নতুন বছর তাদের জন্য কী খবর নিয়ে আসবে তা জানা নেই, তবে তারা একটা কথা জানেন, বছর ঘুরে যায়, তবু দিন বদলায় না। তবু, সফল হওয়ার আশাটুকু নিয়ে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন, যাবেনও।