নারীদের হাতে অর্থ দিয়ে দিল্লি জিততে চায় আপ
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪দিল্লির বর্তমান বিধানসভার মেয়াদ শেষ হবে ২৩ ফেব্রুয়ারি। তার আগে বিধানসভা ভোট এবং নতুন বিধানসভার গঠন হয়ে যাবে।
দিল্লিতে ২০১৩ সাল থেকে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আপ ক্ষমতায় আছে। তবে ২০১৫ ও ২০২০ সালে আপ দিল্লিতে বিজেপি ও কংগ্রেসকে কচুকাটা করে জিতেছে। ৭০ সদস্যের বিধানসভায় ২০১৫ সালে আপ পেয়েছিল ৬৭টি এবং ২০২০ সালে তারা পায় ৬২টি আসন।
কিন্তু গত লোকসভায় কংগ্রেসের সঙ্গে আঁতাত সত্ত্বেও আপ একটিও কেন্দ্রে জিততে পারেনি। দিল্লির সাতটি কেন্দ্রেই বিজেপি জেতে। কেজরিওয়াল জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেলেও মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হন আতিশি। লোকসভা নির্বাচনের পর মাস সাত-আট পরেই দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন হবে। বিজেপি-র আশা, লোকসভার মতো বিধানসভাতেও তারা জিতবে। দিল্লির বিজেপি সভাপতি বীরেন্দ্র সচদেব, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজয় গোয়েলরা বারবার তাদের এই আশার কথা শুনিয়েছেন।
এই অবস্থায় আবার দিল্লিতে ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্য অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মূল অস্ত্র দুইটি জনমোহিনী পরিকল্পনা, মুখ্যমন্ত্রী মহিলা সম্মান যোজনা এবং সঞ্জীবনী যোজনা।
কেজরিওয়ালের ঘোষণা
সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এর আগে দিল্লির জন্য প্রচুর জনমোহিনী পরিকল্পনা নিয়ে এসেছেন। তার প্রথম জনমোহিনী পরিকল্পনা ছিল, 'পানি মাফ, বিজলি হাফ'। অর্থাৎ, দিল্লিতে পানীয় জলের জন্য কোনো মাসুল দিতে হবে না। বিদ্যুতের খরচ দুইশ ইউনিট হলে তার জন্যও কোনো পয়সা দিতে হবে না। ক্ষমতায় এসে এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন কেজরিওয়াল। এরপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন, দিল্লির সরকারি বাসে চড়লে মেয়েদের কোনো পয়সা দিতে হবে না। প্রতিটি মহল্লায় একটি করে মহল্লা ক্লিনিক করেছেন তিনি, যেখানে মানুষ বিনা পয়সায় চিকিৎসা পেতে পারেন এবং কিছু ওষুধও সেখানে পাওয়া যায়। সরকারি স্কুলের হালও ফেরাবার চেষ্টা করেন তিনি।
এবার সেই জনমোহিনী পরিকল্পনায় আরো দুইটি পরিকল্পনা যুক্ত হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মহিলা সম্মান যোজনা এবং সঞ্জীবনী যোজনা। প্রথমটিতে বলা হচ্ছে, আপ যদি জিতে আসে, তাহলে দিল্লির ১৮ থেকে ৬০ বছরের মেয়েরা প্রতি মাসে দুই হাজার একশ টাকা করে পাবেন। তবে যারা আয়কর দেন, তারা এই অর্থ পাবেন না।
এরপরই একটা চাল চেলেছেন কেজরিওয়াল এবং মুখ্যমন্ত্রী আতিশি। সেটা হলো, এই প্রকল্পের জন্য তারা রেজিস্টেরশনের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আপের কর্মীরা ক্যাম্প খুলেছেন, সেখানে এই নথিভুক্তকরণের কাজ করছেন আপ কর্মীরা। অথবা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মেয়েদের নাম নথিভুক্ত করছেন তারা। আপের তরফ থেকে বড়দিনে বিজ্ঞাপনও দেয়া হয়েছে, সেখানে সান্তা ক্লজরুপী কেজরিওয়ালকে দেখা যাচ্ছে, যিনি দিল্লির মেয়েদের এই অর্থ দেয়ার পরিকল্পনা করেছেন এবং সকলের জন্য সঞ্জীবনী প্রকল্প নিয়ে আসছেন।
সঞ্জীবনী হলো স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প, যেখানে দিল্লির সব বাসিন্দার জন্য পাঁচ লাখ টাকা স্বাস্থ্যবিমা করাবে রাজ্য সরকার।
আপ নেতা অনুপ ঠাকুর ডিব্লিউকে জানিয়েছেন, ''চিত্তরঞ্জন পার্ক, অলকনন্দাতে তাদের শিবিরে প্রতিদিন একশর মতো নারী নাম নথিভুক্ত করছেন। সারা দিল্লি মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার নারী নাম নথিভুক্ত করাচ্ছেন। এই দুই প্রকল্প আবার বিধানসভা নির্বাচনে আপকে বিপুল জয় এনে দিতে পারে।''
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তাও বলেছেন, ''জনমোহিনী প্রকল্প যে জয়ের পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়, তা একের পর এক নির্বাচন থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গে লক্ষ্মীর ভান্ডার, মধ্যপ্রদেশে লাডলি বহনা, মহারাষ্ট্রে লড়কি বহিন যোজনা, কর্ণাটক ও তামিলানড়ুতেও জনমোহিনী যোজনার সুবিধা ভোটের ময়দানে পেয়েছে ক্ষমতাসীন দলগুলি। তাই কংগ্রেস, বিজেপি, আপ, তৃণমূল সকলেই জনমোহিনী যোজনাকে হাতিয়ার করে ভোটের ময়দানে নামে।''
দিল্লির স্বাস্থ্য দপ্তরের ঘোষণা
দিল্লির স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ দপ্তরের তরফ থেকে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানানো হয়েছে, সঞ্জবীবনী প্রকল্প বলে কোনো প্রকল্প দিল্লিতে চালু নেই। তাই এই প্রকল্পের নথিভুক্তির জন্য কেউ ফর্ম দিতে বা নিতে পারে না। তাই যে যোজনা চালু নেই, তার জন্য নিজের ব্যক্তিগত তথ্য যেন কেউ যেন না দেন।
নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তরও ঘোষণা করেছে, নারী সম্মান যোজনা বলে কোনো যোজনার অস্তিত্ব নেই। যদি এরকম কোনো প্রকল্প চালু করা হয়, তখন দপ্তর থেকে তাদের ওয়েবসাইটে আবেদনপত্র চাওয়া হবে।
কেজরিওয়ালের অভিযোগ
এরপরই কেজরিওয়াল অভিযোগ করে বলেন, ''মহিলা সম্মান যোজনা এবং সঞ্জীবনী যোজনার ঘোষণায় বিজেপি ঘাবড়ে গেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তারা ভুয়া অভিযোগে আতিশিকে গ্রেপ্তার করতে চলেছে। আপ নেতাদের বাড়িতেও তারা তল্লাশি চালাবার পরিকল্পনা নিয়েছে।''
আপ সূত্রে বলা হয়েছে, ইতিমধ্যে দেড় লাখ নারী ওই যোজনার জন্য নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছেন।
রাজ্য বিজেপি প্রধান বীরেন্দ্র সচদেব অভিযোগ করেছেন, আপ এই ঘোষণার মাধ্যমে দিল্লির নারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
আপ-কংগ্রেস কাজিয়া
বুধবার দিল্লির কংগ্রেস সভাপতি অজয় মাকেন বলেন, ২০১৩ সালে অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল।
তিনি সরাসরি কেজরিওয়ালকে আক্রমণ করে বলেন, কেজরিওয়াল আসলে 'ফর্জিওয়াল'। তিনি ইউনিফর্ম সিভিল কোড, ৩৭০ ধারা বিলোপ, নাগরিকত্ব আইনে বিজেপি-কে সমর্থন করেছেন। তিনি জাতীয়তা বিরোধী।
মাকেনের অভিয়োগ, দিল্লির মানুষ যখন কোভিডে কষ্ট পাচ্ছেন, তখন কেজরিওয়াল মুখ্যমন্ত্রীর আবাস নতুন করে সংস্কার করছেন এবং বিজেপি সেন্ট্রাল ভিস্তার কাজ করছে।
এরপরই বৃহস্পতিবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আতিশি, আপ সাংসদ সঞ্জয় সিং জানান, অজয় মাকেনের বিরুদ্ধে কংগ্রেসকে ব্যবস্থা নিতে হবে, না হলে, ইন্ডিয়া জোট থেকেই কংগ্রেসকে বের করে দেওয়া হবে। কংগ্রেস দিল্লিতে বিজেপি-র ভাষায় কথা বলছে। তারা বিজেপি-র হয়ে বিবৃতি দিচ্ছে, তারা আপের ক্ষতি করতে চাইছে। কেজরিওয়ালকে জাতীয়তা বিরোধী বলে মাকেন সব সীমা ছাড়িয়ে গেছেন। কেজরিওয়াল কংগ্রেস প্রার্থীদের জন্য লোকসভায় দিল্লি ও চণ্ডীগড়ে প্রচার করেছেন, আপ সংসদে অনেক বিষয়েই কংগ্রেসের সঙ্গে থেকেছে, তারপর আপ নেতাকে কংগ্রেস জাতীয়তা বিরোধী বলছে, এটা মেনে নেয়া যায় না।
দিল্লিতে আপ ও কংগ্রেসের ঝগড়া তাই নতুন মাত্রা পেয়েছে।
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)