নাবালিকা স্ত্রীর সঙ্গে যৌনসম্পর্ক ধর্ষণ বলে গণ্য হবে
১২ অক্টোবর ২০১৭ভারতের মতো দেশে আজও বহু জায়গায় সামাজিকভাবে বাল্যবিবাহের স্বীকৃতি দেওয়া হয়৷ ২০০১ সালের জনগণনার পর দেশে বাল্যবিবাহ কমেছে বলে সরকারিভাবে দাবি করা হলেও ২০১১-তে এসে দেখা যায় পরিস্থিতি ভয়ানক৷ স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও এদেশে প্রতি তিনজন বিবাহিত মহিলার মধ্যে একজন মহিলার বিয়ে হয়েছে নাবালিকা অবস্থায়৷ বিহার, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানসহ বেশ কিছু রাজ্যে বাল্যবিবাহের সংখ্যা গোটা দেশের মাথাব্যাথার কারণ৷ ভারতের ‘জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা'য় (এনএফএইচএস) দেখা গেছে, ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সি বিবাহিত মহিলাদের বিয়ে হয়েছিল ১৮ বছরের নীচে৷
এমন এক পরিস্থিতিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ঐতিহাসিক এক রায় ঘোষণা করেছে৷ নির্দেশে বলা হয়েছে, ১৫ নয়, স্ত্রীর বয়স ১৮-র নীচে হলেই যৌনমিলন ধর্ষণ৷ ধর্ষণ আইনে যে ব্যতিক্রমের কথা বলা হয়েছে তা ‘পক্ষপাতমূলক', ‘খামখেয়ালি' এবং ‘অবাধ যৌনাচারকে প্রশ্রয় দেয়'৷ তবে, প্রশ্ন উঠেছে, ‘নাবালিকা স্ত্রী' মানেই তো বাল্যবিবাহ! বাল্যবিবাহ রোধ করাই কি আসল চ্যালেঞ্জ নয়?
রায়ের পর প্রশ্ন উঠেছে, এর ফলে কি বাল্যবিবাহ কমবে? পশ্চিমবঙ্গে নারী আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী তথা রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রাক্তন সদস্য ভারতী মুৎসুদ্দি মনে করেন, আইন তো বহু আছে৷ কিন্তু বাল্যবিবাহ বন্ধ হয়নি৷ সমাজে এখনও অভিভাবকদের মধ্যে একটা প্রবণতা দেখা যায়, কীভাবে তাড়াতাড়ি মেয়েকে বাড়ি থেকে বিদায় করে দেওয়া যায়৷ বুঝতে হবে, মূল সমস্যাটি হল বাল্যবিবাহ৷ সেটা রুখতে সামাজিক আন্দোলনের প্রয়োজন৷ তাঁর কথায়, ‘‘নাবালিকা ‘স্ত্রী'র সঙ্গে সহবাস ধর্ষণ কি ধর্ষণ নয়, তা-ই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি আমরা৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে রিভিউ পিটিশন দাখিল করা উচিত৷ বলতে হবে, সমাজের জন্য আইন, আইনের জন্য সমাজ নয়৷ এরফলে মেয়েরাই অত্যাচারিত হবে বলে মনে হয়৷ কারণ, এদেশে স্ত্রীকে ধর্ষণের জন্য স্বামীর শাস্তি হলে তার পরিবার কখনই স্ত্রীকে আর ঘরে আশ্রয় দেবে না৷ তখন তাকে কে দেখবে?''
এদিকে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতে মুখ পুড়েছে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের৷ ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৭৫-এর ২ উপধারাকে সমর্থন করে কেন্দ্রীয় সরকার বলেছিল, ভারতে বাল্যবিবাহ কঠিন বাস্তব৷ এই ধরনের বিয়েকে সুরক্ষা দিতে হবে৷ ব্যতিক্রমী ২ উপধারায় বলা রয়েছে, ‘‘পুরুষ এবং স্ত্রীর মধ্যে যৌনসংসর্গে স্ত্রীর বয়স ১৫-র কম না হলে তা ধর্ষণ হবে না৷'' শীর্ষ আদালত বলেছে, ‘‘ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারার ব্যতিক্রমী ২ উপধারাকে কাজে লাগিয়ে স্বামীদের সুরক্ষা দেওয়া সংবিধান লঙ্ঘনের সমতুল্য এবং সেটা নাবালিকার মৌলিক অধিকার খর্ব করে৷''
৬ সেপ্টেম্বর আদালত কেন্দ্র সরকারের কাছে জানতে চেয়েছিল ১৮ বছরের নীচে যৌনতা নিয়ে পারষ্পরিক সম্মতিকে সমর্থন করে সংসদ কীভাবে ছাড় দেওয়ার পক্ষে যেতে পারে? আদালত স্পষ্ট করেই জানিয়েছিল, বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে তারা কিছু মন্তব্য করবে না৷ তবে ১৮-র নীচে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে ‘সবদিক বিচার' করা হবে৷ তখনই দণ্ডবিধির ব্যতিক্রম নিয়ে কেন্দ্রের মতামত জানতে চায় আদালত৷ কেন্দ্রের পক্ষে আইনজীবী যুক্তি দেন এই ছাড় তুলে নিলে বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে অভিযোগের দরজা খুলে যাবে, ভারতে যার অস্তিত্ব নেই৷
‘দ্য প্রোটেকশন ফ্রম সেক্সুয়াল অ্যাক্ট' অনুযায়ীও ১৮ বছরের নীচের মেয়েদের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক ধর্ষণ৷ আইন অনুযায়ী, কোনও পুরুষ ১৮ বছরের কম বয়সের কোনও মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাঁর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হলে তা অপরাধের আওতায় পড়ে৷ বাল্যবিবাহ এদেশে আইনবিরুদ্ধ৷ কিন্তু, তা সত্ত্বেও আইন এমন ছিল যে, যদি কোনও ব্যক্তি তার বিবাহিতা নাবালিকা স্ত্রীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে, তাহলে তা ধর্ষণ হিসেবে গ্রাহ্য হত না৷
বাল্যবিবাহ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মদন বি লকুর এবং বিচারপতি দীপক গুপ্তের বেঞ্চ৷ তাঁরা জানিয়েছেন, ‘‘যে উদ্দেশ্যে সামাজিক ন্যায় সংক্রান্ত আইন আনা হয়েছে তা যথোপযুক্তভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না৷''