পরিবেশবান্ধব খাদ্যের টুকিটাকি
পৃথিবীকে মানুষের বাসযোগ্য রাখতে পরিবেশে সচেতনতার বিষয়টি এখন মুখে মুখে৷ প্রতিটি জনপদ থেকেই উচ্চারিত হচ্ছে এই ধ্বনি৷ খাদ্য উৎপাদন কিংবা গ্রহণের মধ্য দিয়েও পরিবেশের সুরক্ষা সম্ভব৷ পরিবেশবান্ধব খাদ্য নিয়ে এই ছবিঘর৷
প্রাকৃতিক খাদ্য
মাংস দূষণ কেলেঙ্কারি কিংবা কৃষিতে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব-এসব মাথা নিয়ে মানুষ এখন দিনকে দিন নিরামিষভোজী হয়ে উঠছেন৷ তবে প্রকৃতির সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেও আহারের আরো কিছু উপায় আছে৷ আলপাইনের মতো তৃণভূমি হয়তো সবখানে নেই! কিন্তু অবারিত প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ে উঠা প্রাণীজ মাংসের পণ্য এখন হাতের কাছেই মিলছে৷
নিরামিষভোজী
উনিশ শতকের ৭০ কিংবা ৮০-র দশকের কথা যদি ধরি, তখনকার নিরামিষভোজীরা যেকোনো প্রাণিজ্য খাদ্য থেকে দূরে থাকতেন৷ এমনকি দুধ, ডিমের মতো সাধারণ খাবারও তাঁরা খেতেন না৷ সময়ের সঙ্গে বদলে যায় সবকিছু৷ জোনাথন সাফরান ফুয়েরের ‘ইটিং অ্যানিমেল’ বইটিতো মাংস নিয়ে মানুষের ভাবনাকে নাড়িয়ে দিয়েছে৷ গোটা বিশ্বে বেড়েই চলেছে নিরামিষ রেস্তোরাঁ৷
কার্বন ও পানির প্রভাব
নিরামিষ ভোজনের ভালো দিক হলো কার্বন নির্গমণটা কমিয়ে দেয়, তেমনি সাশ্রয় করে পানি৷ জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসেব তো চমকে দেয়ার মতো৷ সংস্থাটি বলছে, মানুষের কারণে সৃষ্ট গ্রিনহাউজ গ্যাসের এক পঞ্চমাংস আসে মাংস থেকে৷ যা জলবায়ু পরিবর্তনে রাখছে নেতিবাচক ভূমিকা৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাত্র এক কেজি গরুর মাংস উৎপাদনে ১৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার লিটার পানির প্রয়োজন হয়৷
জেনে শুনে বুঝে নিন
ক্রেতাকে কাছে টানতে জীবন্ত পশু দেখিয়ে বিক্রি করে পোস্টডামের একটি খামার৷ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পশু জবাইয়ের আগে ক্রেতার সঙ্গে আলোচনা করে নেয় তাঁরা৷ যদিও তাঁদের কার্যক্রমটি আশপাশের এলাকাতে সীমাবদ্ধ৷ ‘মাইনে ক্লাইনে ফার্ম’ বা ‘আমার ছোটো খামার’ ধরণের প্রকল্পগুলোও যানবাহন নির্ভরতা সংকুচিত করে গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমণকে কমিয়ে আনে৷
কৃষি হাট
স্থানীয় পণ্য স্থানীয়রা কিনে নিলে দীর্ঘ পথে পণ্য পরিবহনের ঝুট ঝামেলা মিটে যায়৷ ফলে কার্বন ফুটপ্রিন্টও কমে যায়৷ ক্যানাডিয়ান দম্পতি অ্যালিসা স্মিথ এবং জে বি ম্যাককিনন তাঁদের ‘হান্ড্রেড মাইল ডায়েট: আ ইয়ার অব লোকাল ইটিং’ বইতে এ বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেছেন৷ তাঁদের বাড়ি থেকে শত মাইলের মধ্যে খাবার যোগাড় করে বছর জুড়ে খেয়েছেন এই দম্পতি৷ নিজেরা খাবার সংরক্ষণ করে পূরণ করেছেন শীতকালের কঠিন সময়৷
একফসলি চাষ ঝুঁকিপূর্ণ
আধুনিক কৃষি শিল্পে ভূট্টা কিংবা সয়ার মতো একফসলি চাষ লক্ষ্যণীয়৷ এর ফলে শস্যদানা সংক্রমতি হয় নানা রোগবালাইয়ে আর আক্রমণ করে কীটপতঙ্গ৷ ফলে প্রচুর কীটনাশক দিতে হয় চাষীকে৷ একমুখী চাষের বদলে বৈচিত্র্য আনা হলে ভালো ফলন যেমন হয়, তেমনি কীটপতঙ্গের সংক্রমণও কমে যায়৷ খরার দিনেও ফলন নিয়ে টেনশনে থাকতে হয়না কৃষককে৷
বার্লিনের প্রিন্সেস গার্ডেন
বড় শহরে থেকেও নিজের চাহিদা কিংবা তারও বেশি পরিমাণ শস্য উৎপাদন খুব একটা কঠিন কাজ নয়৷ জার্মানির রাজধানী বার্লিনের মতো শহরে ‘প্রিন্সেস গার্ডেন‘ সেই দৃষ্টান্ত রেখে চলেছে৷ শস্য উৎপাদন করে নিজেদের চাহিদা তো মিটছে, সঙ্গে দুপুরের খাবারও বিক্রি করছে তাঁরা৷ বাণিজ্যিক ব্যবহার বাড়াতে খোলা হয়েছে একটি ক্যাফে৷ এই বাগানটি যেমন তাজা খাবারের চাহিদা পূরণ করছে তেমনি পরিবেশ সম্পর্কেও বাড়াচ্ছে সচেতনতা৷
খাদ্যবর্জ্য কমান, সম্পদ বাঁচান
পরিসংখ্যান বলছে, বছরে ২০ মিলিয়ন টন খাবার নষ্ট করে জার্মানি৷ তাই ভাগাভাগি করে খাওয়াকে পরিবেশবান্ধব প্রবণতা হিসেবে দেখা হচ্ছে৷ রেস্তোরাঁ আর মুদি দোকানিরাও অনেক খাবার দান করছে৷ জার্মানিতেই আছে foodsharing.de নামের একটি ওয়েব পোর্টাল৷ কারো কাছে অতিরিক্ত খাবার থাকলে এই পোর্টালের মাধ্যে বিনিময় করার সুযোগ থাকছে৷ ফলে খাবার নষ্ট হওয়ার পরিমাণ কিছুটা হলেও কমে আসছে৷
সুস্থ থাকার সুবিধা
খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুস্বাস্থ্যের জন্য নিরামিষভোজী হওয়াটা ভালো সিদ্ধান্ত৷ অনেকগুলো গবেষণা বলছে, প্রতিদিনের খাবার তালিকা থেকে মাংসের পরিমাণ কমিয়ে আনা হলে ক্যান্সার, হৃদরোগ, মুটিয়ে যাওয়া এবং ডায়াবেটিসের মতো রোগ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যাবে৷