পরিবেশ সাংবাদিকতা কর্মশালা - খুলনা বিভাগ থেকে আবেদনের আহ্বান
১৩ জুলাই ২০২৩কর্মশালাটি "ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ইকো-ফ্রন্টলাইন্স: দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আঞ্চলিক পরিবেশ সাংবাদিকতা শক্তিশালীকরণ" প্রকল্পের অংশ, যা জার্মানির ফেডারেল ফরেন অফিসের ( Auswärtiges Amt) অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে। প্রকল্পটির লক্ষ্য পরিবেশ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বাংলাদেশ, ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তানে উচ্চমানের ভিডিও প্রতিবেদন তৈরিতে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সহায়তা করা।
পটভূমি
পরিবেশগতভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মধ্যে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো অন্যতম। এই অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি এবং জনসংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক সম্পদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা অঞ্চলটিকে গুরুতর পরিবেশগত সমস্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন উজাড়, বায়ু এবং পানি দূষণ, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, এবং অপর্যাপ্ত বর্জ্য নিষ্কাষণ লাখ লাখ মানুষের জীবিকাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সমাজের দুর্বলতম সদস্যরা: নারী, যুবক, আদিবাসী, জাতিগত সংখ্যালঘু, প্রান্তিক গোষ্ঠীর সদস্য এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা। পরিবেশগত সংকটের প্রতি তাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে এইসব সমস্যার কারণ এবং প্রভাব সম্পর্কে উচ্চমানের তথ্য প্রয়োজন। বাস্তবসম্মত, দক্ষভাবে তৈরি পরিবেশগত প্রতিবেদন এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে পারে। উপরন্তু, পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যায় যারা তাৎক্ষণিকভাবে আক্রান্ত হন, সরাসরি তাদের কথা বলার সুযোগ তৈরি করে দিতে পারলে সমাধান খুঁজে পাওয়ার ক্ষেত্রে তা সহায়ক হতে পারে। তাই, ডিডাব্লিউ একাডেমি স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য এই সাংবাদিকতা কর্মশালার আয়োজন করছে। এর লক্ষ্য স্থানীয় সাংবাদিকদের মানসম্পন্ন, তথ্য এবং সমাধান-ভিত্তিক পরিবেশগত প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করা।
ফিল্ড ট্রিপসহ সাংবাদিকতা কর্মশালা
ডিডব্লিউ একাডেমি বাংলাদেশের খুলনায় বাংলায় একটি ‘হাইব্রিড’ পরিবেশ সাংবাদিকতা কর্মশালা আয়োজন করবে, যেখানে তিন অর্ধ-দিবসের অনলাইন প্রশিক্ষণ এবং ৪ দিনের সশরীরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। এতে বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ জন সংবাদকর্মী অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
কর্মশালাটি অংশগ্রহণকারীদের পরিবেশগত ইস্যুতে ভিডিও প্রতিবেদন তৈরির সক্ষমতা বাড়াবে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা সফলভাবে উভয় প্রশিক্ষণ (অনলাইন এবং অফলাইন) সম্পন্ন করবেন, তাদের সনদপত্র প্রদান করা হবে।
অনলাইন কর্মশালার অর্ধদিবস সেশনগুলো ০২-০৪ আগস্ট, ২০২৩ তারিখে অনুষ্ঠিত হবে। সশরীরে কর্মশালাটি ৩০ আগস্ট - ০২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খুলনায় দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিনের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণটি পরিচালিত হবে।
কর্মশালার অংশ হিসেবে হাতে-কলমে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য পরিবেশগত সমস্যায় জর্জরিত একটি এলাকাকে এক দিনের ফিল্ড ট্রিপ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷ সশরীরে কর্মশালার সময় পরিবহণ, খাবার এবং আবাসন খরচ ডিডব্লিউ একাডেমি বহন করবে। অনলাইন এবং অফলাইন প্রশিক্ষণের মধ্যবর্তী সময়ে, অংশগ্রহণকারীরা ছোট পরিসরে সাংবাদিকতা বিষয়ক হোমওয়ার্ক অ্যাসাইনমেন্ট পাবেন। অংশগ্রহণকারীরা পরিবেশ বিষয়ক একটি অনুসন্ধানমূলক প্রামাণ্যচিত্র তৈরিতে সহায়তা এবং গবেষণার সুযোগ পাবেন। এর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা ডয়চে ভেলের অভিজ্ঞ সাংবাদিকদের সঙ্গে সরাসরি কাজ করার সুযোগ পাবেন।
প্রশিক্ষণের বিষয়বস্তু
১. গবেষণা এবং উত্স (সোর্স): অংশগ্রহণকারীরা নির্ভরযোগ্য উত্স, তথ্য-উপাত্ত এবং অন্যান্য পরিবেশ-সম্পর্কিত তথ্য খোঁজার নতুন পদ্ধতি শিখবেন। পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে প্রতিবেদন করার সময় তারা পরিবেশগত সাংবাদিকতা এবং অ্যাক্টিভিজমের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
২. গল্প বলা: প্রশিক্ষণটিতে গল্প বলার নানা উপায়ের ওপর আলোকপাত করা হবে৷ এর মাধ্যমে কিভাবে একটি প্রতিবেদন দর্শকদের কাছে আরো ভালোভাবে পৌঁছাতে পারে এবং তাদের জীবনের সঙ্গে পরিবেশগত বিষয়গুলোকে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে পারে, সেটি তুলে ধরা হবে৷ পাশাপাশি, স্থানীয় সমস্যার সঙ্গে বিশ্বব্যাপী চিত্রের কেমন মিল রয়েছে এবং সাংবাদিকরা কীভাবে তাদের গল্প স্থানীয় এবং জাতীয় দর্শকদের সাথে প্রাসঙ্গিক করে তুলতে পারে, কর্মশালাটিতে সেগুলোও আলোচনা করা হবে।
৩. গঠনমূলক সাংবাদিকতা: জলবায়ু পরিবর্তনের সংবাদ সহজেই অসহায়ত্ব এবং হতাশার অনুভূতি জাগাতে পারে। তাই কর্মশালায় গঠনমূলক সাংবাদিকতার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হবে। এই সাংবাদিকতা পদ্ধতি শুধুমাত্র সমস্যা এবং নেতিবাচকতার উপর আলোকপাত না করে, একইসাথে সমাধান এবং এগিয়ে যাওয়ার উপায়ও তুলে ধরে। পরিবেশগত ইস্যুতে এই ধরনের প্রতিক্রিয়া উপস্থাপন করা শ্রোতাদের হতাশাগ্রস্ত করার পরিবর্তে অনুপ্রাণিত করতে পারে।
৪. নিরাপত্তা ও সুরক্ষা: পরিবেশগত সমস্যার ওপর প্রতিবেদন করা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। অতএব, কোর্সের একটি অংশে আলোচনা করা হবে কিভাবে অংশগ্রহণকারীরা নিরাপদ থাকতে পারেন এবং শারীরিক ও ডিজিটাল উভয় হুমকি থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারেন।
ভিডিও তৈরির অনুদান ও পরামর্শ
প্রশিক্ষণের সময় অংশগ্রহণকারীদের একটি পরিবেশগত গল্পের ‘পিচ’ তৈরি করতে বলা হবে। গল্পের পিচ এই আবেদনের সাথে জমা দেওয়া পিচকে আরও বিস্তৃত করতে পারে, অথবা অন্য একটি নতুন বিষয়ে হতে পারে। প্রশিক্ষণ শেষে ডিডব্লিউ একাডেমি পেশাদার, স্বচ্ছ মানদণ্ডের ভিত্তিতে তিনটি সেরা ভিডিও-পিচ নির্বাচন করবে। প্রতিটি দেশের তিনটি সেরা পিচের লেখকরা প্রতিবেদন তৈরির সাথে যুক্ত কর্মীদের ভাতা, গবেষণা, আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচ এবং ভ্রমণের খরচ বহন করার জন্য প্রোডাকশন অনুদান পাবেন। যিনি প্রথম স্থান অধিকার করবেন তিনি পাবেন ৬৬০ ইউরো, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্থান অর্জনকারী পাবেন ৫০০ ইউরো করে। অংশগ্রহণকারীদের প্রোডাকশন শেষ করতে প্রায় এক মাস সময় দেওয়া হবে। প্রোডাকশন পর্যায়ে অভিজ্ঞ ডিডব্লিউ সাংবাদিকরা তাদের বাংলা বা ইংরেজিতে পরামর্শ দেবেন।
এই প্রকল্পের অংশ হিসাবে তৈরি করা ভিডিওগুলোর কোনোটি যদি ডয়চে ভেলের সাংবাদিকতার মানদণ্ড পূরণ করে তবে ডিডব্লিউ তাদের ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলের মাধ্যমে তা সম্প্রচার করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷
ডিজিটাল পরিবেশ সম্মেলন
কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেককে প্রশিক্ষণ শেষে একটি অনলাইন পরিবেশ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হবে। এই অনলাইন সম্মেলন দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বর্তমান পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে আলোচনা করতে মিডিয়া প্রতিনিধি, বিশেষজ্ঞ এবং কর্মীদের একত্রিত করবে। সম্মেলনটি চলতি বছরের নভেম্বর বা ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে।
কীভাবে আবেদন করবেন
আগ্রহীরা এই গুগল ফর্মটি পূরণ করে আবেদন করতে পারেনঃ https://forms.gle/5PyrohPyk9xZ8pQN8
এছাড়া, আবেদনকারীদের প্রত্যেককে একটি করে পরিবেশ বিষয়ক প্রতিবেদনের পিচ তৈরি করতে হবে। আমরা বাংলাদেশের জলবায়ু সমস্যার ওপর আলোকপাত করে এমন প্রতিবেদন প্রত্যাশা করছি। স্থানীয় কমিউনিটির জনগণ পরিবেশ সংক্রান্ত এই পরিবর্তনগুলোকে কীভাবে মোকাবেলা করে- এমন আইডিয়াগুলোকে আমরা স্বাগত জানাই। জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা কীভাবে নারী এবং অন্যান্য পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করে তা তুলে ধরে এমন গল্পকে আমরা উত্সাহিত করি (এর মধ্যে রয়েছে যুব, আদিবাসী, জাতিগত সংখ্যালঘু, প্রান্তিক গোষ্ঠীর সদস্য এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা)। আমরা এমন গল্প প্রত্যাশা করি যা পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের সম্ভাব্য সমাধানের উপর আলোকপাত করে৷
আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে ডিডব্লিউ একাডেমি ১০ জন যোগ্য এবং উপযুক্ত ব্যক্তিকে সাংবাদিকতা কর্মশালায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাবে।
আবেদনের শর্তাবলি
- আমরা শুধুমাত্র খুলনা বিভাগ থেকে আবেদন গ্রহণ করবো, এবং শুধুমাত্র ব্যাক্তিগত আবেদন গ্রহণ করা হবে, কোনো দলগত আবেদন নয়।
- আবেদনটি সকল বাংলাদেশি সাংবাদিকদের জন্য উন্মুক্ত যাদের বয়স ২৫-৪৫ বছর, ৫-১০ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে, যারা স্থানীয় মিডিয়ায় প্রতিবেদন প্রকাশ করেন, এবং যাদের ভিডিও রিপোর্টিং ও পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
- আমরা নারী, আদিবাসী, প্রান্তিক গোষ্ঠীর প্রতিনিধি এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আবেদন করতে উৎসাহিত করি।
- বাংলায় লিখিত এবং মৌখিক সাবলীলতা প্রয়োজন।
- অনলাইন প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সশরীরে কর্মশালায় এবং ডিজিটাল পরিবেশগত সাংবাদিকতা সম্মেলনে সক্রিয়ভাবে পূর্ণ-সময় অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হতে হবে ।
- স্থিতিশীল ইন্টারনেট সংযোগসহ একটি ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটারের ব্যবহার অনলাইন প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত। স্মার্টফোনের মাধ্যমে অনলাইন প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া সম্ভব হবে না।
- যেসব মিডিয়া সংস্থা প্রশিক্ষণ এবং সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য কর্মীদের পাঠাতে চায়, তাদের অবশ্যই প্রশিক্ষণের দিনগুলোর জন্য ছুটি মঞ্জুর করতে হবে।
আবেদন প্রক্রিয়া
- আবেদনপত্রটি পূরণ করুন এবং বাংলা বা ইংরেজিতে আপনার গল্পের পিচ সংযুক্ত করুন। আবেদন ফর্মের লিঙ্ক: https://forms.gle/5PyrohPyk9xZ8pQN8
- আবেদনপত্রে আপনি ইতিমধ্যেই তৈরি করেছেন এমন একটি ভিডিও এবং/অথবা পরিবেশ বিষয়ক প্রতিবেদনের লিঙ্ক সংযুক্ত করুন। জমা দেওয়া ভিডিওর উদাহরণটি বুঝতে সহায়ক হবে যে আপনার ভিডিও রিপোর্টিং এবং পরিবেশগত প্রতিবেদন করার দক্ষতা রয়েছে। ভিডিওটি বাংলা বা ইংরেজিতে হতে হবে।
- একটি নিশ্চিতকরণ ই-মেইলের জন্য অপেক্ষা করুন। আপনি যদি প্রশিক্ষণ কর্মশালার জন্য একজন অংশগ্রহণকারী হিসাবে সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত হন, আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনাকে অবহিত করব।
- সময়সীমার পরে জমা দেওয়া আবেদন বিবেচনা করা হবে না।
আবেদন পাঠানোর শেষ তারিখ
- আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ বাংলাদেশ সময় বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০২৩, মধ্যরাত।
- বুধবার, ২৬ জুলাই, ২০২৩ এর মধ্যে দশজন নির্বাচিত সাংবাদিককে কর্মশালায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার বিষয়ে অবহিত করা হবে।
- আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে, আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন [email protected] ইমেইলে।
আবেদনকারীদের জন্য শুভ কামনা।